কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৯ |
দাহ জাতক
দীর্ঘদিন চাকরি না পেলে একজন যুবক আস্তে
আস্তে গাছের মতো হয়ে যায়। সহনশীল। তার গা থেকে কেউ পাতা ছিঁড়ে নেয়, কেউ ডাল ভেঙে নিলেও
নির্বিকার হয়ে থাকা ছাড়া তার আর কোন উপায় নেই। আর যখন কেউ তাকে কাটতে আসে, রেললাইনের
নীচে গলা বাড়িয়ে দেওয়ার মতো সেও ঝুঁকে যায়। জাতক এমনই একজন বেকার। কাল সন্ধ্যায় পাশের
বাড়ির মহিম জ্যেঠুকে মরতে দেখে হঠাৎ তার সমস্ত
টেনশন দূর হয়ে গেছে। প্রচন্ড পারিবারিক অশান্তিতে ভুগছিলেন তিনি। মরে মুক্তি পেলেন।
শ্মশান থেকে দাহ সবই উপভোগ করল জাতক। এই প্রথম তার শ্মশানযাত্রী হওয়ার অভিজ্ঞতা।
তার মন থেকে সব ভার নেমে গেল। যেদিন
থেকে জীবনে সহ্যের অতিরিক্ত অশান্তি হবে, মরে গেলেই হলো।
তারপর থেকে ঘরে মুখ গুঁজে দিনের পর দিন
চাকরির ব্যর্থ চেষ্টা করতে থাকা জাতক সব ছেড়ে পরোপকারে মন দিল। হাসপাতাল থেকে কোর্ট,
থানা, শ্মশান, সর্বত্র পাড়ার মানুষের সেবায় হাজির। সেদিন সন্ধ্যায় নিতুদা ডেকে পাঁচ
হাজার টাকা জোর করে হাতে গুঁজে দিয়ে বলল, আমাদের পার্টির সঙ্গে কাজ কর প্লিজ। অনেক
ভেবে চিন্তে জাতক টাকা নিল, হাতখরচ দরকার। এখানে ওখানে মানুষের পাশে থাকা কি আর তেমন
শক্ত কাজ? কিন্তু জাতককে একটা ইলেকশনে দাঁড়াতে হলো, ওয়ার্ড মেম্বার, তারপর তার পরের
পর্যায়, আস্তে আস্তে কেমন করে যেন সে হয়ে গেলো একজন এম এল এ। ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স এখন ঈর্ষণীয়। বেকার তকমা কবেই ঝরে গেছে গা থেকে। জাতক
আজকাল নিজের কিছু কিছু টাকা থেকে পোড়া গন্ধ পায়, ভয়ের কিছু নয়, জাতক খুব ভালো করে জানে, এটা তারই লাশ থেকে আসছে। শ্মশানে জ্বলতে দেওয়া আছে, জ্বলছে, তাই সে খুব নিশ্চিন্ত থাকতে পারে সবসময়।
চমৎকার!
উত্তরমুছুন