কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০

পরাবাস্তববাদীদের কবিতা

 

প্রতিবেশী সাহিত্য      

 

পরাবাস্তববাদীদের কবিতা

 

ফেদেরিকো গারসিয়া লরকা (১৮৯৮ - ১৯৩৬)

 

(অনুবাদ: মলয় রায়চৌধুরী)


The Paris Surrealists1933


 

চাঁদ চাঁদের গাথাসঙ্গীত

 

কনচিতা গারসিয়া লরকার জন্য

 

চাঁদ কামারের কাছে এলো

সুগন্ধনির্যাসে তৈরি পেটিকোট পরে

যুবক দ্যাখে আর দেখতেই থাকে

যুবক চাঁদের দিকে তাকায়

অশান্ত বাতাসে

চাঁদ নিজের বাহু তুলে ধরে

দেখায় - বিশুদ্ধ আর যৌন --

ওর টিন-পাতের বুক

দৌড়োও চাঁদ দৌড়োও চাঁদের চাঁদ

যদি জিপসিরা আসে

শাদা আঙটি আর শাদা গলার হার

তারা তোমার হৃদয় থেকে স্পন্দিত হবে

যুবক তুমি কি আমায় নাচতে দেবে --

যখন জিপসিরা আসবে

ওরা তোমায় নেহাইয়ের ওপরে পাবে

তোমার ছোট্টো চোখ বন্ধ করে

দৌড়োও চাঁদ দৌড়োও চাঁদের চাঁদ

আমি ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দ শুনতে পাচ্ছি

আমাকে রেহাই দাও যুবক। কথা বোলো না

আমার শাদা মাড়ের গলিতে

ঘোড়সওয়াররা বাজাতে বাজাতে এলো

সমতলের ঢোলক

কামারশালায় যুবক

নিজের ছোটো চোখ বন্ধ করে নিয়েছে

অলিভগাছের বন দিয়ে

কাঁসায় আর স্বপ্নে

জিপসিরা এসে পড়ল

ওদের মাথা উঁচু করে

ওদের চোখ নামিয়ে

 

রাতের সারস কেমন গান গায়

কেমন গাছে বসে গান গায়

চাঁদ আকাশ পেরিয়ে চলে যায়

যুবকের হাত ধরে

 

কামারশালায় জিপসিরা

কাঁদে আর তারপর চেঁচায়

বাতাস লক্ষ রাখে লক্ষ রাখে

বাতাস চাঁদের দিকে লক্ষ রাখে

 

অবিশ্বস্ত গৃহিণী

 

মেরি পিসের জন্য

 

তারপর আমি ওকে নদীতে নিয়ে গেলুম

নিশ্চিত যে ও অক্ষতযোনি

যদিও ওর একজন স্বামী ছিল।

জুলাইয়ের চতুর্থ শুক্রবারে,

কথা দেবার মতন নির্দিষ্ট।

রাস্তার আলোগুলো উবে যাচ্ছিল

আর জোনাকিরা জ্বলে উঠছিল।

শহরের শেষ বাঁকে

আমি ওর ঘুমন্ত বুক আদর করলুম।

তারা হঠাৎ কুসুমিত হয়ে উঠল

হায়াসিন্থের ডগার মতন

আর ওর পেটিকোটের মাড়

আমার কানে রেশমের মতন হইচই তুললো

ডজনখানেক ব্লেডে চেরা।

পাইনগাছগুলো, তাদের জ্যোতি

রুপোর, বাদ দিয়ে, বিশাল হয়ে উঠলো

আর কুকুরের দিগন্ত

নদী থেকে বহুদূর কান্না শোনাতে লাগলো।

 

জামগাছের পাশ দিয়ে,

নলখাগড়া আর কাঁটাঝোপ,

যুবতীর এলোচুলের তলায়

আমি বালিতে ডুব দিলুম।

আমি খুলে ফেললুম আমার গলার রুমাল।

যুবতী ওর পোশাকের বাঁধন খুলে ফেলল।

আমি আমার পিস্তল আর তার খাপ,

ও নিজের কাপড়কানির পরত

রজনীগন্ধা নয়, খোল নয়,

মসৃণতার অর্ধেকের মতন ত্বক

আয়নার কাচের মতনও নয়

চকমকানির অর্ধেক আছে।

ওর নিতম্ব আমার জন্যে পাখনা নাড়ালো

এক জোড়া সচকিত পোনামাছের মতন:

একটা পুরো আগুনময়

আরেকটা ঠাণ্ডায় ভরপুর।

 

সেই রাতে আমি হয়তো

বরং চাপতুম

পথগুলোর মধ্যে বেছে নিয়ে

মুক্তো রঙের ঘোটকীর পিঠে

লাগাম আর রেকাব ছাড়াই।

যেহেতু আমি একজন ভদ্রলোক,

আমি সেসব টুকরোকথা বলব না

যা যুবতী ফিসফিস করে বলেছিল।

সেখানেই ভোর হয়ে এলো

আমার ঠোঁটে কামড়ের দাগ নিয়ে।

চুমু আর কাদায় নোংরা

আমি ওকে নদী থেকে নিয়ে গেলুম

আর লিলিফুলের ফলক

বাতাসের সঙ্গে লড়ছিল।

 

আমি তেমন আচরণই করেছিলুম

আমার মতন বজ্জাত যেমন করবে।

আমি ওকে বড়ো খালুই দিতে চাইলুম

খড়ের রঙের সাটিনের তৈরি।

আমার ইচ্ছে ছিল না ওর প্রেমে পড়ার।

ওর তো একজন স্বামী আছে,

যদিও ও তখনও অক্ষতযোনি

যখন ওকে নদীতে নিয়ে গেলুম।

 

সন্ধ্যার দুটি চাঁদ

 

আমার বোনের বন্ধু, লরিতার জন্য

 

চাঁদ মৃত মৃত

---বসন্তকালে তা জীবনে ফিরবে

যখন দখিনা এক বাতাস

পপলারের ভ্রুকে এলোমেলো করে দেবে

যখন আমাদের হৃদয় দীর্ঘশ্বাসের শষ্য ফলায়

ছাদগুলো যখন ঘাসের টুপি পরে থাকে

চাঁদ মৃত মৃত

---বসন্তকালে তা জীবনে ফিরবে

 

আমার বোন, ইসাবেলার জন্য

 

সন্ধ্যা ঘুমপাড়ানি গান গায়

কমলালেবুর জন্য

 

আমার ছোট্ট বোন গায়

“পৃথিবী একটা কমলালেবু”

 

চাঁদ ফুঁপিয়ে বলে

“আমি কমলালেবু হতে চাই”

 

হতে পারবে না তুমি -- আমার আদুরি --

তুমি গোলাপি হয়ে গেলেও

কিংবা সামান্য পাতিলেবু

কত দুঃখের!

 

তোমার একটা চুমু পাবার জন্য   

তোমার একটা চুমু পাবার জন্য

আমি কিই বা দেবো

একটা চুমু যা তোমার ঠোঁট থেকে বিপথে গিয়েছিল

ভালোবাসার প্রতি মৃত

আমার ঠোঁট স্বাদ পায়

ছায়াদের কাদা

তোমার কালো চোখের দিকে তাকাবার জন্য

আমি কিই বা দেবো

রামধনু তামড়ির ভোর

ঈশ্বরের সামনে নিজেকে মেলে ধরছে---

নক্ষত্রগুলো তাদের চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে

মে মাসের এক সকালে

আর তোমার পবিত্র উরুতে চুমু খাবার জন্য

আমি কিই বা দেবো

আকরিক গোলাপী স্ফটিক

সূর্যের পলল


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন