কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০

অচিন্ত্য দাশ

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৯


মৃগ-শার্দুল সংবাদ

 

দুটো মাত্র চরিত্র। শুভ্রদেব ঘোষ আর নিশান চৌধুরি।

শুভ্রদেব: বয়স সাতাশ, এম-এস-সি পাশ, ছোট কোম্পানীতে চাকরি করে। নিশান: বয়স তেতাল্লিশ, ম্যানেজমেন্ট লাইনে আছেন, বই লিখেছেন। পরামর্শদাতা। মোটা রোজগার। ক্লাবের দুর্গাপুজো সূত্রে দুজনের মধ্যে ভালো জানাশোনা আছে।

সন্ধেবেলা শুভ্র এসে বলল, “নিশানদা, কী করি বল তো! আজ ম্যানেজার  ডেকেছিলো, বলল, ‘ভালো করে কাজ করো, বিজনেস ভালো চলছে না’… আবার এদিকে শুনছি অনেক লোক নাকি ছাঁটাই হবে। আমাকে হঠাৎ ডাকলো কেন কে জানে, আমার কাজের রেকর্ড তো ভালো…”

-“তোদের কোম্পানীর টার্নওভার কত? প্রফিট? কত লোক কাজ করে?”

যেটুকু জানে শুভ্র বলল।

-“শোন, কেস ভালো না। ছেঁটে যেতে পারিস।”

-“তাহলে?”

-“মনে কর তোরা সব হরিণ, বাঘ তাড়া করেছে। কী করবি?”

-“ছুটব। বাঘের থেকে জোরে ছুটতে হবে…”

-“ভুল। হরিণদের ভেতর জোরে ছুটতে হবে, পিছিয়ে থাকাদের বাঘ খাবে… অথবা  এঁকেবঁকে ছুটতে হবে… অথবা নিজেকেই বাঘ হতে হবে…”

-“বুঝিয়ে বলো”।

-“কাজ মন দিয়ে করে যা, কিন্তু ডেটা-অ্যানালিসিস অথবা আর্টিফিশিয়াল  ইন্টালিজেন্সের কোর্স একটা করে নে চাকরি করতে করতে। যা আজকে কেটে পড়, এক্ষুণি দুজন ক্লায়েণ্টের আসার কথা।”

যাবার আগে শুভ্র কাঁদোকাঁদো গলায় বলল, “কী অন্যায় বলো দেখি, এত খাটি, কাজও তো সব করে দিচ্ছি, বলা-নেই-কওয়া-নেই চাকরি খেয়ে নেবে?”

 

শুভ্র অবশ্য নিশানদার কথামতো অনেক পরিশ্রম করে কোর্স করেছিলো চাকরির মধ্যেই। তারপর যখন চাকরি থেকে বিদায়ের তিন মাসের নোটিস পেলো তখন নিজে একটা ব্যবসা শুরু করল, স্টার্ট-আপ যাকে বলে। বুদ্ধি আছে, খাটতে পারে,  তার ওপর নতুন লাইন শিখেছে – সব মিলিয়ে ওর ব্যাবসা লেগে গেল। কাজের বরাত পেতে লাগলো, শুভ্রকে লোক নিতে হলো। ব্যবসা বাড়তে লাগলো। এতটা যে বাড়বে তা শুভ্র কোনোদিন ভাবতেও পারেনি।

সময় বয়ে যায়, দিন পাল্টায়। শুভ্র এখন তার নিজের কোম্পানীর এম-ডি এবং সর্বেসর্বা। শুভ্রর ছেলে ব্যাঙ্গালুরুতে বিরাট দামী বোর্ডিং স্কুলে পড়ে। বৌ সারাদিন ব্যাস্ত – ক্লাব, এন-জি-ও, মহিলাসমিতি, পার্টি।

আজ বছর সাতেক বাদে সেইরকমই এক সন্ধেবেলায় শুভ্র নিশানের কাছে এসেছে। সময় নেওয়াই ছিল। শুভ্রর কালো জাগুয়ার গাড়িটা নিশানদার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে।

নিশানদা উঠে দাঁড়ালো, “আরে আয় আয়! তা দেরি করলি কেন? স্কচ চলবে তো রে?”

-“তা দাও। তবে আজকে বড়ো তাড়া। যাক গে, কাজের কথাটা বলে নিই আগে।“

নিশানদা কৌতুহলি চোখে তাকালো, “বল!”

-“আমার কোম্পানীতে এখন দুশো-বিয়াল্লিশ জন আছে। বড্ড বেশি মনে হচ্ছে। একশ পঞ্চাশ-ষাটে নামিয়ে আনবো। ও একটু চাপ দিলে কাজ ঠিকই হয়ে যাবে। বুঝতেই তো পারছো প্রফিটটা বাড়ানো যাবে। তুমি আমাকে বুদ্ধি দাও তো –শান্তিপূর্ণভাবে কী করে লোক ছাঁটাই করা যায়? এই ধর মাস ছয়েকের ভেতর   আশি-নব্বইটা লোককে বাদ দেবো ঠিক করেছি…”

 

 

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন