কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০

মেঘ অদিতি

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৯


রস-আয়ন

এজগতে যাহা কিছু পরিবর্তনশীল তাহা রসায়নের বিক্রিয়া অধিক আর কী! তোমরা কহিবে ইহা নিয়ম। ভালো করিয়া ভাবো। দেখিবে উহা নানা প্রকারের রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমাহার।

তাই কি মরিচা ভঙ্গুর, প্রভু?

প্রভু হাসেন, আর সম্পর্ক?

নিজেদের নিয়া কহিতে পারি। আমাদের দৃষ্টি সরল। সাদাচক্ষু। অহোরাত্র আমরা একে অপরকে ‘ভালোবাসি’ কহিয়া প্রণয়পাশে আবদ্ধ রাখি। তাহাকে প্রাণেশ্বর সম্বোধন করি, তিনিও মায়া বলিয়া ডাকেন। উভয়েই চাই, মনের ভিতর ভালোবাসার ঢেউগুলি এইরূপে সারাদিন আন্দোলিত হউক।

উত্তম। ইত্যবসরে মনের অলিগলি ঘুরিয়া আসার খানিক অবসর ঘটিলে, যাইবে কি?

নিশ্চয়! সে ইচ্ছাও তো অন্তরে পোষণ করি।

তবে তাহাই হউক। চক্ষু নিমীলিত কর।

আকাশ নীল, পুঞ্জপুঞ্জ সাদা মেঘের সাথে পাল্লা দিয়া ইষিকাগুচ্ছের মৃদু হিল্লোল…  নদীতে সাদা পাল তোলা নৌকা চলিতেছে। সাদার আধিক্যে, কেমন বোধ করিতেছ জানাও…

প্রভু এই দৃশ্যে সাদাই অধিক, কিন্তু চক্ষু কেন সাদা রহিতেছে না! আমার ভিতর কী  যেন ঘটিতেছে…  বোধ জাগিতেছে, যুগল চলার শুরুর দিন আর বর্তমান এক  নহে! বসন্ত সমীরণে সর্বাঙ্গে পুষ্প ছুঁইয়া তিনি যখন চুম্বন করিতে উদ্যত হইতেন তখন এই দেহমন বিবশ হইয়া উঠিত… তাহার মধু মিশ্রিত কন্ঠ শুনিবার জন্য  উন্মাদিনীর ন্যায় অন্দরমহল হইতে কীরূপে লুকাইয়া নদীর ঘাটে গিয়া দাঁড়াইতাম! বারংবার আমাকেও দেখিতে মন চাহিত বলিয়া নানা ছলে তিনিও কতবার বহির্বাটীর সন্মুখ পথ প্রদক্ষিণ করিতেন, এই সকল কথা মনে পড়িয়া যাইতেছে প্রভু!

এইবার উত্তর কর এখন কি একে অন্যকে সেই রূপে কামনা কর না?

কিয়ৎকাল অধোমুখে ঘাসের দিকে তাকাইয়া থাকি। নদীর ছলাৎ শব্দে বুক উথলায়। কোথা হইতে একখানা দ্বিচক্রযান আমাকে কেন্দ্রে রাখিয়া বৃত্তাকারে ঘুরিতে থাকে। তাহাতে আরোহীর সংখ্যা তিন। তিনবার প্রদক্ষিণ করিয়া তাহারা মিলাইয়া যায়।

প্রভু কহেন, ইহারা মোহ, বিভ্রম, অহংকার! এবং ইহারাও বিক্রিয়া। এজগতে রস-আয়নের অধিক আর কীই বা আছে…

হৃদয় অন্তঃপুরে কেহ যেন সহসা কুঠারাঘাত করে। চক্ষুদ্বয় নদীর জলের অধিক টলমল। এইক্ষণে বারংবার তাহাকে বলি… প্রভু আমার কিছু বলিবার আছেতিনি নিরুত্তর। 

সহসা প্রাণেশ্বরের পদশব্দে আচ্ছন্নতা কাটিয়া গেল।

দেখি, বিশাল কর্মযজ্ঞে যাইবার প্রাক্কালে সদাব্যস্ত প্রাণেশ্বর আমাকে একবার ‘হ্যালো’ কহিতে আসিয়াছেন।

 

 

 

 



 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন