কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০

কাজল সেন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৯


দাদাগিরি

তাতুর কথায় কারও কিছু যায় আসে না। তাতু এমন সব কথা মাঝে মাঝেই বলে থাকে। আমরা কোনো আমলই দিই না! এই তো বছর খানেক আগে বিস্তর ভাবনা চিন্তা করে বলেছিল, তিনকোটি আলোকবর্ষ দূর থেকে যে খসে পড়া নক্ষত্রটি দুরন্ত গতিতে ছুটে আসছে পৃথিবীর দিকে, আগামী তিন বছরের মধ্যে তা প্রবেশ করবে আমাদের সৌরমন্ডলে এবং তার ঠিক তিনবছর পরেই আছড়ে  পড়বে পৃথিবীতে এবং আমাদের সাধের পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। না, তাতুর কথা মতো তা ঘটতে এখনও দু’বছর দেরি আছে। পৃথিবী এখনো বেঁচে আছে, আর  আমরাও বেঁচে আছি। এরকমই আরেকবার বিস্তর নেট ঘাঁটাঘাঁটি করে বলল, দেখিস শুধুমাত্র সৌরভের দাদাগিরিটাই থাকবে, আমেরিকার দাদাগিরি একদিন ভাঁড়ে যাবে। না, তাতুর এই কথাটাও আমরা একেবারেই পাত্তা দিইনি। সৌরভের দাদাগিরি চলছে চলুক, কিন্তু আমেরিকার দাদাগিরিও চলছে, চলবে। অন্তত আমাদের দেশের ওপর দাদাগিরিটা যে সে চালিয়েই যাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

তা সে যাইহোক, তাতু যেহেতু আমাদের খুব ভালো বন্ধু, সে আমরা তার কথাকে গুরুত্ব দিই বা না দিই, তাতুর কথা শুনতে আমাদের খারাপ লাগে না। কেননা, মাঝে মধ্যে এমন দু’একটা কথা বলে ফেলে যা আমরা ফেলে দিতেও পারি না। যেমন কিছুদিন আগেই কী ভেবে বলেছিল, আসলে কী জানিস, যে যতই মনে করুক না কেন যে, সততার আজও মূল্য আছে, প্রতিভার মর্যাদা আছে, সবই ফেক কথা। ফালতু সান্ত্বনা। না, তাতুর একথাটা আদৌ কোনো নতুন কথা নয়। আমরা সবই জানি এবং বুঝি। তবু যখন বলিউডে সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহননের দুঃসংবাদ আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়, তখন মনে হয়, ঠিকই তো, তাতু তো এইকথাই বলেছিল!

এখন লকডাউন উঠে গেছে। দোকানপাট খুলে গেছে। অটো-বাস চলতে শুরু করেছে। একে একে বিভিন্ন অফিসের তালা খুলে ফেলা হচ্ছে। মনে হতেই পারে, আমরা এখন নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত। করোনা ভাইরাস দেশত্যাগ করেছে। খুব  তাড়াতাড়ি পৃথিবীও ত্যাগ করবে। বিশ্বভ্রমণ শেষ করে অন্য কোনো গ্রহে পাড়ি দেবে। তাতু তখনই বলেছিল, লকডাউন তো যার ঘরে খাবার আছে তার জন্য।  ঘরে যার খাবার নেই তার আবার কিসের লকডাউন? লকডাউন থাকলে খেতে না পেয়ে মরবে আর লকডাউন উঠে গেলে ভাইরাসে মরবে। মরতে তো তাদের হবেই! মরার জন্যই তো জন্মেছে!  

না তাতু, তুই এতটা বোকা ভাবিস না আমাদের! আমরাও অল্পবিস্তর জানি,  বুঝি। তবে কি জানিস, তোর মতো আমরা ভাট বকি না। ভাট বকতে গিয়ে যদি সত্যি কথাটা বেরিয়ে যায়! আসলে আমরা তো ‘এই বেশ ভালো আছি’। এখনও পর্যন্ত দিব্যি ঘরে বসে অফিসের কাজ করছি, ঠিক সময়মতো খাবার খেয়ে নিচ্ছি, সন্ধ্যে হলেই পানীয় নিয়ে বসছি আর টিভিতে মৃত্যুর পরিসংখ্যান দেখছি। ভাইরাসের দাদাগিরি।

সেদিন কাজের মাসী এসেছিল ঘরের কাজ করার জন্য। সরাসরি না বলে দিয়েছি। কেউ রিস্ক নেয়? তারপর যদি ভাইরাস ঘরে অনুপ্রবেশ করে! তখন?

 


3 কমেন্টস্: