কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০

পারমিতা চক্রবর্ত্তী

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৯


পালঙ্ক

বিয়ে হয়ে আসার পর নিরুপমার চোখ যায় ঘরের  পাশের পালঙ্কের দিকে।  অপরূপ দেখতে। চারিদিকে ছোট ছোট কাঠের সিঁড়ি। সিঁড়িগুলোর মধ্যে অপরূপ নকশা। পালঙ্কটি সাদা নেট দিয়ে ঘেরা। উপরের অংশটিতে একটা সাদা পরী ঘুরে চলছে অবিরত। আর পালঙ্কটিকে আলোকিত করে আছে। মনের মধ্যে কত প্রশ্ন জাগে নিরুপমার। এই পালঙ্কটি যদি তার হত...

কিন্তু কাকে বলবে সে কথা। বিয়ের কনে। বাড়ি ভর্তি আত্মীয়স্বজন। স্বামীর সাথে বার কয়েক ফোনে কথা হয়েছে। কিন্তু তাকেই বা জানাবে কী করে! বিয়ের সব আচার শেষ করে শাশুড়ি আসেন তার কাছে। নিরুপমা আর স্থির থাকতে পারে না। প্রশ্ন করেই ফেলে-

- মা ওই পালঙ্কটি কার? খুব সুন্দর দেখতে। ওটা কেউ ব্যবহার করে না কেন?

চুপ করে থাকেন শাশুড়ি কিছুক্ষণ, তারপর বলেন-

- ওই পালঙ্কটিকে আমি বিয়ে হয়ে আসার পর ওই ভাবেই দেখছি। কেউ তেমন কিছু বলতে পারে না। যতটুকু শুনেছি তার থেকে বলতে পারি, পালঙ্কটি অভিশপ্ত।

বলেই চলে যান তিনি৷

ফুলশয্যার রাতে নিরুপমা ঠিক করে ওই পালঙ্কে শোবে। স্বামী ঘরে ঢুকতেই মনের কথা প্রকাশ করে। স্বামী কিছুতেই রাজী হয় না। কিন্তু বিয়ের রাতে নতুন বউয়ের দাবী ফেলবেই বা কীভাবে? তার উপর সুন্দরী স্ত্রী। অবশেষে রাজী হয়ে যায়। নিরুপমারা আলুথালু কাপড় জড়িয়ে গভীর রাতে শুতে যায় সেই পালঙ্কে।  ঘরে ঢোকার পর থেকেই নিরুপমার স্বামী সুদর্শনের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তবু সে বুঝতে দেয় না।

সুদর্শন নিরুপমার চুলে বিলি কেটে দেয়। ভালোলাগায় চোখ বন্ধ করে থাকে নিরুপমা। খানিক পরে চোখ খুলতেই দেখে চুপ করে তার বুকের উপর শুয়ে  আছে সুদর্শন। নিরুপমা ডাকতেই মুখ থেকে দমকা নিঃশ্বাস ফেলেই চোখ স্থির হয়ে যায় সুদর্শনের। নিরুপমার সব রঙ ক্রমেই ধূসর হয়ে যায়... 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন