কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২১ |
হারচুরি
ভোরবেলায় রঞ্জনা চিৎকার চেঁচামিচি করে ভাঙালো সবার খুব। সে একেবারে চিল চিৎকার। দিনটা ছিল রোববার। সবারই ছুটির দিনের মেজাজ। অন্যান্য দিনের মতো তাড়াতাড়ি ওঠার কোনো প্রয়োজন নেই। রঞ্জনারও তখন ঘুমিয়ে থাকারই কথা। কিন্তু প্রকৃতির ডাকে চোখে ঘুম নিয়েই তাকে বাথরুমে যেতে হয়েছিল। তারপর হাল্কা হয়েই তার মনে পড়ে গেল, গতকাল রাতে বিয়েবাড়ি থেকে ফিরে চোখ-মুখ ধুতে গিয়ে গলার ভারি হারটা বাথরুমের তাকে রেখেছিল, কিন্তু ভুলে গেছিল ঘরে নিয়ে যেতে। কথাটা মনে পড়তেই হাত বাড়াল তাকে, কিন্তু কী আশ্চর্য, হারটা তো নেই! তাহলে গেল কোথায়? রঞ্জনা বাথরুম থেকেই চিল চিৎকার শুরু করল।
রঞ্জনা এই বাড়ির মেজবৌ। বড়বৌ সেজবৌও আছে। তবে বাড়ির ছোটছেলে এখনও অবিবাহিত, তাই ছোটবৌ নেই। ছোটবৌ না থাকলেও ছোট এক অবিবাহিত ননদ আছে। আর আছেন শ্বশুর-শাশুড়ি। রঞ্জনার চিৎকারে সবারই ঘুম ভেঙে গেল। পড়িমরি করে সবাই ছুটে এলো মেজবৌ রঞ্জনার কোনো বিপদ ঘটেছে মনে করে। হ্যাঁ, বিপদ তো ঘটেছে, কিন্তু সেই বিপদের জন্য রঞ্জনা হাউমাউ কেঁদে সবাইকে দায়ি করতে শুরু করল। তার অভিযোগ এই বাড়িতে চোর ঢোকার তো কোনো সুযোগ নেই। তাহলে হারটা গেল কোথায়? ঘরেরই কেউ তাহলে তার হারটা সরিয়েছে বা পাতি কথায় চুরি করেছে!
রঞ্জনার কথায় শ্বশুর-শাশুড়ি, বড়ভাসুর জয়গোপাল ও বড়বৌ অনামিকা, স্বামী লোকনাথ, সেজদেওর চন্দ্রদেব ও সেজবৌ মণিমালা, ছোটদেওর রমানাথ আর ছোটননদ চন্দ্রিকা সবাই হকচকিয়ে গেল। না, অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, রাতে শোবার আগে সবাই জলত্যাগ করতে বাথরুমে গেছিল। শ্বশুরের তো আবার প্রস্টেটের গোলমাল, তাকে দিনে-রাতে বারবারই বাথরুমে ছুটতে হয়। ইদানীং বড়ভাসুর জয়গোপালেরও রক্তে শর্করা বেড়েছে। তাকেও অনেকবার বাথরুমে যেতেই হয়, রাতেও বেশ কয়েকবার। সেজবৌ মণিমালার আবার সব ব্যাপারেই টেনশন হয় আর তাই তলপেটে জলের চাপ ধরে রাখতে পারে না। সুতরাং রঞ্জনার সন্দেহের তালিকা থেকে কেউ বাদ যেতে পারে না! ছোটদেওর রমানাথ এখনও বেকার, তার হাতখরচ তো দাদারাই জোটায়। আবার ছোটননদ চন্দ্রিকার দুচোখ তো খুবই মারাত্মক, বৌদিদের দামি দামি পোশাক ও ঝলমলে গয়নার দিকে কেমন জুলুজুলু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে!
রঞ্জনা সমানেই চিৎকার করে চলেছে, তার বিয়েতে অনেক খরচ করে মা-বাবা যৌতুকে দিয়েছিল। সেই অমূল্য হার চুরি হয়ে গেল বাথরুম থেকে! বাইরে থেকে তো কেউ আর চুরি করতে আসেনি! তাহলে চুরি করল কে? নিশ্চয়ই ঘরের লোক! এখন বল, কে চুরি করেছ? না বললে আমি কিন্তু পুলিশ ডাকব! সবাইকে সার্চ করা হবে। যে ধরা পড়বে, তাকে কিন্তু কিছুতেই ছেড়ে দেব না। একদম জেলে পাঠাব। তখন আর আমাকে কেউ দোষ দিতে পারবে না। তাই বলছি, ভালোয় ভালোয় এখনই আমার হার ফিরিয়ে দাও। তাতে ঘরেতে সম্মানের বারোটা বাজলেও, বাইরের লোক কেউ জানতে পারবে না কিছু। আর বাইরের লোক জানতে পারলে বুঝতেই পারছ, সবার কাছে চোরের শিরোপা পাবে। কথাটা ভেবে দেখ!
পারিবারিক গল্পের দারুণ প্লট লেখককে কুর্ণিশ
উত্তরমুছুনগল্পের শেষ টা ঠিক জমল না।
উত্তরমুছুনঅপূর্ব
উত্তরমুছুনএ যেন ক্রমশ প্রকাশ্য গল্পের শুরুটা! ভালো হয়েছে কিন্তু মন ভরলো না।
উত্তরমুছুন