কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩

অনিরুদ্ধ সুব্রত

 

কবিতার কালিমাটি ১৩১


অশোধিত কালো

 

কবি-হৃদয়ের খনি-গর্ভে, গমন করোনি কখনও

করেও না কেউ, কোনো কালে, কয়লা উত্তোলনে

অথবা আকরিকের আঁকাবাঁকা ভাস্কর্য-আকর্ষে

স্যাঁতসেতে জল চোঁয়ানো, প্রায় প্রত্ন প্রচ্ছন্ন পথে।

 

দূর থেকে কী দেখো রাণী, কালো রানীগঞ্জ-খনি

হ্যাঁ, প্রায় তেমনই, বোকাদের এ লৌহ-বোকারো

দৃষ্টিতে যতটাই দূরদর্শী, দূর... ধূ ধূ, ঘোলা শার্শি

বাতাসে হু হু কার্বন, নিঃশ্বাসে রিরি সালফারও।

 

সারাদিন রিনরিনে মালভূমে বালুকা ও সিলিকন

সারারাত শিকলের ঘর্ঘর, ট্রলি ভরা চাঙড় খনন

আলো কম,বড় কমই, প্রায়ান্ধকার, জীবনের মমি

কবিতা-আগুনে উৎসাহ, ধাতব মনের গূঢ়তর খনি।

 

সকলেই অপটু,কেউ নামে না,তুমিও পা ফেলোনি

সেখানেই সক্রিয় গাইতির, খুঁড়ে চলা ভগ্ন ও খণ্ডে

বিরক্ত বেলচার ক্ষয়ে যাওয়া মুখ,অতিষ্ঠ পল,দণ্ডে

খনিমুখ নির্বিকার, সুড়ঙ্গে কী অত্যাচার, শোনোনি।

 

সুখী সুখী অক্সিজেন, রোজ তার, সে তীব্র হাহাকার

প্রাণবায়ু, পরমায়ু দ্বন্দ্ব, প্রত্যহ, মুখোমুখি, পরস্পর

কবি-হৃদয়ের খনি-সমাচার, বড় একঘেয়ে, প্রান্তিক

কে আর খেয়াল করেছে কবে, পাতালের দশদিক।

 

ধোঁয়া-কল বন্ধ

 

চিমনি বন্ধ হয়ে যাওয়া

কারখানা-শ্রমিকের পরিবারে ওঠা

ঢেউয়ের মতো এলোমেলো

আজকের ফুসফুস, অনিহ, উদ্বিগ্ন, সারাদিন উপোস

জ্বলেনি-- গুল গুঁজে গুঁজে কেরোসিনে ধরানো উনুন

আসলে কতৃপক্ষ চাইছে, কারখানা বন্ধ করে,

চালু করবে আরোগ্য নিকেতন

ফুসফুসের অগণিত কুঠুরিতে তাই কানাঘুষো--

চিরতরে থেমে যাবে কারখানার বাঁশী

বা মধ্যরাতের ঘুমকে তুড়ি-মারা কাশি...

বেকার হয়ে যাওয়া ফুসফুসের

বড্ড উসখুস মুখ তাই

যা দেখে মাথার ভেতর দলবাজি চালাচ্ছে

সর্বহারার ইউনিয়ন

পোস্টারে লিখেছে-- কালো হাত ভেঙে দাও

কেননা হাতটা হাতড়ে আনছে না দেশলাই,

কফের মিছিল লাগাচ্ছে কালি ধনতান্ত্রিক

মুখের দেঁতো ছবিতে--

কারণ ঠোঁটের উপর আজ ভয়ঙ্কর রাগ

ওগরানো ধোঁয়ার উৎসাহ চেপে ধরে টানাচ্ছে না

শ্রমজীবী ফুসফুসের ফোকোরে গাঢ় টানে

নিকোটিন-বাণিজ্যের এ এক ধ্বংস সংকেত।

 

শতাব্দী পেরিয়ে

 

সমীক্ষকেরা মোটামুটি প্রায় একমত--

মাথা গুলো সেভাবে ঠায়, ভেজে না আর এখন

প্রত্যেকেই পেরেছে প্রায় পৌঁছতে

নিজেকে টেনে নিতে, কোনও ছাতার তলায়।

 

ছাতা গুলোর আধুনিকিকরণ-- দেখার মতন

বিস্তৃত, নানাবিধ, ফেস্টুন-রঙিন, রহস্যময়

কেবলমাত্র, মধ্যবর্তী দণ্ডটি যত দুর্বল--

হঠাৎ করেই খুলে ছিটকে যেতে পারে স্প্রিং।

 

ছাউনির বৃত্ত-ব্যাসের ছায়া-গর্ভে

ডুবে থাকা মহার্ঘ, সারি সারি কালো কালো

মুখ মাথা প্রায়-- দেখতে একই রকম

হেঁটে যায়, বৃষ্টি রোদ দুই-ই বাঁচায়, তারা

জানে শূন্য থেকে তাপ, আসে শূন্য থেকে জল

শতাব্দী পেরিয়ে-- হয় শ্রাবণ, না হয় নির্বাচন।

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন