কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩

সমরেন্দ্র বিশ্বাস

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২১


সেই সব ছেলেগুলো

সাইকেলে হেভি প্যাডেল মেরে বাজার থেকে ফিরছিলাম। শুনলাম, কে যেন চেঁচিয়ে ডাকছে। পেছনে ফিরে  দেখি, একটা ঢ্যাঙা ছেলে ছুটতে ছুটতে আসছে।

চেহারাটা অদ্ভুত। শান্ত শিষ্ট। ওর নাকটা কেমন থ্যাবড়া, শরীরটা ভীষণ কালো আর ঢ্যাঙা!

‘আপনার মানি ব্যাগটা! রাস্তায় পড়ে গেছিল।’

ওর হাত থেকে মানিব্যাগটা নিতে নিতে বললাম – ‘ধন্যবাদ। তুমি কী করো?’

‘কিচ্ছু না - বেকার!’

পার্সে টাকাগুলো ঠিকঠাকই আছে। আমি ওকে টাকা দিতে চাইলাম। ভাবলেশহীন উত্তর - ‘লাগবে না!’

সেদিনই এই ছেলেটার উপর ভীষণ মায়া জন্মে গেলো। ঠিক করলাম, একে নিয়ে ভবিষ্যতে একটা ফিচার লিখবো – ‘বেকারত্বের ভাইরাস, তারুণ্যের অপমৃত্যু!’ কিন্তু কাউকে নিয়ে কিছু লিখতে গেলে তার সাথে কিছু কথাবার্তা তো জরুরী!

কয়েকদিন বাদে দেখলাম, এই শান্তশিষ্ট মুখটাই ঢ্যাঙা পায়ে পোস্টাপিসের সামনে।

একটু ভেবেচিন্তে আমি ওকে ডাকলাম, ‘মনে আছে, তুমি আমার পার্স ফেরৎ দিয়েছিলে। তোমাকে খুব ভালো লেগেছে। আমি একজন লেখক। তোমার জীবনের উপর একটা গল্প লিখে পেপারে ছাপাতে চাই।’

ছেলেটার ভাবলেশহীন মুখ – ‘ওঃ আপনি লেখক! আমাদের জীবন! তার আবার গল্প? থ্যাঙ্কিউ।’ কাটা কাটা কয়েকটা শব্দ! কোনো রকম কথা না বাড়িয়ে সে সামনের দিকে হনহন করে হেঁটে গেলো। বিরক্তিকর লাগলো ছেলেটার ব্যবহার।

আরো কয়েকবার এরকমই কালো, নাক থ্যাবড়া, শান্তশিষ্ট মুখ দেখে চমকে উঠেছি। একদিন এই মুখটাই ট্রেনে হেঁকে হেঁকে ঝাল-মুড়ি বিক্রি করছিল।

আরেকদিন এরকমই একটা ঢ্যাঙা চেহারা বস্তির দেয়ালে দেয়ালে পোষ্টার সাটছিল! জানি না, সেটা ঠিক ঠিক আমার আগের দেখা ছেলেটা কিনা?

এই মুখগুলোকে সামনাসামনি ডেকে কোনো প্রশ্ন করতে সাহস পাইনি।

আরো কয়েকদিন পরের নিউজপেপার। পুলিশের গুলি, ছবিতে রেললাইনের ধারে মৃত যুবকের অবয়ব!  যদিও নাকটা থ্যাবড়া, মুখটা খুব রূপময় – এটাই কি সেই ছেলেটা?

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন