কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০

বহতা অংশুমালী

 

সমকালীন ছোটগল্প


বো...ম


থেরাপিস্টকে বলছিল সে:

শরতের মেঘের মতো কভু হাসি কভু জল মেঘ রোদ রোদ মেঘ প্রেমিকা ভালো লাগে। একেক রাতের একেক প্রেমিকা। একেক দিনেরও হতে পারে। বাগানে মাটি খোঁড়া মালী প্রেমিকা। এক বিশেষ ঘামের খুশবাই থাকে যেন। এফ্রোডিজিয়াক। কামনাকর। এমনিই বাগানে ইতস্ততঃ ঘুরতে ঘুরতে পিছন থেকে ঘাড়ের দিকে ঘ্যাঁক ক'রে কামড়ে দেবে। টিংচার আয়োডিন দেবে তারপরে। সোফার উপরে বসাবে। ময়লা ঘাগরা একদিকে খুলে দিলে তাই থেকে অর্গানিক আতর আসবে সেই মাণ্টোর গল্পের মতো। আর কী? তারপরে ভালো না লাগলে, স্যাভলন লাগানোর পর, হাতের তেলোয় খানিক হাত ঘষেও ঘোর না লাগলে ছোটুকে বলবে বাড়ি দিয়ে আয়। রুপোর ঝিনঝিনের সঙ্গে।

--ভালো লাগে না কেন?

এমনিই। পর্নের নানান চ্যানেল দ্রুত সার্ফ করতে করতে কারো হাত, কারো পা, কারো কিছু কারো কিছু, সেকেণ্ডের এক দশমাংশের মধ্যে সরালে যে অপরূপ অবয়ব, তাকে ভালো লাগে। অথচ সেকেন্ডের এক দশমাংশের মধ্যে কিচ্ছু করা যায় না। সেটাও ভালো লাগে। হওয়া, না হওয়া, করা, না করা, ওহ ওহ উফ উফ!

--আর কে কে কে?

শহরের বন্ধুতা-সাইট আরো অনেক কিছু যোগান দেয়। ডাক্তার ডাক্তার খেলা যেমন। চশমা এঁটে সাদাটে পোশাকে এক স্লিক তরুণী আসেন। খুব কাঠি কাঠি লম্বা। তারপরে নানান অসুখ। নানান আরোগ্য। নানান আর্তনাদ। নানান উপশম।

--তাই? তারপর?

এখন সেও ভালো লাগে না। আরো আছে। অনেকদিন আগে থেকে একদিন ঠিক ক'রে ভুলে যাওয়া। সেইদিন তারা না বলা, না চেনা, না জানা প্রেমিকা পাঠাবে। সে না বলে এমনিই আসবে। শহরের রাস্তায়। পাশের বাড়ির ছাদে। বুঝে নিতে হবে। না জানা ফাজি ভিডিও গেমের মতো। কিছুই হতে পারে। কিছুই হতে পারে। সেই সুড়সুড়ি।

--সে তো ভালো। সমস্যা কী?

কিছুই না। এক তো লজিস্টিকস। হা হা। আপনি ভাবছেন ওই শর্টস্কার্টের তরুণীটি আপনার। চেষ্টায় থাকছেন। তারপর সে সপাটে চড় মারলো। এবার এটা সত্য চড়? না মিথ্যে? মানে চড়েরও তো অনেক ফারাক। বিডিএসেম আছে।  এবার হয়তো অন্য বাংলো বাড়ির কাজের মেয়ের বেশে সেদিন মেয়ে পাঠানো হয়েছে। আপনি ভাবছেন ইনিই সে। তা মশাই মেয়েটি চড় মেরে খুব কাঁদলো। ভয়ে আর কি। আপনি তখনো দ্বিধান্বিত। একি সেই থরোথরো কপোত স্টাইলের প্রেমিকা? জাপটে ধরতে যাবেন। ভালোবেসেই। পুলিশ টুলিশ কল ক'রে সে একশা কাণ্ড। পিপার স্প্রে তার উপরে। অন্ধ হয়ে হাতড়াচ্ছি। পাশের বাংলোর মিথ্যে মিথ্যে ঝি বললে, প্রেকেমন প্রেকেমন খেলায় আজকে আমি ছিলাম। নিয়ে গিয়ে চোখ ধোওয়ালো। মুড অফ। এদিকে বিরাট বিল।

--প্রেকেমনটা কী?

ওই অগমেণ্টেড রিয়ালিটির প্রেম প্রেম গেইম। পোকেমনের প্রেম ভার্শন। প্রেকেমন।

--হুম।

থেরাপিস্ট ভাবছেন খানিক। যুবক চিতিয়ে শুয়ে আছে। সুঠাম। চেহারায় অনিন্দ্য। শুধু কিছু অত্যাচারের ব্যাটল স্কার মুখে চোখে ছিটিয়ে থেকে মুখকে আরো অসভ্য সুন্দর ক'রে তুলেছে।

--আপনার সমস্যাটা তাহলে উত্তেজনার অভাব। হাইডোজ উত্তেজনা না হলে ওটি আর সাড়া দেয় না, এই তো? আপনি পরশু আবার আসুন। এতো শারীরিক  নয়। সাইকোসোমাটিক। অসংখ্য সম্ভাবনা। থিতু হতে পারছেন না। প্রবল বোর্ডম।  

এই সময়ে ঘরের ওপাশে দরজা খুলে গেলো। যিনি ঢুকলেন, ধূসর লঙ স্কার্ট পরা, চুল-টুল খানিক উঠে গেছে, আয়ত চোখ, স্থূল কোমর, নাকে সত্যি পাওয়ারের  চশমা। অভ্যস্ত ভঙ্গীতে থেরাপিস্টের ঘাড়ে হাত রেখে বললেন, “চলো!” থেরাপিস্ট হাতে আলগা চুমো খেয়ে বললেন, “এই যাই”। মহিলা চলে গেলেন।

যুবক কী জানি কিসে মথিত হলো। যেন গভীর সমুদ্রের ঢেউহীন জায়গায় স্থির  শান্ত নৌকো, সুদৃঢ় কম্পাস, চেনা তীর, একস্পেক্টেড টাইম অফ এরাইভাল সুনিশ্চিত।

যুবক জিগেস করলেন, আপনাদের কেমিস্ট্রি তো দারুণ! তার মূলে কী?

--সুঘন বোর্ডম।

মেঘমন্দ্র দিন ধরে স্থূলকায়া প্রেমিকা আসেন

নানান কাজের কথা তাঁর ছেনি তাতে

পায়ের শ্যাওলা তুলে দিতে দিতে যে ভালোবাসেন

সেই অভ্যেস যার দিনে রাতে সুপাচ্য তার

বসার নিভৃত ঘরে যেন হয় সুযোগ যাওয়ার

 

গল্পের নাম ছিল বোর্ডম! মশাইরা!

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন