কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩

শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী

 

ধারাবাহিক উপন্যাস


হে নেপথ্যচারিণী




(নয়)

 

অনবস্থিততত্ত্ব

কখন সকাল হলো কে জানে। আমি আর আশুদা সারারাত লেক থানায় বসে রইলাম অত্রির সঙ্গে। চারপাশে সুতীব্র যন্ত্রণা আর একাকীত্ব। কেউ ভালো নেই। এক অদ্ভুত থমথমে ভাব। যেন এখনই বিস্ফোরণ হবে। অথচ আমরা প্রত্যেকেই যেন সেই বিস্ফোরণের আয়োজন করে যে যার মতো বাঁচতে চাইছি। অরুণ মিত্র কবিতায় যেমনটি বলেছিলেন। "আমি তাকে রেখেছি নীলকণ্ঠ পালকের পাশে কদম্বরেণুর উড়ানের মধ্যে। রেখেছি যেখানে হাসির প্রস্রবণ আর তাকে ছাপিয়ে কখনও বা যন্ত্রণার ঢেউ। এই সম্বল নিয়ে ঘুরছে আমার পৃথিবী। "এক পয়ত্রিশ বছর বর্ষীয়া মণিপুরী নার্সের হঠাৎ হত্যার অপরাধী হিসেবে যে অত্রিকে জেলবন্দি করেছে পুলিশ, তার চোখেমুখে ভয়। তবে কি অজ্ঞাত কোনও সত্তা জেগে উঠেছিল তার ভিতর? অসম্ভব তো নয়! মানুষের মনের অভ্যন্তর যে বড় রহস্যময়। আশুদার সঙ্গে যতো থাকছি, ততোই যেন নতুন করে আবিষ্কার করছি। সকাল হতে না হতেই থানার ওসি স্টিফেন ঘোষ আমাদের জানালেন অত্রির স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়েছে।

-আর কিছুক্ষণের ভিতরেই উনি এসে পড়বেন। চলুন। চা খেয়ে নেওয়া যাক।

থানার আশপাশে শহর আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠছে ধীরেধীরে। খানিকটা এগিয়েই চাদোকান। চা তৈরি করছে একটি বছর পনেরোর ছেলে। চা চুমুক দিতে দিতে আশুদা স্টিফেনকে বলল।

-তথাগত এল না?

-না। আসলে উনি ওই বডিটা নিয়ে মর্গে গেছেন। ওপর থেকে প্রেশার আছে। দ্রুত তদন্ত শেষ করতে হবে। আচ্ছা। আপনারা কি অ্যাকিউজডকে চিনতেন?

-চিনি। ছেলেটি ডাক্তার। তবে ওর কিছু মানসিক অশান্তি আছে।

-কীরকম?

-ওর ঘুমের ভিতর মনে হয়, ওকে কেউ একটা গলা টিপে মারতে আসছে। তার প্রতিক্রিয়াতে ও অদ্ভুত সব কাজ করে ফেলে।

-আচ্ছা। আপনি তো মনোচিকিৎসক। আবার গোয়েন্দাও। ফেসবুকে আপনাকে নিয়ে লেখাগুলো পড়লাম। কী মনে হয়? এই খুন ওর পক্ষে করা সম্ভব?

-দেখা যাক।

থানায় ফিরতে সুচন্দ্রাকে অবিন্যস্তভাবে বাইরের বেঞ্চে বসে থাকতে দেখা গেল। আমাদের দেখেই সে দৌড়ে এসে আশুদার পা ধরে বলল, "ওকে ছেড়ে দিতে বলুন ওদের। ও নির্দোষ।"

আশুদা ওকে সামলে নিতে বলে বলল, "মন শক্ত করো। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি ব্যাপারটা দেখছি।"

থানায় সুচন্দ্রাকে একলা রেখে যাবার পক্ষপাতী আশুদা নয়। তাই কাজকর্ম মিটিয়ে আশুদা আর আমি ঠিক করলাম ওকে চালতাবাগানের বাড়িতে রেখে আসব। যাবার সময় থানার ওসি স্টিফেন ঘোষকে ডেকে আশুদা বলল, "একটু দেখুন তো, রাস্তার সিসিটিডি ফুটেজগুলো পাওয়া যায় কিনা। মানে ঝড়ের পর অক্ষত যেগুলো আর কি। আমাকে জানাবেন।"

বোধহয় 'ত্রিনেত্র তদন্তে' আশুদা যে অংশগ্রহণ করবে, একথা তথাগত অধিকারী ইতিমধ্যেই থানাকে জানিয়ে রেখেছে। ফলত স্টিফেন রাজি হয়ে গেল।

সারাটা গাড়ি সুচন্দ্রা মাথা নীচু করে চোখ মুছতে লাগল। আশুদা বলল,"চিন্তা করো না। অত্রি নির্দোষ। আজ সন্ধ্যাবেলায় ওকে ফিরিয়ে নিয়ে যাব। কথা দিলাম।" সুচন্দ্রা বোধহয় খানিকটা আশ্বস্ত হলো আশুদার কথায়। কে জানে! চালতাবাগানে ওকে ঘরে পৌছে আমরা আবার দক্ষিণ কলকাতার দিকে পাড়ি দিলাম। বেশ বুঝেছি। আজও আমার কলেজ যাওয়া হবে না।আমাদের গন্তব্য মর্গের দিকে। এই মর্গ আমার জীবনের একটি অঙ্গ হয়ে উঠেছে। মৃতমানুষেরা ব্যবচ্ছেদের পর যেন তাদের শরীরের রক্তমাংসে লুকিয়ে রাখা সত্যগুলো একে একে মেলে ধরতে চায়। অত্রি কি সত্যিই এই খুনটা করল? করলে একটা সমস্যা থেকে যাচ্ছে। মোটিভ। আশুদাকে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলাম সে কথা। আশুদা বলল,"অত্রি ঘুমের মধ্যে হাঁটত ভুলিস না কিন্তু। ঘুমের ভিতর মানুষের অবচেতন জেগে ওঠে। সেই অবচেতনের অচেনা পথ আমরা কেইই বা দেখেছি!"

মর্গে তথাগত অধিকারী ময়নাতদন্তর রিপোর্ট তৈরি করছিল। আমাদের আসতে দেখে সপ্রতিভ হেসে বলল, "আমি ভাবছিলাম আপনারা আসবেন।থ্যাঙ্কস।" আশুদা বলল।

-একবার বডিটা দেখতে চাই।

-চলুন।

হতভাগ্য মহিলাটির সারা দেহে কোনও আঘাত বা ধ্বস্তাধ্বস্তির চিহ্ন নেই। শুধু দুই চোখের মধ্যিখানে একটি গভীর গর্ত। ঘটনার আকস্মিকতায় মেয়েটির মুখে চোখে বিস্ময় কাটিয়ে যন্ত্রণা ফুটে উঠতে পারেনি। আঘাতটি দ্রুত ও অব্যর্থভাবেই হানা হয়েছে। করোটি খৃলে মস্তিষ্ক পরীক্ষা করেছেন ময়নাতদন্তর ডাক্তার সতীনাথ মিস্ত্রি। আমার থেকে বছর দুই সিনিয়র। সে এসে চিনতে পারল আমাকে।আরজিকর ব্যাচ। আমি জিজ্ঞেস করলাম।

-সতীনাথদা, মাথার ভিতর কিছু পেলে?

-আঘাতের জন্য হেমারেজ। আর ঘিলুর খানিকটা অংশ মিসিং।

আশুদা গভীর চিন্তায় ডুবে ছিল। হঠাৎ বলল।

-পিনিয়াল বডি।

-কিছু বললেন?

-ভিক্টিমের ব্রেনের ভিতর পিনিয়াল বডি মিসিং।

সতীনাথদা মাথা নেড়ে বলল, "ঠিক তাই।"

-আর কোনও ইনজ্যুরি চিহ্ন।

সতীনাথদা ঘাড় নেড়ে বলল, "নেই।"

-ধন্যবাদ। চল অর্ক। এখানে আপাতত আমাদের কাজ শেষ।

মর্গ থেকে বেরিয়ে আসতেই তথাগত জিজ্ঞেস করল।

-আশুবাবু। কিছু বুঝলেন?

-খানিকটা আন্দাজ করছি। আততায়ী খুব ক্ষীপ্র ও হিংস্র। দুটো বিষয় ভাবাচ্ছে। মোটিভ আর খুনের অস্ত্র। আপনারা ওই জায়গাটা একটু ভালো করে তল্লাসি করে দেখুন। আর কোনও এভিডেন্স পান কিনা। আর সিসিটিভির ফুটেজগুলো থানার ওসিকে বের করে রাখতে বলুন।

-ওকে।

আমরা মর্গ থেকে বের হতেই আশুদা বলল।

-চল। একটু খাওয়াদাওয়া করা যাক।

কাছেই চা দোকানে ঘুগনি আর পরোটা মিলে গেল। সারা রাত অভুক্ত দুজনেই। রীতিমতো হামলে পড়ে গোগ্রাসে গিলতে গিলতে হঠাৎ দেখি আশুদা আমার দিকে সকৌতুক তাকিয়ে আছে। আমি জিজ্ঞাসু চোখে বললাম, "কী দেখছ?"

-দেখছি মানুষের ভিতর খিদে থাকলে সে কেমন অদ্ভুত ভয়ানক হয়ে ওঠে।

আমি খেতে খেতেই বললাম,"তাহলে তুমি বলছ আততায়ী যেইই হোক, তার ভিতর ওই খিদেটা ছিল?"

-আলবাত।

স্টিফেন ঘোষ জানাল সিসিটিভি ফুটেজ আসতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যাবে। আশুদা বলল, তার কালার স্ফিয়ারে কি সব কাজ বাকি আছে। আমিও একবার আমার কলেজে হাজিরা দিতে চললাম। গিয়ে দেখি সেখানে মনসুর গাজি বসে আছে। আমি হতচকিত হয়ে গেলাম। আজ তার হাতে 'রেশমি' পুতুলটি নেই। মুখচোখ কেমন মনমরা। সেই বেপরোয়া ভাবটা যেন আর নেই।

-কি ব্যাপার? আজ হঠাৎ?

-একটা গুরুর সাজিশ হচ্ছে ওই মাইয়ার লগে। আপনারা হেল্প করেন।

-কীরকম সাজিশ?

-সুচন্দ্রাবহিনের মাকে চিনতাম। আমার আম্মিজানের মতো ছিল। ক'দিন ধরে রেশমি বলছে, সে জানে কে তার আম্মিজানকে বেইজ্জত কতল করেছে।

-কে?

-এভাবে নয়। শকুন্তলাদেবীর সঙ্গে আমার বাতচিত হয়েছে। কিন্তু বাতচিতের পর রেশমি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। একটা ইন্তেজাম করুন। শকুন্তলাদেবী কিছু বলতে চায়।

-কীভাবে?

-ঘরে টেবিল থাকবে। মোমবাতি থাকবে। আমরা কয়েকজন থাকব। আর রেশমি থাকবে।

-প্ল্যানচেট?

-আপনারা পড়ালিখা করা মানুষ। আপনারা একে কী বলেন আমি জানি না। আমরা এইভাবে বেহেস্ত থেকে জীন ডেকে আনি।

-আজ রেশমিকে আনোনি?

-না।ওর তবিয়ত খারাপ।

মনসুর গাজি চলে যাবার পর কলেজে কাগজ গোছাতে গোছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। আশুদার ফোন। "জলদি আয়। স্টিফেন ফোন করেছে। সিসিটিভি ফুটেজ চলে এসেছে। যেতে হবে।"

বেশ লাগছিল। একদিকে মনসুর গাজির ভুডু পুতুল, অন্যদিকে এই অদ্ভুত রহস্যময় মৃত্যু। কলেজ থেকে বেরিয়ে আশুদাকে নিয়ে আবার থানায় যেতে ওসি আমাদের ঘরে ডেকে পাঠাল। টিভিতে ফুটেজগুলো চালিয়ে বলল।

-যে ক্যামেরাটা একদম ক্রাইমসিনে ছিল, সেটা ঝড়ে খারাপ হয়ে গেলেও এই ক্যামেরাগুলো আশপাশের। এই ক্যামেরাতে একজন হুড পরা মানুষ দেখা যাচ্ছে।

চারটি ফুটেজ একসঙ্গে চলছিল। তিননম্বর ফুটেজের দিকে চিহ্নিত করে স্টিফেন বললেন।

-এই ফুটেজে ওই হুড পরা লোকটি আর আমার পাকরাও করা অত্রি একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে। দুজনে দুদিকে হেঁটে যাচ্ছে। কেউ কারোকে চেনে বলে মনে তো হচ্ছে না।

আশুদা মন দিয়ে ফুটেজগুলো দেখে বলল।

-হুড পরা লোকটাই আততায়ী ধরে নিচ্ছেন কেন?

-কারণ ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া গেছে। অবশ্য এমনটাই তার দাবী। কথাবার্তাও তেমন খেই খুঁজে পাবার মতো নয়।

-কে? 

-চলুন।পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। বাইরের ঘরে বসে আছে।

বাইরে একটি লাগোয়া ঘরে আমাদের দুজনকে নিয়ে গেল স্টিফেন। সেখানে বেঞ্চের উপর বসে আছে বছর পঁয়ত্রিশের এক যুবক। মুখে চাপদাড়ি। পরণে জোব্বা পাঞ্জাবী আর জিন্স।বামকাঁধে ঝোলানো সাইডব্যাগ থেকে একটি লম্বা ক্যানভাস ও দু তিনটে তুলির বাঁট বেরিয়ে রয়েছে। চোখে বেশ পুরু কাঁচের চশমা। মাথার চুল উশকোখুশকো।কপালের ডান পাশে একটি শুকিয়ে যাওয়া কাটা দাগ। আমাদের আসতে দেখে সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,"নমস্কার। আমার নাম সোহরাব চক্রবর্তী।"

স্টিফেন ঘোষ আদেশ করার ভঙ্গিতেই বলল,"আমাকে যা যা বলেছেন, এনাদেরকেও একটু বলুন।"সোহরাব ঘাড় নেড়ে যা বলল, তার সারবত্তা এই মতো। সে একজন চিত্রশিল্পী। শহরের অলিগলি ঘুরে ছবির বিষয় খুঁজে বেরায়। সেদিনও লেক টেম্পল রোডে হাঁটতে হাঁটতে সে একটি হুড পরা মানুষকে হেঁটে আসতে দেখে। রাস্তায় সামান্য অন্ধকার থাকায় সে প্রথমে বুঝতে পারেনি। অত্রির সঙ্গে তার সামান্য ধাক্কা লাগে। কিন্তু অত্রি কিছু না বলেই চলে যায়। সোহরাব সেই হুড পরা মানুষটিকে ওই মণিপুরী মহিলাটির দিকে এগিয়ে যেতে দেখে।দুজনে মাত্র মিনিট দুয়েক মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর মহিলাটি ধপ করে পড়ে যায় রাস্তায়। আর হুড পরা মানুষটি দৌড়ে পালায়। সব শুনে আশুদা বলল।

-আপনি এই কথা কাল রাতে এসে পুলিশকে জানালেন না কেন?

সোহরাব কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলল, "ভয় পেয়ে গেছিলাম স্যার।"

-আর কিছু দেখলেন?

-ওই হুড পরা মানুষটির হাতে একটা ধাতব কিছু ছিল যেটা ও মহিলাটির কপালে ধরে রেখেছিল।

-মাত্র দুই মিনিটে আপনি এতো কিছু দেখে ফেললেন? দারুন তো!

সোহরাব মাথা নীচু করে বলল,"ওটাই তো সমস্যা স্যার। আমার একটা অসুখ আছে। তার কারণে আমি একটা ঘটে যাওয়া দৃশ্য বারবার চোখের সামনে দেখতে পাই।"

-ইন্টারেস্টিং।

স্টিফেন ঘোষ আমাদের তার ঘরে এনে নিজের চেয়ারে বসে বলল, "কী করি বলুন তো? এই ছেলেটার কথা সত্যি ধরে নিলে অত্রিকে ছেড়ে দিতে বাধা নেই। কিন্তু ওই যে কী একটা রোগ বলল। ওটা কি সত্যিই? হয় এরকম?"

আশুদা ঘাড় নেড়ে বলল,"অসম্ভব নয়। সোহরাব ছেলেটি সত্যি বলছে। ওর দুই চোখ নড়ছিল। ডাক্তারি ভাষায় যাকে বলে 'নিস্টাগমাস'। আর সম্ভবত ওর একটা ব্রেন সার্জারিও হয়েছে। কপালের কাটা দাগ তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এমন একটি রোগ ডাক্তারি শাস্ত্রে আছে বৈকী। কী বলিস অর্ক?"

আমি ভেবে বললাম,"প্যালিনপশিয়া?"

-ঠিক তাই। সাবাশ অর্ক। আমার মনে হয় এই সোহরাব ছেলেটির বয়ানটা আপনি নথিভুক্ত করুন। আর ওর ওপর নজর রাখুন। ওকে ওর মেডিকেল ডকুমেন্টস আনতে বলুন। আমি দেখব।

-ওকে আশুবাবু।এই কেস তথাগত স্যার দেখছেন। স্যার বলেছেন আপনাদের পুরো স্বাধীনতা দিতে তদন্তে। তবে একটা প্রশ্ন থেকে গেল আমার। ওই অন্ধকারে আপনাদের বন্ধু অত্রি কী করছিল? আর সে কেন ওই হুড পরা ব্যক্তিটিকে দেখতে পেল না!

আশুদা রহস্যময় হেসে বলল, "আপনাকে আর একটা কথা বলা হয়নি মিস্টার স্টিফেন ঘোষ। অত্রির আরও একটা অসুখ আছে। ও ঘুমের ভিতর হাঁটতে পারে।ডাক্তারি পরিভাষায় 'সোমনাম্বুলিজম'। সম্ভবত সিসিটিভি ফুটেজে আপনারা যে অত্রিকে হেঁটে যেতে দেখেছেন, সে জেগে নয়, ঘুমের ভিতর হাঁটছিল। তাই সে কারোকে দেখতে পায়নি। আমরা দুজনে একদিন ওইভাবে ওকে শরৎ বোস রোড থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাই।"

আশুদার কথা শুনে স্টিফেন ঘোষের চোখেমুখে শ্রদ্ধা ফুটে উঠল। সে এবার উঠতে উঠতে বলল,"এবার বুঝেছি তথাগত স্যার কেন আপনার এতো প্রশংসা করে আশুবাবু। যাহোক। আমি অত্রিকে ছেড়ে দিচ্ছি উইথ আ কশান। ও যেন এই শহর ছেড়ে বাইরে না যায়। এটুকু আশা করি আপনারা দেখবেন। চলুন।"

অত্রিকে নিয়ে আমরা থানা থেকে বেরিয়ে এলাম। চালতাবাগানে তার বাড়িতে পৌছে দিতে গিয়ে দেখলাম সুচন্দ্রার সঙ্গে সেখানে একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা রয়েছে। সুচন্দ্রা পরিচয় করিয়ে দিল। "আমিই অনসুয়া মাসিকে আসতে বলেছিলাম। আজ দুপুরে আমেরিকা থেকে এসেছে আমাদের বাড়ি। এই অনসুয়ামাসিই আমাকে আর অত্রিকে ছোটবেলায় মা চলে যাবার পর বড় করেছে।"

অনসুয়া আমাদের দিকে করজোড়ে অভিবাদন করে বলল,"সুচন্দ্রা খুব বলে আপনাদের কথা। আমি জানতাম আপনারা অত্রিকে ফিরিয়ে আনবেনই। আপনারা যেভাবে ওদের দুজনকে আগলে রেখেছেন, তাতে আমার সত্যিই ধন্যবাদের ভাষা নেই।"

আশুদা সামান্য হাসল। অত্রিকে ঘরে রেখে আমরা ফিরতিপথ ধরলাম।

ফেরার পথে আশুদাকে গভীরভাবে চিন্তামগ্ন মনে হল। সাদার্ন অ্যাভিন্যিউতে বাড়ির সামনে গাড়ি রাখতে রাখতে জিজ্ঞেস করলাম, "কিছু বুঝলে আশুদা?"

আশুদা গম্ভীর হয়ে বলল, "সোহরাবের কথা যদি ঠিক হয় তাহলে খুনের অস্ত্র ধাতব। কিন্তু সাধারণ ছুরির কাজ এটা নয়।"

-তাহলে কী?

-এখন সেটাই প্রশ্ন। তাহলে কী? এবং কেন? এখন সেটাই বের করতে হবে আমাদের।

-আর সোহরাব? ও কি সত্যি বলছে?

-সেটাই তো এখন আমাদের ব্যবচ্ছেদ করে বের করতে হবে অর্কবাবু।

-সোহরাব কি এই চক্রে জড়িত।

আশুদা হাই তুলতে তুলতে বলল,"দেখা যাক।"

(ক্রমশ) 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন