কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০

বিদ্যুৎলেখা ঘোষ

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৯


শুভঙ্করী আর্যা

ছেলের বউকে বললেন, দেখি তোমার খোঁপাটা খোলো তো মিত্রা, ভালো করে দেখি। মিত্রা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল বৃদ্ধা শাশুড়ির দিকে। এতগুলো বছর কেটে গেছে তবু একবারের জন্যও শাশুড়ি-মা কখনো বউমার মাথার খোঁপা খুলে চুল দেখতে চাননি। এমনকি বিয়ের আগে যখন দু’তিনবার এসেছে রঞ্জনের সাথে, তখনও না। স্কুল কলেজের চক্কর তিনি খুব বেশি একটা না কাটলেও  স্বশিক্ষিত সমৃদ্ধ করে নিয়েছিলেন নিজেকে মিত্রার শ্বশুরমশাইয়ের আনা বিভিন্ন ধরনের বই পড়তে পড়তে। তবুও বউমা মিত্রাকে অল্পস্বল্প র‌্যাগিংও করেছেন শাশুড়ি সুলভ। কিন্তু আকস্মিকভাবে উনি বউমার এইরকম খোঁপা খুলে চুল দেখতে চাওয়ার মধ্যে কিন্তু সেই র‌্যাগিংএর মতো জ্বালা দিতে চাওয়া ব্যাপারটা ছিল না, এটা অনুভব করেছে মিত্রা।

বলিরেখার আলপনা ওনার চোখমুখে সারা দেহে লিখে রেখেছে সময়ের দলিল। নাতনি মেখলা তার বাবার মতোই বি টেক নিয়ে পড়াশোনা করছে। মেয়ে হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা দিচ্ছে তার মাঝখানেই চিরদিনের জন্য চোখ বুজলো তার বাবা রঞ্জন। শোকের ভিতরেও দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে পরীক্ষা দিয়ে ভালো রেজাল্ট করে চান্স পেতে হয়েছে মেখলাকে। এইরকম একটা পাথুরে পরিস্থিতিতে শাশুড়ি ওঁর বউমা মিত্রার খোঁপা খুলে চুল দেখতে চাইছেন।

মিত্রার বড় ননদ, ছোট ননদ দুজনকেই কথাটা জানালে ওরা বললো, তাদের মা শোকে পাথর হয়ে এইসব ভুলভাল কথাবার্তা বলছেন। বাড়াবাড়ি হলে পাগলের ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে। এসব শুনে মিত্রার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে গেলো। শ্বশুরমশাইও তো বৃদ্ধ হয়েছেন। শোকে মূহ্যমান তিনিও। শেষমেশ উপায়ান্তর না দেখে শাশুড়িকে জিজ্ঞাসা করে বসলো মিত্রা, হঠাৎ তার চুলের খোঁপা খুলে দেখবার কারণ কী!

দুপুরবেলা সবার খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে শাশুড়ি বসেছিলেন পানের বাটা নিয়ে। পানে চমনবাহার মৌরি ছড়িয়ে খিলি সাজতে সাজতে মিত্রার প্রশ্ন শুনে খানিকটা থমকে গেলেন। তারপর দৃষ্টিতে পুরনো অতীত টেনে দুলে দুলে বলতে লাগলেন, তোমার শ্বশুরমশাইয়ের সঙ্গে তো প্রথমে বিয়ের কথা হয়নি। তিনি তো আমার বাবার অল্পবয়সী তাসের আড্ডার বন্ধু। যার সঙ্গে বিয়ের কথা হয়েছিল, সে বিয়ের দিন কিছু না বলে পালিয়ে যায়। আমি কনের সাজ টেনে ছিঁড়ে খুলে ফেলছিলাম। তোমার শ্বশুরমশাই তখন আমাকে লগ্নভ্রষ্টা হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে বিয়ে করে নেন। আমার এলোথেলো আধখোলা খোঁপাই নাকি তাকে আকুল করে ডেকেছিলো।

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন