কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০

কল্পর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়

 

প্রেমের কবিতা




 

এই একটা জায়গায় কেমন

হিসেব মিলছে বলে মনে হয়

তুমি কাছে আছো বলে

কাঠবেড়ালির মতো শরীরের অংশ লাফ দেয়  --

বিশ্বাস কোরো না, বুঝে নাও,

এই একটা জায়গায় আমার

বেঁচে থাকা জানলা খোলার মতো স্বাভাবিক

সপাট জানলা।

প্রেম নিয়ে, প্রেমের অনুভূতি নিয়ে কত না বর্ণময় মিথ্যে লেখেন কবিরা। উদ্দেশ্য একটাই - ম্যাট্রিকুলেট পাঠক সম্পাদকের হাততালি কুড়নো। অথচ ধরে ধরে সেই সব কবিতা লেখার হাত যখন থেমে যায়, থেমে যায় সমস্ত ফাঁকি, থাকে শুধু গাভীর মতন নীরবতা, তখন ঐ উপরের লেখা কবিতাটি কিছু কি সিগন্যাল করে আমাদের? কোনো মৃদু স্বর শোনা যায়, অমোঘের মতো? অবারিত বুকের ভেতর থেকে বুকের বাইরে আলো ধরে?

একজন কবির নিজস্ব ফ্রেম অফ রেফারেন্স -- রিয়ালিটি দেখার প্রশ্নে -- শুধু কবিতা কেন, গল্প, এমন কি প্রবন্ধেও যা থাকা উচিৎ, না হলে তার কোনো মূল্য নেই।

তাহলে এই রিয়ালিটি কি? না, ‘শুধু পরিণামহীন ভালোবাসা, যা আমাদের সমস্ত জীবন ধরে ছায়া ফেলে ছাতিমের মতো’।

স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকা, স্ত্রী-পুরুষ পরস্পরকে তো কম মিথ্যে তো বলে না সারাজীবনে! তাহলে কোথায় আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক (যা কিনা জানলা খোলার মতো মর্জি নির্ভর বা আত্মকেন্দ্রিক এবং সপাট শব্দটির মতো ধর্ষকামী) সত্যের ওপর দাঁড়িয়ে? না, যেখানে আমার শরীরের অংশ কাঠবেড়ালির মতো লাফ দেয়, তুমি কাছে আছো বলে। পাঠক লক্ষ্য করুন, সমস্ত শরীর নয়,  শরীরের অংশ যা কিনা কাঠবিড়ালির মতোই লাফ দেয় - সপাট জানলা খোলার মতোই স্বাভাবিক এই লাফ, এই লাফ আত্মকেন্দ্রিক (সঙ্গিনীর তৃপ্তির দিকে লক্ষ্য রেখে লিঙ্গচালনা কি কোন প্রকৃত শিল্পীর পক্ষে সম্ভব? হয়তো হবেও বা!)। আসলে, একটি মেয়ের বদলে অন্য কোন মেয়ের কাছে গেলে কিছুই হয় না তেমন। কয়েকটা মুহূর্ত আমাদের ভালো লাগে, বড়োজোর কয়েকটা প্রহর। তারপর পাতা ঘুরে ঘুরে ঝরে যাবে উঠোনের ঘাসের ওপর। তারপর বৃষ্টি থেমে গেলে, পার্কে গিয়ে বসবে প্রবীনের মতো, একদিন শাশ্বত মৃত্যু এসে এইসব  এলোমেলো খেলা ভেঙে দেবে জেনেও।

এইসব কথা আপনাকে যুক্তির কাঠামো দিয়ে বিশ্বাস করানো যাবে না, আপনাকে বুঝে নিতে হবে। আসলে এই শরীর সম্পর্কে আমরা বড্ড মিথ্যে কথা বলি। বড্ড লুকোই। গোপন করি। প্রকৃত শিল্প এই গোপনীয়তাকে বেআব্রু করে। কেননা শরীর শরীর সম্পর্কে মিথ্যে বলে না। যৌন সম্পর্কের মধ্যে একফোঁটা মিথ্যে থাকে না। কোনো নরম ব্যাপার থাকে না কোথাও। হয়তো রাগ থাকে, হয়তো ঘৃণা থাকে, খুন করার ইচ্ছে হয়। হয়তো খুনই করি। শুধু প্রেমের জায়গা থাকে না। ওই যে বললাম, একফোঁটা মিথ্যে থাকে না, তখন আমি প্রেমের কথাই ভেবেছি। হয়তো সেই কারণেই  প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত কবিতাটির নাম ‘প্রেমের কবিতা’ রেখেছেন!


4 কমেন্টস্:

  1. আপনি এত স্মুথ লেখা লেখেন। আরো লেখার পরার আশায় রইলাম। আমি ভেবেছিলাম লেখাটা আরো বাড়বে। প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত র নাম এনেছেন, তাই লেখাটার গায়েও কোথাও অন্যরকম ভাবে আলো পড়েছে।

    উত্তরমুছুন
  2. amaro tai mone hoy, lekha ta barte parto
    Barun debraj

    উত্তরমুছুন
  3. কিভাবে, কত অনায়াসে ভঙ্গিমায় সাধারণ, নিতান্তই সাধারণ আলাপচারিতাই কবিতা হয়ে উঠতে পারে তারই প্রকৃষ্ট প্রমাণ রেখেছেন প্রণবেন্দু। আসলে এ কবিতায় দুটি উল্লম্ফন বিন্দু আছে। দু'টি বাক্য। একটি হলো " তুমি কাছে আছো বলে/ কাঠবেরালির মত শরীরের অংশ লাফ দেয়" আর দ্বিতীয়টি হলো "বেঁচে থাকা জানলা খোলার মতো স্বাভাবিক/ সপাট জানলা"। কল্পর্ষিকে ধন্যবাদ তার প্রাঞ্জল ভাষায় এই আলোচনার জন্য।

    উত্তরমুছুন
  4. আসলে এই শরীর সম্পর্কে আমরা বড্ড মিথ্যে কথা বলি- অনেকগুলো সত্যিকথা পড়লাম। এমন সব কথা মনকে শান্ত করে। এখন যে অবস্থা চলেছে বাজারে অশান্তি ছাড়া কিছুই নেই। সেখানে এই লেখার পাশে কিছুটা বসা যায় - SB

    উত্তরমুছুন