সমর সেনের কবিতা : নাগরিক জীবনের
আখ্যান
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সমকালের অন্যতম উল্লেখযোগ্য
কবি সমর সেন (১৯১৬-১৯৮৭)। মহাযুদ্ধকালীন পরিবেশে বিট্রিশ রাজশক্তির পদতলে দলিত হয়
ভারতীয় আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি। সমালোচকদের মতে, ‘দীর্ঘ দিনের সহজ শান্ত
জীবন-স্রোত হঠাৎ প্রবল ঘূর্ণাবর্তের রূপ গ্রহণ করে, সেই আবর্তে মানুষের প্রচলিত
অনেক মূল্যবোধ তৃণখন্ডের মত ভেসে যায়। প্রথম-বিশ্বযুদ্ধের প্রতিক্রিয়া বা অভিঘাত
ইওরোপের বিভিন্ন দেশে এরকমই হয়েছিল সন্দেহ নাই। ভারতবর্ষ এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে
জড়িত হয়নি।’’১
ব্রিটিশ শক্তির নিয়ন্ত্রাণাধীন ঔপনিবেশিক দেশ
ভারতবর্ষ পরোক্ষভাবে যুদ্ধের দাবানলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যুদ্ধের যাবতীয় ব্যয়-ভার
গৃহীত হয় ভারতীয় কোষাগার থেকে। যার ফলে দেখা দেয় মন্বন্তর, আর্থিক মন্দা;
বিপর্যস্ত হয় বাঙালি জনজীবনের নিয়মিত ছন্দ। মধ্যযুগীয় গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজের পরিবর্তে
সমাজে যান্ত্রিক বিন্যাস দেখা যায়, ক্ষয়িষ্ণু ধারায় প্রবাহিত হয় মনুষ্যত্ব থেকে
চিরকালীন মূল্যবোধ। সাহিত্যের কেন্দ্রবিন্দুতে ধীরে ধীরে উঠে আসতে শুরু করলো
মানবজীবনের আদিম প্রবৃত্তি সহ প্রান্তিক জনমানসের কলতান। গোপিকানাথ রায়চৌধুরীর
পর্যবেক্ষণ অনুসারে, “যুদ্ধোত্তর কালে জাতীয়-জীবনে নানা বিপর্যয় ও আন্দোলনের ফলে
সমগ্র দেশের তথা বাংলার যুবচিত্ত অশান্ত, বিহ্বল ও হতাশ হয়ে উঠেছিল। প্রচলিত
মূল্যবোধ সম্পর্কে সুতীব্র সংশয় ও জিজ্ঞাসা উদ্যত হয়ে উঠতে লাগল মনের মধ্যে।’’২
সমকালীন যন্ত্রণাদীর্ণ বেদনা ও সংবেদনশীলতা নিয়ে বাংলা
কাব্য-কবিতার আসরে আবির্ভূত হন সমর সেন। সমালোচকদের মতে তিনি নাগরিক চেতনার কবি, মধ্যবিত্ত
জীবনের চিত্রকর। পূর্বজ সাহিত্যিক কিংবা কবিদের থেকে ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয় তাঁর
সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রটি। তিরিশের দশকে কবি সমর সেনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সেই সময়পর্বের
বেশকিছু কাল পূর্ব থেকে আধুনিক বাংলা কবিতার পত্তন হয়। রবীন্দ্রনাথের কথায়, “এটা
কালের কথা ততটা নয়, যতটা ভাবের কথা। নদী সামনের দিকে সোজা চলতে চলতে হঠাৎ বাঁক
ফেরে। সাহিত্যও তেমনি বরাবর সিধে চলে না। যখন সে বাঁক নেয় তখন সেই বাঁকটাকেই বলতে
হবে মর্ডান। বাংলায় বলা যাক আধুনিক। এই
আধুনিকতা সময় নিয়ে নয় বরং মর্জি নিয়ে।”৩ অর্থাৎ কবিতার আঙ্গিক রদবদলের
দিকটিকেই ‘আধুনিকতা’-র সমার্থক হিসাবে নির্দিষ্ট করেন তিনি। অন্যদিকে
রবীন্দ্র-পরবর্তী সময়ের ‘নির্জনতম কবি’ জীবনানন্দ দাশের মতানুসারে, “নতুন সময়ের
জন্যে নতুন, ও নতুনভাবে নির্ণিত পুরানো মূল্য, নতুন চেতনা ও নতুনভাবে আবিষ্কৃত
পুরানো চেতনার যে একান্ত দরকার শিল্পে ও জীবনে একালের কোনো-কোনো বাঙালি কবি সেটা
বুঝতে পেরেছেন বলেই আজকের বাংলা কবিতা স্বভাবতই বিষয় ও রীতি নিয়ে নিরন্তর পরীক্ষার
একটা অব্যাহত প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে।”৪ অর্থাৎ তিনি নতুনত্বের
আঙ্গিকে চিরায়িত ভাব-ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর কবিতায় একদিকে যেমন চিরন্তন
বোধ-বিশ্বাসের পাশাপাশি সমকালীন বিচ্ছিন্নতা-বিষণ্ণতা-একাকীত্বের সুরটিও লক্ষ্য
করা যায়। সেই সঙ্গে পাশ্চাত্যের খ্যাতনামা তাত্ত্বিক এবং সাহিত্যিকদের চিন্তাদর্শে
অনুপ্রাণিত হন সমকালীন কবিরা; “বাংলায় অতিবুদ্ধিজীবীরা মধ্যে তখন ইয়েটস্, এলিয়ট,
পাউণ্ডের প্রচণ্ড প্রভাব, বিশেষ করে এলিয়টের কবিতা ও গদ্য রচনাবলীর।’’৫
নাগরিক জীবনের কবি সমর সেন কাব্য-কবিতার জগত মধ্যবিত্ত
শ্রেণির যাপনের মধ্যেই সীমায়িত। ভারতে ইস্ট-ইণ্ডিয়া কোম্পানির শাসন কায়েমের সূত্র
ধরেই মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব হয়। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে উদ্ভূত
আর্থ-সামাজিক সমস্যা মধ্যবিত্তের জীবনলাপকে সর্বাধিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পূর্বজ
সাহিত্যিক কিংবা কবিদের থেকে ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয় সমর সেনের সাহিত্যচর্চার
ক্ষেত্রটি। তাঁদের মতে, “বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণি যে পীড়িত ও বিব্রত এটা... নতুন
আবিষ্কার নয়, সকলেরই মর্মে মর্মে এ গ্লানিকর তথ্য জানা আছে। এবং এর তত্ত্বের দিকটাও খুব অননুভূত বা অজ্ঞাত নয়, মূলত
অর্থনৈতিক, কিন্তু এটা দাস দেশ বলে রাজনৈতিক দিকটারও উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক।
কিন্তু এ সমস্তই জানা কথা। পুনরাবৃত্তি করা যে কেবল অনর্থক তাই নয়, বিরক্তিকরও।”৬
অথচ সমর সেনের কলমে বারংবার আবর্তিত হয়েছে নাগরিক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব; “আমি সাধারণ মধ্যবিত্ত, চালচুলো বজায়ের চেষ্ঠায় তাই
আছি। আমার গণ্ডি সীমাবদ্ধ ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে, সে গণ্ডি কখনো কাটিয়ে উঠতে
পারিনি।”৭ পূর্বজ সাহিত্যিক কিংবা কবিদের থেকে ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়
সমর সেনের সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রটি। কাব্যিক আর্দশ হিসাবে তিনি এলিয়টের
চিন্তা-চেতনাকে গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর মতে একজন ব্যক্তির জীবন-যাপনের নানান পর্যায়
তার চেতনার বিকাশে সহায়তা করে। যার ফলে তার মনের উন্মীলন ঘটে; “জীবনধারার ছাপ
চেতনা ও স্মৃতিশক্তিকে গড়ে, চেতনা নয়। অপর পক্ষে এটা পরে বলা হয়েছে যে,
উপরিকাঠামোর প্রভাব জীবন-ধারার পরিবর্তনে সাহায্য করে। এটা যৌথজীবনে যতটা সম্ভব
ব্যক্তিগত জীবনে ততটা নয়।’’৮
সমকালীনতার প্রতিধ্বনি সাহিত্য-সম্ভারের সঙ্গে সঙ্গে
কাব্য-চর্চার প্রেক্ষাপটেও বিধৃত হয়েছে। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ
‘কয়েকটি কবিতা’ প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে
একে একে প্রকাশিত হয় অন্যান্য কাব্যগ্রন্থগুলি। এই বিষয়ে আত্মজীবনীতে তিনি লেখেন;
“আমার কবিতা রচনার আয়ু অবশ্য বারো বছর – ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত, অর্থাৎ আমার
আঠারো থেকে তিরিশ বছর বয়স পর্যন্ত। প্রথম বই ‘কয়েকটি কবিতা’ বের করি ১৯৩৭-এ
স্বর্ণপদক বেচে, উৎসর্গ করি মুজফ্ফ্র আহমেদকে।”৯ তৎকালীন মধ্যবিত্ত
জীবনের আর্থিক অনটনের ছবিটি যার মাধ্যমে আরো একটু সুস্পষ্ট হয়ে ধরা পরে পাঠকের
কাছে। আকৈশোর কমিউনিস্ট ভাবধারার আদর্শে লালিত হয়েছে তাঁর মন ও মনন। যান্ত্রিকতার
অতলে নিমজ্জমান মহানগরীর কঙ্কালসার চিত্র ধরা পড়েছে ‘নাগরিক’ শীর্ষক কবিতায়;
“ভস্ম অপমান শয্যা ছাড়ো
হে মহানগরী!
রুদ্ধশ্বাস রাত্রির শেষে
জ্বলন্ত আগুনের পাশে আমাদের প্রার্থনা,
সমাজ জীবনের অস্পষ্ট চকিত স্বপ্ন...’’১দুই মহাযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে একদিকে যেমন
কৃত্রিমতার অভিঘাত পরিলক্ষিত হয় অন্যদিকে মানবিক মূল্যবোধ থেকে আবেগ-অনুভূতিরও
অবলুপ্তি লক্ষ্য করা যায়। যুগগত
এই দোদুল্যমান পরিস্থিতি বিধৃত হয়েছে কবির কলমে-
‘রাত নেই, দিন নেই, বারে বারে চমকে উঠি,
আমার মনে শান্তি নেই, আমার চোখে ঘুম নেই,
স্পন্দমান দিনগুলি আমার দুঃস্বপ্ন’’১১
সমকালীন অস্থিরতার সঙ্গে সঙ্গে কবিতার বিষয় বা
প্রেক্ষিত বদলের দিকটিও উল্লেখযোগ্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত ‘চিত্রা’
কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘উবর্শী’ শীর্ষক কবিতায় স্বর্গবাসিনী অপ্সরা ‘অনন্তযৌবনা’,
‘বিশ্বপ্রেয়সী’ হিসাবে চিত্রিত হয়েছে; কবির কথায়—
“যুগযুগান্তর হতে তুমি শুধু বিশ্বের প্রেয়সী
হে অপূর্বশোভনা উর্বশী!
মুনিগণ ধ্যান ভাঙি দেয় পদে তপস্যার ফল,
তোমারি কটাক্ষঘাতে ত্রিভুবন যৌবনচঞ্চল,
তোমার মদির গন্ধ অন্ধবায়ু বহে চারি ভিতে,
মধুমত্তভৃঙ্গসম মুগ্ধ কবি ফিরে লুব্ধচিতে
উদ্দাম সংগীতে।
নূপুর গুঞ্জরি যাও আকুল-অঞ্চলা
বিদ্যুৎ-চঞ্চলা।”১২
সমর সেন বিরচিত ‘কয়েকটি কবিতা’ কাব্যসংকলনের অন্তর্গত
‘উর্বশী’ নামক কবিতায় ভিন্নধরনের ছবি প্রতিফলিত হয়। সময়-সমাজ-যুদ্ধের ঘনান্ধকার
করাল গ্রাসে যেন ‘অন্তনযৌবনা’ অপ্সরাও আজ বিমর্ষ। যে একদিন ‘বিশ্বপ্রেয়সী’রূপে
সকলের বন্দিতা ছিল আজ সে মধ্যবিত্তের কাছে ‘দিগন্তে দুরন্ত মেঘের মতো’ ভাসমান। সমকালীন
তিক্ততায় আজ যেন সেই স্বর্গবাসিনী ‘ক্লান্ত’, বিষণ্ণতায় পরিবৃতা তাই কবি বলেছেন—
“তুমি কি আসবে আমাদের মধ্যবিত্ত রক্তে
দিগন্তে দুরন্ত মেঘের মতো!
কিংবা আমাদের ম্লান জীবনে তুমি কি আসবে,
হে ক্লান্ত উর্বশী,
চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে যেমন বিষণ্ণমুখে
উর্বর মেয়েরা আসে
কত অতৃপ্ত রাত্রির ক্ষুধার ক্লান্তি,
কত দীর্ঘশ্বাস,
কত সবুজ সকাল তিক্ত রাত্রির মতো,
আর কত দিন!’’১৩
ক্রান্তিকালের অনুচ্চারিত ব্যবধানে ‘প্রেম’ যেন
‘পণ্য’-এর নামান্তর। যৌনতা তার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। নাগরিক জীবনের দ্বন্দ্বময়তা থেকে সাময়িক
সুখ খুঁজে নেওয়ার জন্য যুব সম্প্রদায়ের ভিড় বাড়তে থাকে নিষিদ্ধ পল্লীর অন্ধকারে;-
“নরম মাংস স্তূপে গভীর চিহ্ন এঁকে
নববর্ষের নাগরিক চলে গেল রিক্ত পথে,
বন্ধ্যা নারীর অন্ধকারে পৃথিবীকে রেখে।”১৪
দুই মহাযুদ্ধের মধ্যকালীন সময় সূচকে মানুষের
জীবন-ধারণের অন্যতম অবিচ্ছেদ্য বিষয় হিসাবে নিঃসঙ্গতা, নিরাশা, নৈঃশব্দতা প্রকটিত
হয়। শূন্যতার অন্ধকারে প্রকটিত ‘আমিত্ব’-এর হাহাকার, নৈঃশব্দতায় চাপা পড়ে যায়। তখন
মানুষের সঙ্গী হয়ে ওঠে নীরবতা, একাকীত্ব; কবির ভাষায়-
“কেন তুমি বাইরে যাও স্তব্ধ রাত্রে
আমাকে একলা ফেলে?
কেন তুমি চেয়ে থাক ভাষাহীন, নিঃশব্দ পাথরের মতো?
আকাশে চাঁদ নেই, আকাশ অন্ধকার
বাতাসে গাছের পাতা নড়ে,
আর দেবদারু গাছের পিছনে তারাটি কাঁপে আর কাঁপে;
আমাকে কেন ছেড়ে যাও
মিলনের মুহূর্ত হতে বিরহের স্তব্ধতায়?’’১৫
এহেন যান্ত্রিকতা থেকে কবি স্বস্তি খুঁজে পান
‘বৃষ্টির আভাসে’ সিক্ত সাঁওতাল পরগণার সবুজাচ্ছন্ন পরিবেশে। ‘বণিক সভ্যতার শূন্য মরুভূমি’ দিয়ে
হেঁটে চলা কবি ‘মেঘ-মদির আকাশে’ নতুনভাবে স্বপ্ন দেখার রসদ খুঁজে পান;--
“বৃষ্টির আভাসে করুণ পথে ধুলো উড়ছে,
এমন দিনে সে-ধুলো মনে শুধু আনে
সাঁওতাল পরগণার মেঘমদির আকাশ;
চারিদিকে আকাশ মেঘ-মদির
আর কিসের দীর্ঘশ্বাস-সাঁওতাল পরগণার নিঃসঙ্গ
স্তব্ধতা”১৬
অথচ কালের প্রবাহমানতায় ধনতান্ত্রিক পুঁজিবাদী
সভ্যতার উল্লাসে সেই ‘মেঘ-মদির’ আকাশ যেন ‘দুঃস্বপ্ন’-এর নামান্তর। সবুজে ঘেরা
প্রকৃতির সৌন্দর্যময়তা যন্ত্রসভ্যতার লেলিহান শিখার গ্রাসে হারিয়ে গিয়েছে। তাই
মহুয়া বনের ধার থেকে ছড়িয়ে পড়া ‘কয়লা খনির গভীর বিশাল শব্দ’ কবি ব্যথিত করে তোলে।
শিশির সিক্ত সকালের ধুলোমাখা অবসন্ন খনি-শ্রমিকদের ‘ঘুমহীন চোখ’ যেন কবিকে আবারো
বাস্তবের মাটিতে ফিরিয়ে আনে;--
“এখানে অসহ্য নিবিড় অন্ধকারে
মাঝে মাঝে শুনি
মহুয়ার বনের ধারে কয়লা খনির
গভীর, বিশাল শব্দ,
আর শিশির ভেজা সবুজ সকালে
অবসন্ন মানুষের শরীরে দেখি ধুলোর কলঙ্ক,
ঘুমহীন তাদের চোখে হানা দেয়
কিসের ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন।”১৭
‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় একদিকে যেমন স্বপ্নের হাতছানি
রয়েছে অন্যদিকে রয়েছে স্বপ্নভঙ্গের বাস্তবতা। পরিবর্তিত সময়-সমাজে ধনতান্ত্রিকতার
শোষণাগারে মধ্যবিত্ত জীবনের দুঃসহ ধূসরতা প্রকটিত হয়। কবি চিত্তে সেই অবক্ষয় ধরা
পড়ে বাস্তবতার প্রগাড়তায়। কবি বুদ্ধদেব বসু তাই সমর সেনের কবিতা প্রসঙ্গে মন্তব্য
করেছেন;- “নাগরিক জীবনের খণ্ড খণ্ড ছবি বা উল্লেখ কোনো কোনো আধুনিক কবিতে থাকলেও
সমগ্রভাবে আধুনিক নগরজীবন সমর সেনের কবিতাতেই প্রথম ধরা পড়লো। সমর সেন শহরের কবি,
কলকাতার কবি, আমাদের আজকালকার জীবনের সমস্ত বিচার বিক্ষোভ ও ক্লান্তির কবি।”১৮
আসলে মধ্যবিত্ত জীবন-যাপনের সব সীমায়িত ধ্যান-ধারণা
সহ শ্রেণিগত দ্বিধা-যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে মার্ক্সীয় আদর্শেই প্রতিফলিত হয়েছে, তাই
সমর সেনের কবিতা হয়ে উঠেছে নাগরিক জীবনের অন্যতম লেখচিত্র।
তথ্যসূত্র;
1. রায়চৌধুরী,
গোপিকানাথ, ‘দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যকালীন বাংলা কথাসাহিত্য’, দে’জ পাবলিশিং,
কলকাতা, পৃষ্ঠা ১০
2. তদেব,
পৃ ১২
3. ঠাকুর,
রবীন্দ্রনাথ, ‘রবীন্দ্র-রচনাবলী(১২ খণ্ড)’, বিশ্বভারতী, কলকাতা, পৃ ৪৮০
4. দাশ,
জীবনানন্দ, ‘কবিতার কথা’, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃ ১০০
5. সেন,
সমর, ‘বাবু বৃত্তান্ত’, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃ ২৪
6. কর্মকার,
বৃন্দাবন, ‘সমর সেন; কবির জীবন ও কবিতায় জীবন’, পুস্তক বিপণি, কলকাতা, পৃ ৭৭
7. সেন,
সমর, ‘বাবু বৃত্তান্ত’, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃ ২৫
8. তদেব,
পৃ ৯০
9. তদেব,
পৃ ২১
10. সেন,
সমর, ‘কয়েকটি কবিতা’, সিগনেট প্রেস, কলকাতা, পৃ ২৮
11. তদেব,
পৃ ২২
12. ঠাকুর,
রবীন্দ্রনাথ, ‘চিত্রা’ বিশ্বভারতী, পৃ ৫৫
13. সেন,
সমর, ‘কয়েকটি কবিতা’, সিগনেট প্রেস, কলকাতা, পৃ ৪০
14. তদেব,
পৃ ২২
15. তদেব,
পৃ ৫
16. তদেব,
পৃ ১১
17. তদেব,
পৃ ৩৫
18. আচার্য্য,
ডঃ দেবেশকুমার, ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস(আধুনিক যুগ), ইউনাইটেড বুক এজেন্সি,
কলকাতা, পৃ ৩৩৫