কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০

তমাল রায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৯



দ শ্যাডো বিহাইন্ড

 

(১)

ফিরে যাবার যে পথ, সেলাই করেছিলাম। মুছে দিলাম। আকাশ নামছিলো মৃদু অনিবার্যতায়। মেনোপজের পর মা গান থেকে দূরে সরছিলেন। ধাপার মাঠে জঞ্জাল বেড়েই চলছিলো। সেটা হয়ত চৈত্র মাস। ন্যাশপাতি রঙা বিকেল আসলে চুপ করে বসে থাকতো সে। সে মানে এরেবাস। পাহাড় থেকে গড়িয়ে নামতো আর্তনাদ। তখন হয়ত চা দোকানে আঁচ পড়ছে। টেবিল মুছে রাখা হল। চেয়ারগুলো মুখোমুখি বসছে। এবার এই একবারই হয়ত মুখোমুখি তারা। তারপরেই তো সংক্রান্তি, সং গাজন, গাজনের মেলা। মেলা ভাঙার পর যা পড়ে থাকে, সেইসব টুকিটাকিই আবার কখনও ফেভিকল!

বাবা বলতেন, দুনিয়া এক আশ্চর্য ক্যাওস! যা থেকে কসমিকের জন্ম হয় কখনও সখনও।

(২)

আমি জামা পরি না। জামা'ই আমায় পরে। শিখেছিলাম এরেবাসের কাছে। তখন  শহরে সাইক্লোন আসবে। রেড এলার্ট জারি হয়েছে। পকেট কিছুতেই জামার সাথে থাকবে না! কী বিপদ বলুন্ দেখি! এরেবাস পরে বোঝালো। যে যেতে চায় তাকে যেতে দিতে হয়! অবাক হয়ে বললাম, বলো কী? এবার তো তাহলে সান্তা মারিয়াও... সান্তা মারিয়া আমার বেড়াল। পোষা না হলেও বেড়াল! দূরের পাহাড়ি গ্রামের ছোট্ট বাজারে দেখা হল সান্তা মারিয়ার সাথে। তার চোখ তখন উদাস! সে আমায় দেখলো! মাইরি বলছি। মাইরি বলছি পুরো রীনা ব্রাউন।

খুব ধীরে ঘাড় ঘোড়ালো, তাকালো, আর হাই তুললো! হাই না দীর্ঘশ্বাস? বোকারা না বুঝলেও এরেবাস বলেছিল, দীর্ঘশ্বাসেরও আঁশটে গন্ধ থাকে। লুকনো পা, যা কিছু পর তোমাকেও ছোঁবে।

(৩)

কলম্বাস আমার প্রতিবেশী ছিলেন না। তা কলম্বাসের অপরাধ নয়। আমারও না। তবে আমার প্রতিবেশীরা কলম্বাস হয়ে উঠেছিলেন। ভোর হলেই পার্কের বেঞ্চে বসে কম্পাস দড়ি কাঁটা ছাড়াই তাঁরা দেশ আবিস্কার করতেন। সেই তখনও  সকাল তেমন পাকেনি। তেমন আলো নেই, আবার ধাঁধাও। তাঁরাই একদিন  জানালেন 'করুণা' একটা দেশের নাম। মা'কে খুঁজলাম খানিক। এরেবাস বললো, মা উত্তরের সাগর থেকে অরোরা বোরিয়ালিস আনতে গেছেন। আশ্বস্ত হলাম। মা যেদিন চলে যান, এইসব আশ্চর্য গল্পের কথাই ভাবছিলাম। দেখি মা'র কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। মুছিয়ে দিলাম। মুখে মৃদু হাসি। তাকালেন। চোখে জল এলো। মা বললেন, জ্ঞান এক নিভৃত সাধনা, জ্বেলে রেখ। এরপর সকালের আড্ডাগুলোর নাম বদলে হয়, দ শ্যাডো বিহাইন্ড।

কিন্তু আর সূর্যই ওঠেনি। পাখি ডাকেনি। এরেবাসের সাথে সেই শেষ দেখা। বুড়ো বাপ তারপর একদিন জানালো, এরেবাস তাঁরও বন্ধু ছিলো। এই প্রথম সন্দেহর জন্ম হয় দুনিয়ায়। আর আমি ঘুমিয়ে পড়ি অনন্তের পথে একা।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন