কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০

যশোধরা রায়চৌধুরী

 

সমকালীন ছোটগল্প


এ টি এম

খসখসে, খরখরে আওয়াজ হতে রু পেছনে তাকাল।

ঘষা কাগজের মত গলায় ডাকছিল ওকে টিংগো।

অ্যাই রু! এই শোন এদিকে!  

কেউ যাতে না শোনে, এতটাই চাপা গলা। গা শিরশির করে। কান সরসর করে। যেন হাঁড়ির তলায় ভাত চাঁচছে মা... খুন্তি দিয়ে।

ভিডিওটা দেখলি? যেটা পাঠালাম?

ওর জানালার পাশে একটা বারান্দা। বারান্দার  রেলিং। ওপাশের ঘরে মা বাবা। তারা যাতে না শুনতে পায়, ওকে চাপা গলায় বাইরে থেকে টিংগো ডাকছে।

ঘর থেকে বারান্দায় এল রু। ঝুঁটি করে চুল মাথার ওপরে তোলা। এমনিতে বয় কাট। হাফপ্যান্ট আর গেঞ্জিতে রোগা শরীর। আরো বেশি বালকের মত।

দেখেছি। ওয়াটস সো গ্রেট অ্যাবাউট ইট?

ইটস রিয়েল।

ওহ! রু চকিতে একবার চারিদিকে তাকায়। মা বাবার ঘরের দিকেও।

তারপর উদাসীন হয়ে যায়।

হুঁ, তুই কী চাস?

যে আমাকে ওটা দিয়েছে, বিপিনকাকু আই মিন। সে টাকা নিয়েছে।

মানে? তুই আমাকে ভিডিও পাঠালি, আমাকে সেজন্য টাকা দিতে হবে?

হান্ড্রেড বাকস। আই পেইড হিম  ফাইভ হান্ড্রেড বাকস। 

ক’জনকে বেচলি? 

দশজনকে।  

টিংগোটা নোংরা ছেলে। ব্যবসা বুদ্ধিও আছে।

রু নির্বিকার মুখে বলল, এ টি এম যেতে হবে। এখন হবে না। এত ইনফেকশন ছড়ায় এ টি এম থেকে।

ইশ। তোর খুব ভয়, না? ভাইরাসের?  

কেন, তোর ভয় নেই?

না তো! ওসব তো আসলে গসিপ। ফালতু। বানানো গল্প। কনস্পিরেসি। পড়িস ন? যাইহোক টাকাটা দিয়ে দিস।  

তোকে গুগল পে করে দিচ্ছি কাল। তবে আর পাঠাস না এসব।

টিংগো হাসে। কেন? ভাল্লাগে না?

না, লাগে না। ঘুরে, ঘরের দিকে ফিরে আসতে আসতে বলে, আর তুই এখানে আসিস না! লকডাউনে বাইরে ঘুরছিস কেন এত? 

টিংগোটা অসহ্য। দাঁত বার করে আছে। রু ঘরে এসে আবার ভিডিওটা প্লে করে দেখতে বসে। বীভৎস, কিন্তু ওটা টানছে ওকে। কাল সারা সন্ধে ওই ভিডিওটা ওকে তাড়া করেছে। ও ভাল ঘুমোতেও পারেনি।

বন্ধুদের সঙ্গে গান শেয়ার কর - টিকটক ভিডিওতে বানিয়ে বানিয়ে, ইনিয়ে  বিনিয়ে প্রেমের গল্প, সিকুয়েন্স, প্রপোজ করার, রিফিউজ করার। সব ঠিক আছে। তাই বলে পর্ণ? হার্ডপর্ন? এখন সেটাও ভাল লেগে যাচ্ছে? কী যা তা হয়ে যাচ্ছে রু!

মা বাবার ঘরের দিকে যেতে যেতে রু ভাবে, আরেকটা আপগ্রেডেড ফোন ওর চাই। বহুদিন ধরে বলছে। পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোক, তবে তো বাবা মাকে চাপ দিতে পারবে রু! ও ভাল করবে পরীক্ষায়, সব জানা ছিল।  

তারপর এসে গেল লকডাউন। লাস্ট পেপার ক্যানসেল হয়ে গেল। এখন গৃহবন্দী। নিজের কী বোর্ডে টুংটাং। নেটফ্লিক্সে সিরিজ দেখা। আর কিচ্ছু তো নেই। বন্ধুদের বাড়ি যাওয়া বারণ, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো বারণ। ওর ভাল বন্ধুরা  সবাই দূরে দূরে। এই টিংগো পাশের বাড়িতেই থাকে। আজকাল খুব পাজি হয়েছে। এসব ফালতু ভিডিও পাঠাচ্ছে।

মানুষের মাথা কেটে নেওয়ার ভিডিও একবার দিয়েছিল। অর্ধেক দেখেই ডিলিট করেছে রু।

মা ঘুমোচ্ছে, দুপুরের ভাতঘুম। খুব ক্লান্ত। সারাদিন ঘর মুছেছে, বাসন মেজেছে। রান্না করেছে। কাজের মাসিরা আসছে না। আসতে দেওয়া হচ্ছে না। বাবা ওয়ার্ক ফ্রম হোম করে ক্লান্ত। বাবাও একটু শুয়েছে।

রু ভাবছিল। লকডাউন খুললে বাবাকে যে কবার চুল কেটে দিয়েছে, সেই কবারের জন্য টাকা চাইবে। চাওয়ার কী দরকার! বাবার পার্স তো আছে  এখানেই। ও সন্তর্পণে ঘরে ঢুকে বাবার পার্স থেকে পাঁচশো বের করে নিল। বাবা মা তো ওর এ টি এম। বাইরে যাওয়ার দরকারও নেই।


1 কমেন্টস্: