কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০

প্রদীপ চক্রবর্তী

 

কবিতার কালিমাটি ১০৫


সারমেয় সমগ্র

 

(এক)

 

অথচ আগুন শুরু হয়

নৃত্যরত দিগ্বিদিক রঙের কাছে

ইজেল এবং  শূন্য পাতায়

অসঙ্গত আবছা মুখরেখা

আর মনে পড়ে, গর্ভের মধ্যে থাকে এক সারমেয়

লেজ নাড়ে মায়াপ্রান্তরে নাটকীয় গৃহকর্মে

 

আনখশির  মৃৎশকটের দেহাবশেষ

এত অভিনব, আরকের খোঁজে

উপদংশ বহনের পাপ, যা কোরককে ফুটিয়ে তুলেছে

আদিভূতা অতিপ্রাকৃতিক

অনপেক্ষ এবং দুর্মর পৃথিবী - প্রান্তিক এক বাড়ি

এতো প্রতিরক্ষাহীন সারমেয়, এতো দীর্ঘতর ছায়া - ভঙ্গিমা অপেক্ষা করে,

ভোরবেলায় যে সুর হারিয়ে গিয়েছিলো সব তুচ্ছতার কাছে

তপস্বীমগ্ন স্খলনের অভিপ্রেত নেতিবৃত্তে কতদিন

শহরতলীর কত লুপ্ত স্বরধ্বনি তার আলজিভে۔۔۔

 

 

(দুই)

 

যেখানে যত বিভ্রান্তির অমোঘতা নিয়ে

উর্বর শ্বাস বুকের মধ্যে বুদ্বুদ থেকে সরিয়ে

এতদিনের এই নিঃস্ব নভোতলে

অসমসাহসী সারমেয় সত্তার জন্ম

অন্ধ বাঘের মতো  শোনা গেলো তার গর্জন

এখন সে সাবলীল নিঃশ্বাস নিচ্ছে ফুসফুসছাড়া

 

নিজেকে ধ্বংস করা ছায়াচ্ছন্ন দীঘিটির পাশে

এখনও সে স্পর্শ শুঁকে শুঁকে জেগে ওঠে

ভীত - জনপদে জড় জীবনের প্রসাধন

আর বিনষ্ট শীৎকারে, দেহরত্ন - পূজা

ওই দূর সরাইখানার শেষ আলোটি

নিভে যাবার পর

কারা রক্ষা করবে সেই অনিঃশেষ নিতম্ভভারে

উপেক্ষিত পুরুষের উদ্বেল বিবমিষা

সুষুপ্তি কুহকে দেখা সমূহ  ভূলোকে

তাৎক্ষণিক, বর্ণহীন, শ্রেণীহীন প্রেম۔۔۔

 

 

(তিন)

 

"কুকুরের লেজ সোজা হয় না۔۔۔"

এই আপ্তবাক্যটি স্মরণ করলো

নগরের শ্রেষ্ঠ ডোম্বিনী

কামাতুরা , ঘোর আসক্ত পুরুষ মাংসে যার ,

গরম  নিঃশ্বাসে গলতে থাকবে অবৈদিক উপাসনা

 

 

একটি প্রাচীন গুহার সামনে

পৃথিবীর আদিম গুহামানব

আমি কিন্তু আকৈশোর তোমাকেই

সঙ্গী ক'রে নিয়ে

শীতার্ত জঙ্গলের সীমানায়

নিষিদ্ধ পলান্নের গন্ধে সাজিয়ে রেখেছি

জলে ডোবা, মাটিতে পোঁতা, কাঠের গুঁড়ির

জীবন আমাদের

 

 

(চার)

 

আজ পাখির গর্ত থেকে উঠে আসছে তামাটে আগুন

ধাতু সত্তা, বাল্যের করমচা গাছ

নির্জন ধোয়া শরীরের রংপুরে

দুলছেন অসীম নট্ট۔۔۔

শেষ বিন্দুতে দাঁড়িয়ে বিষণ্ণ শকুন সংক্রমিত,

বিদেহী প্রবণ,

বিন্দুসার পানীয় সম্বল

বৃষ্টি পরবর্তী সন্ধ্যায় জলের সাথে

কথোপকথনে ভিজে যায়

ক্রমশ আনমনা কুকুর۔۔۔

 

 

হোমারের নৌকা

 

(এক)

 

অচিকিৎস্য ব্যাধিসব রক্তের মশকে ভরা

নিঃশেষের হে নিশাচর, অশ্বক্ষুর দক্ষ

লুপ্ত জাহাজডুবির ছবি

রক্তের কাঁপন, লোনা স্বাদ,

তারপর খেয়াল নেই۔۔۔

 

একঝাঁক পাতিহাঁস

ডানা ঝটপট ক'রে উড়ে গেলো

সেই বৃত্তটির নেই পরিযায়ী অলিগলি

জলছবিশূন্যতার সিঁড়িভাঙ্গা বেটোফেন নেই

পাখির অনর্গল স্থবিরতা

 

নির্জন বিজ্ঞাপনেরও নিঃশেষের কান্না আছে۔۔۔

 

পলান্ন - কাবাব - সূরা  - যজ্ঞঘৃতে রেকাবি সাজিয়ে

মধ্যে মধ্যে শুধু জল - হেমন্তিকা, বিকল্প গ্রাম

আর রোদের প্রসূতিসদন

শতমারি রাক্ষসীর হাড়মাংসে, স্তনের নীল শস্যমালায়

শেষতম মানুষটির আলো নিভে যাবার পর

বৃষ্টি নেমেছে আবার

অন্তর্ভেদী হোমারের নৌকো তাই কাগজের۔۔۔

 

 

(দুই)

 

 

বৃষ্টি নিবাস দিয়ে রাস্তা দেখি

জলের নির্জনে এক আতুরগন্ধ কীভাবে অন্ধরা চিনে নেয়

মৃত শহরের  হাওয়ায়

তমসাভৌম বিষ হিম হয়ে বাঁধে

পরিত্যক্ত মাধবীদের বাড়ি,

ফুলে নুয়ে পড়েছে পুরনো বাড়িটির ঘরগুলো

ঘর মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে

শূন্য পরিচর্যাকরা বাংলার তাঁতের শাড়ি

গন্ধ নিয়ে উঠছে۔۔۔

ঘুলঘুলির একবিন্দু জ্যোৎস্না আঁক কষছে

একটার পর একটা পাতা উল্টে উল্টে

খুলে ফেলছি একটার পর একটা ব্যবহৃত

সর্পতূণ, শিশ্ন অতিরেক মনের দ্যুতক্রীড়া

মাঝে মাঝে উপচে পড়ছি আমি,

জন্মান্তরীণ রক্তবিন্দু শিশির হয়ে

নিসর্গ ছুঁয়ে থাকে,

কয়েকজন পাখিদের সারাৎসার

আমার দখলে۔۔۔

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন