কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০

সোনালি বেগম

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৯


কালপুরুষের স্বাধীন বন্যতা

সেপ্টেম্বর মাসের সন্ধ্যের আকাশের দিকে তাকাই। দক্ষিণ আকাশে উজ্জ্বল শনিগ্রহ আর ঐ যে বৃশ্চিক তারামন্ডলের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র জ্যেষ্ঠা বা অ্যান্টারেস। মধ্যরাতের আগেই অস্ত হয়ে যায়। ছায়াপথ ধরে হেঁটে যাই, উত্তরের ঈগল তারামন্ডলের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র অ্যালটেয়ার-কে জড়িয়ে ধরি কিছুক্ষণ। ছায়াপথের আরও উত্তরে সোয়ান তারামন্ডলের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র দেনেব ছুঁয়ে সরে যেতে থাকি। আকাশে এক ঝাঁক পরিযায়ী পাখি উড়ে যেতে থাকে। ক্রমে শীতকাল এসে যায়। কালপুরুষ বা অরিওনের উজ্জ্বল কোমর-বন্ধনী স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কালপুরুষের কুকুর সাইরাস অসামান্য উজ্জ্বলতায় ধেয়ে আসে। আকাশ থেকে নেমে আসে, হাঁপাতে থাকে সে। অতিযত্নে তার শুশ্রূষা করি। আমাদের ছায়াপথে তথা সমগ্র ব্রহ্মান্ডে নিশ্চয় কোনো কোনো গ্রহ আছে, যার অধিবাসীরা আমাদের থেকে বুদ্ধিতে উন্নত হবে। অনুসন্ধানে চলছে। সচেতন অস্তিত্ব তথা মানুষ এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে পাড়ি জমাতে উৎসুক। এই যে আমরা ইন্টার ন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আই.এস.এস.)-এর ভেতর ভেসে বেড়াচ্ছি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নভশ্চর, নানান পরীক্ষা নিরীক্ষায় মশগুল। চব্বিশ ঘণ্টায় ষোলোবার পৃথিবী প্রদক্ষিণরত স্পেস-ল্যাবরেটরী। সুতরাং আমরা একদিনে ষোলোবার সূর্যের উদয়-অস্ত দেখছি। সেকী রোমাঞ্চকর অনুভূতি, বলে বোঝানো যাবে না।

কালপুরুষ খুব কাছে এসে বসেছে। আমরা একসঙ্গে আকাশ পরিক্রমা করছি। ছায়াপথের উত্তর আকাশে ধ্রুবতারার কাছাকাছি জায়গায় ইংরেজি এম অক্ষরের আকৃতি নিয়ে অবস্থান করে এটা-ক্যাসিওপেয়ী তারামন্ডল। শেলি-র বিখ্যাত পংক্তি মনে পড়ে যাচ্ছে, “The maze of planets struggling fierce towards heaven’s free wildness.” অর্থাৎ “গ্রহ বিন্যাস তীব্র আকুলতায় স্বর্গীয় স্বাধীন বন্যতার দিকে ছুটে চলে।”

আমরা কি একটু বন্য হতে পারি? না, এই মহাকাশে ভারশূন্যতায় সমস্ত শারীরিক আবেগকে সরিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে চারশো কিলোমিটার উপরে ভেসে থাকি। বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা প্রথম আবিষ্কার করেন যে কীভাবে বর্ণালী থেকে নক্ষত্রের তাপমাত্রা নিধারণ সম্ভব।

সমস্ত ছায়াপথ জুড়ে, আছে নীহারিকা যা ধুলো এবং গ্যাসের মেঘপুঞ্জ। এখান  থেকেই নক্ষত্রের জন্ম হয়। আজ কালপুরুষ অবাধ্য হয়ে উঠছে। স্পেস-ওয়াক সেরে সবে আমরা স্পেস-ল্যাব-এর ভেতর প্রবেশ করলাম।

‘আ হী জাতা হ্যায় ওহ রাহ পর গালিব,

কোঈ দিন আউর ভী জিয়ে হোতে’

কালপুরুষ শুনিয়ে যাচ্ছে একের পর এক গালিব-এর শায়রী। সত্যি, আরও কিছুদিন পৃথিবীর বুকে যদি বেঁচে থাকি, বেঁচে থাকুক সে এবং ভালোবাসতে রাজিও হয়ে যাবো হয়তো বা একদিন!          

  

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন