কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩

গৌরাঙ্গ মোহান্ত

 

তানিকাওয়া শুনতারোর কবিতা : সবুজ পত্রালির মর্মর ধ্বনি




পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে মিত্রশক্তির কাছে অধীনতা স্বীকারের সময় থেকে এপ্রিল ১৯৫২ পর্যন্ত জাপান অধিকৃত থাকে। আর ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দেই প্রকাশিত হয় তানিকাওয়া শুনতারোর প্রথম কাব্য Two Billion  Light-Years of Solitude; যুদ্ধোত্তর প্রজন্মের কবি উপলব্ধি করেছিলেন যুদ্ধভস্ম থেকে পুনর্জীবিত সমাজের সংকট ও প্রত্যাশার রূপকল্পিত বয়ান প্রথাগত হাইকু চর্চার মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।কুয়াবারা তাকিয়ো ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর Daini Geijutsu (Second-Class Art) প্রবন্ধে আধুনিক হাইকুর অকারণ দুর্বোধ্যতা, গভীর বিষয়কে শিল্পশোভিত করার অক্ষমতা, হাইকু কবিগণের দলবাজি ইত্যাদি সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন। জাপানে একটি সুসংস্কৃত জাতি নির্মাণের জন্য যুগোপযোগী শিল্পের অপরিহার্যতার বিষয়ে তিনি যুক্তি প্রদর্শন করেন। যুদ্ধোত্তর জীবনের জটিল মনস্তত্ত্ব চিত্রায়ণের মাধ্যম হিসেবে আধুনিক হাইকু গ্রহণযোগ্য নয় বলে তিনি অভিমত উপস্থাপন করেন। কুয়াবারার বীক্ষণের সাথে তানিকাওয়ার চেতনার সাযুজ্য রয়েছে। পাশ্চাত্যের শিল্পযাত্রায় কার্যকরভাবে যুক্ত থাকবার জন্য জাপানের ঐতিহ্যিক কাব্যমাধ্যমের পরিবর্তে তিনি পাশ্চাত্য প্রকাশ শৈলীকে সাঙ্গীকৃত করে ফ্রি ভার্সে অসামান্য দক্ষতা প্রদর্শন করেন। তানিকাওয়া শুনতারো, ইবারাগি নোরিকো ও কাওয়াসাকি হিরোশির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে Kai (Oars) ম্যাগাজিনের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমবারের মতো কাই কবিগণ জনসমক্ষে কবিতা পাঠ ও টেলিভিশনে কাব্যনাট্য সম্প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তানিকাওয়ার অভিনব, ইতিবাচক কবিতা শ্রোতা ও পাঠকবর্গের নিকট ব্যাপকভাবে আদৃত হতে থাকে। তানিকাওয়া তাঁর অস্তিত্ব ও পরিজ্ঞাত প্রতিবেশের ভেতর নিমগ্ন থেকে সংবেদী বর্ণে নির্মাণ করতে থাকেন অদৃষ্টপূর্ব ইন্দ্রচাপ।

জীবনের আলোকোজ্জ্বল, অসীম সম্ভাবনার দিকে  দৃষ্টিপাত করে তিনি অস্তিত্ব-চেতনার সঙ্গে জীবনের অনিশ্চয়তা ও নশ্বরতা সম্পর্কে তাঁর অন্তর্বীক্ষণ A Vast Field  কবিতার শেষাংশে উন্মোচন করেন।

It's a vast, vast field.

The night sky is completely filled with stars.

Walking, I wonder whether I'm not yet dead.

তানিকাওয়ার দৃষ্টিতে সমুদ্র পৃথিবীর হৃৎপিণ্ড; এর রক্তপ্রবাহ অবিরাম বহমান। তিনি সমুদ্রের ভাষার মর্মার্থ উপলব্ধি করেন, সমুদ্রকে স্পর্শ করেন, সমুদ্র নিয়ে ভাবনায় নিমগ্ন থাকেন এবং সমুদ্রকে ভালোবাসেন। বায়ুমণ্ডল তুল্য সমুদ্রের নীল পরিচ্ছদের উপযোগিতা  তানিকাওয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কবি উদ্ঘাটন করেন মানুষের অস্তিত্বের সাথে সমুদ্রজাত মাছ ও শুক্তির অনিবার্য সম্পর্ক।

The blue garb, the same color as air that protects earth...

the home of humans who share it with fish and shellfish...

কবির কাছে জলধি একটি জীবসত্তা রূপে প্রতিভাত; মানুষের সাথে তার যোগ এতো নিবিড় যে উভয়ে উভয়কে প্রত্যক্ষ করে; একে শ্রবণ করে অপরের অমোঘ বার্তা।

Not that people look at the sea--the sea with shining eyes looks at people,

eyes unchanged from the beginning of time.

Not that people hear the sea,

the sea hears people

with the ears of numberless shells under the seabed.

মানুষ যেমন কণ্ঠে তুলে নেয় সমুদ্রের গান, সমুদ্রও তেমনি মানুষের উদ্দেশ্যে গানকে সুরময় করে তোলে। সঙ্গীতের ভেতর দিয়ে সমুদ্র নিশ্চিত করে মানব-উদযাপন।

Not that people sing of the sea--the sea sings of people.

The sea celebrates people.

বস্তুত কবি সঙ্গীতকে কবিসত্তার অপরিহার্য অনুষঙ্গ বলে চিহ্নিত করেন। তাঁর Breeze, Graveyard, Dulcimer কবিতার কথক কেবলমাত্র মোৎসার্টের সঙ্গীত-রস আস্বাদন করেছেন, মার্কস বা দস্তয়েভস্কি পাঠ করেন নি। তিনি শুধু নীরবতার আত্মীয় কবিতা ও অ্যান্ডান্টের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনে প্রয়াসী। সঙ্গীত মানুষকে বিশেষত কবিকে কল্পনার অদৃশ্য  ব্রহ্মাণ্ডে পরিভ্রমণের সুযোগ এনে দেয়। কল্পনা অধ্যাস সৃষ্টিতেও ভূমিকা পালন করে। Listening to Mozart কবিতায় তানিকাওয়ার উচ্চারণ প্রণিধানযোগ্য।

The person listening to Mozart curls up like a child,

his eyes following the curled wallpaper as if it were the blue sky,

just as though his invisible sweetheart were whispering in his ear.

সঙ্গীতানুরাগী কবি মোৎসার্টের জন্মভূমি সল্টসবার্গ নিয়েও কবিতা লিখেছেন। 'A Stroll throuhgh Salzburg' কবিতায় তিনি এ অভিমত প্রকাশ করেন যে, সঙ্গীত যেভাবেই পরিবেশিত হোক না কেনো তা শ্রোতাকে অনাবিষ্কৃত একটি ভূমণ্ডলে স্থানান্তরিত করবার জাদুশক্তি প্রয়োগ করে। Mozarteum-এ পিয়ানোবাদনে নিরত শিশু শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ করে তানিকাওয়া অনিন্দ্য রূপকল্প সৃষ্টি করেন।

In the Mozarteum children were taking piano lessons,

and however faltering, the music was music.

It carried us away to some unfamiliar world for a moment,

কবি অবলীলায় নির্মাণ করেন সঙ্গীতের সাথে কল্পনার যোগসূত্র। সঙ্গীত হৃদয়ে  প্রতিষ্ঠা করে পদ্মের কোমল স্বভাব। সঙ্গীতের প্রভাবে অশ্রু বর্ষিত হলেও সে অশ্রতরঙ্গে ভেসে যায় আনন্দ-সাম্পান।

সঙ্গীত কবির নিকট Orgasms বা রাগমোচন তুল্য উত্তেজনাকর আনন্দের মায়াবী পরিমণ্ডল রচনা করে যার ফাঁদের ভেতর কবি স্বেচ্ছায় বন্দিত্ব বরণ করেন। A Kita-Karuizawa Diary কবিতায় তানিকাওয়া উন্মোচন করেন গভীর সাঙ্গীতিক সংবেদনা।

Another sort of orgasm comes over me again.

Sunlight filtered through leaves flirts with Mozart

and the vacant old house whispers amorous words.

And now, as eternity deceives me with its beautiful cosmetics,

I willingly throw myself

again and again

into a snare set by someone unknown.

Though I know it's an illusion, the snare is so sweetly alluring

I can't escape it.

উপস্থাপিত শব্দচিত্ররাজি নিসর্গ, সঙ্গীত ও অপার্থিবতার উপচারকে আশ্রয় করে কথক বা কবির আবেগাকুল অবস্থাকে বোধগ্রাহ্য করে তুলেছে। 'Another sort of orgasm' এমন এক পরিপূর্ণতাপ্রদায়ী ও আনন্দকর সংবেদনা যা কবিতার কথককে অভিভূত করে রাখে। চরম আনন্দের এ মুহূর্তকে রূপকাত্মক ক্লাইম্যাক্স হিসেবেও গণ্য করা যেতে পারে। নিসর্গের সাথে শিল্পের নিবিড় অন্তরঙ্গতার বিষয়টি স্ফুট হয় যখন পত্ররাজির ভেতর দিয়ে পরিস্রুত সূর্যালোক মোৎসার্টের সঙ্গীতের সাথে প্রণয়রঙ্গে মেতে ওঠে। নৈসর্গিক জগতের সাথে সাঙ্গীতিক সৌন্দর্যের এ সুসংগত সংলিপ্তি শৈল্পিক অভিজ্ঞতার অতিন্দ্রীয় শক্তিকেই প্রকাশ করে। অনধিকৃত, জীর্ণ গৃহের প্রেমার্ত বচন রহস্য ও রোমান্সের ইঙ্গিতবাহী। অনধিকৃত গৃহ প্রধানত শূন্যতা বা নির্জনতাকে প্রতিকায়িত করলেও এ ক্ষেত্রে তা সম্মোহক বৈশিষ্ট্যের ধারক কেননা এ গৃহের নিভৃত সত্তায় জেগে রয়েছে গোপন আকাঙ্ক্ষার তরঙ্গ।

কিন্তু কাব্যিক পারসোনা অনন্তের সৌন্দর্য ও মায়ায় প্রবঞ্চিত এবং তিনি স্বেচ্ছায় এ প্রবঞ্চনাকে আলিঙ্গন করেন, কারণ কবিতার মায়াময় জগতের স্বরূপ সম্পর্কে তিনি সম্যকরূপে অবহিত এবং তিনি জানেন এ জগতের ট্র্যাপ থেকে তাঁর মুক্তি নেই। কবির এ জটিল, আবেগবিহ্বল অবস্থার প্রকাশ পাঠকের জন্য বিস্ময়কর।

জীবন ধারণের জন্য যেমন বাতাস আবশ্যক, সংবেদনাময় অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তেমনি কবিতাও মূল্যবান বায়বীয় উপকরণ। তানিকাওয়া কবিতাকে 'silent air spilling from lover’s lips' (প্রণয়ীর ঠোঁট থেকে ছলকে পড়া নীরব সমীরণ) বলে দেখতে চেয়েছেন। সমীরণ তুল্য কবিতা 'soul's communion' (আত্মার ভাব বিনিময়) নিশ্চিত করবার জন্য রচনা করে হাওয়াই পথ : 'Poems are a breeze weaving a way between people' (On Giving People Poems)। বাতাসের অদৃশ্য শক্তির সাথে  কবি-স্বভাবেরও রয়েছে সাযুজ্য। শৈশব থেকেই তানিকাওয়া নির্জনতা পছন্দ করেন। তাঁর সৃষ্টিশীল মনের বিকাশে নির্জনতা সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। কবিতা রচনার সময় তার সত্তা ও সংবেদনা জনবসতিহীন পার্বত্য হ্রদের মতো প্রশান্ত ও নির্জন হয়ে ওঠে; হৃদয়ের তলদেশ থেকে আনন্দ, রোষ, বেদনা ও সুখানুভূতি ক্রমে শব্দের শরীরে তরঙ্গিত হতে থাকে। Answering Questions কবিতায় তিনি সৃজন-মুহূর্তের পটচিত্র অঙ্কন করেন।

When I write a poem my heart is as calm

as a mountain lake far away from human habitation.

With its feelings of joy, anger, sorrow and pleasure laid sunken on its bed,

it is quietly spreading out its ripples.

একটি গ্রিক আর্নে উৎকীর্ণ মূর্তি, বৃক্ষশাখা, পত্রালি প্রত্যক্ষ করে জন কিটস যখন Ode on a Grecian Urn কবিতা রচনা করেন তখন তাঁর সৃষ্টি কেবল একফ্রাসিসে বৃত্তায়িত থাকে না; তাঁর কবিতার ভেতর অঙ্কুরিত হয় দর্শনের ঔজ্জ্বল্য। শিল্পময় আর্নের ভেতর কুমারী বধূর সৌন্দর্য যেমন কিটস আবিষ্কার করেন, তেমনি এ পাত্রকে তিনি 'foster child of silence and slow time' অথবা 'silent form' বলে অভিহিত করেন, এবং এ আর্নের সূত্র ধরে তাঁর অন্তর্বোধ সাকার হয়ে ওঠে : 'Beauty is truth, truth beauty'। কিটস সুন্দর ও সত্যের ভেতর কোনো প্রভেদ নিরীক্ষণ করেন নি। কিটসীয় এ প্রত্যয়কে কবিতা নির্মাণের ক্ষেত্রে তানিকাওয়া গুরুত্ব দিয়েছেন। তানিকাওয়া 'সুন্দর'-এ সংগোপিত 'সত্য ও শুভ'র প্রতি আস্থাশীল থেকে কাব্যময়  সৌধ নির্মাণে দ্বিধাগ্রস্ততার সাথে  শব্দাবলির বিন্যাস ঘটান।

Believing in 'the true and the good' lurking in 'the beautiful',

I place words hesitantly.

কবিতা কেবল শব্দরাজির অলংক্রিয়া নয়। কবিতা কবির সংবেদনশীল সত্তার বিধান হেতু দুরধিগম্য বলে প্রতীয়মান হয়। বোদ্ধা পাঠক কবিতার রহস্য উন্মোচন করতে পারেন কিন্তু অদীক্ষিত পাঠকের কাছে কবিতা চিরকালই দুর্বোধ্য। One Poem কবিতায় কবিতার চারিত্র্যের ওপর তানিকাওয়ার আলোক প্রক্ষেপণ তাৎপর্যপূর্ণ।

Is the poem words only? No, not really.

It's the indescribable confusion and the order of a soul

that are beautiful to some people, incomprehensible to others.

কবিতা লেখবার জন্য নির্জনতা ও প্রমগ্নতা প্রয়োজন। মানুষের জীবনযাত্রার সাথে বৃক্ষের জীবনসংগ্রাম ভিন্নতর হলেও বৃক্ষের সাধনা শব্দসাধকের সৃজনশীলতার অনুশীলনে অনুকরণীয়। কেননা বৃক্ষের স্থবিরতা সৃষ্টিশীল মানুষকে অভিনিবিষ্ট হতে উদ্দীপিত করে।কর্মচঞ্চল জীবনের ভেতর স্থিতধী ও নির্জন হতে না পারলে কবিতা নির্মাণ সম্ভব নয়। Tree শীর্ষক রূপকাত্মক কবিতায় তানিকাওয়া বৃক্ষ রূপে আত্মপ্রকাশ করতে চান। তিনি প্রত্যক্ষ করেন তাঁর মধ্যমা, তর্জনি, অনামিকা আঙুল দিয়ে  সবুজ পত্রালি গজিয়ে উঠছে, শরীর রুক্ষ কাণ্ডে রূপান্তরিত হচ্ছে, পায়ের আঙুল কাদামাটিতে নিমজ্জিত হচ্ছে, আর নিশ্চল হয়ে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। কর্মমুখর জগতের কোনো মানুষ তাঁর প্রতি মনোযোগী নন। তিনি বাতাসে আন্দোলিত হয়ে পাতার ঝিরিঝিরি আওয়াজ তুলছেন অর্থাৎ নির্জনতার ভেতর তাঁর অন্তর্গত ধ্বনিপুঞ্জকে অর্থময় করে তুলছেন।

যে কোনো কবির মতো তানিকাওয়া ভাষা বিশেষত গদ্য ভাষা নিয়ে অত্যন্ত সচেতন। গদ্যকবিতা রচনায় তিনি সিদ্ধহস্ত বলে অনায়াসে উপলব্ধি করেন যে, গদ্যের উৎকর্ষ নিশ্চিত না হলে কাঙ্ক্ষিত কবিতার স্ফুরণ সম্ভব নয়। গদ্যকে গোলাপরূপী নৈসর্গিক সৃষ্টি হিসেবে কল্পনা করলে কবিতা তার সৌগন্ধ্য এবং গদ্যকে আবর্জনা হিসেবে কল্পনা করলে কবিতা তার তীব্র দুর্গন্ধ রূপে প্রতিভাত হয়। তানিকাওয়ার A Kita-Karuizawa Diary কবিতার একটি স্তবক উদ্ধার করা যাক।

If prose is taken as a rose,

poetry is its fragrance.

If prose is taken as a garbage dump,

poetry is its stench.

মনে হতে পারে সহজবোধ্যতা তানিকাওয়ার কবিতার অনন্য বৈশিষ্ট্য। সহজগম্যতা তাঁর কবিতার একটি গুণ মাত্র। তানিকাওয়ার কাব্য ভাষা সান্দ্র, সংযত ও ঋজু। কখনো কখনো তিনি স্বয়ং কবিতার অনুষঙ্গ হয়ে ওঠেন; অকপটভাবে নিজের অবয়ব ও আচরণ উন্মোচন করেন। তবে কনফেশনাল কবিতায় যে ব্যক্তিগত ট্রমা, পারিবারিক সহিংসতা, যৌনাচার ও আত্মহননের প্রসঙ্গ বিবৃত থাকে তা তানিকাওয়ার কবিতায় দৃশ্যমান নয়। তানিকাওয়া যে স্থুল ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কবিতায় প্রকাশ করেন তা মৃদুতা ও শোভনতার বাতাবরণকে বিবর্ণ করে না। Self-Introduction কবিতায় তানিকাওয়া তাঁর খর্বত্ব, কেশহীনতা ও বার্ধক্যের কথা অবলীলায় প্রকাশ করেন এবং অর্ধশতকের বেশি সময় ধরে বিশেষ্য, ক্রিয়া, অনুসর্গ, বিশেষণ ও প্রশ্নচিহ্নের দ্বারা আন্দোলিত হয়ে জীবন-অভিজ্ঞতা বর্ণনার পর নীরবতাই তাঁর মনঃপূত বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন; তাঁর বস্তুতন্ত্রীয় চেতনা কবিতায় হয়ে ওঠে দীপ্রতর।

What I'm describing here is factual

and yet I feel a false note is struck when things are put into words.

I have two children living separately and four grandchildren, and keep no dogs or cats.

I spend most of the summer in t-shirts.

The words I write are sometimes given prices.

সংবেদনার পরিপূর্ণ প্রকাশ শব্দে যে সম্ভব নয় তা তিনি স্বীকার করেন; নিজের সন্তান ও পৌত্রদের সংখ্যা উল্লেখ করেন; তাঁর প্রাণী পালনের যে সখ নেই সে বার্তা দিতেও তিনি সংকোচ বোধ করেন না। তিনি অবহিত করেন যে গ্রীষ্মের অধিকাংশ সময়ে তিনি টিশার্ট পরিধান করেন এবং কবিতা লিখে কখনো অর্থও উপার্জন করেন। ব্যক্তিগত জীবনের এ অনুপুঙ্খ বর্ণনাকে তিনি কল্পনার রঙে রাঙিয়ে তোলেন না। এভাবে তিনি বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞান নিঃসংকোচে অবিনাশী পটে উৎকীর্ণ করেন।

তানিকাওয়া মৃত্যু-সচেতন কবি। তবে প্রায় বিরানব্বই বছরের পার্থিব জীবনে তিনি পৃথিবীর রসোত্তীর্ণ ঐশ্বর্য সহযোগে যে কাব্য-ভাস্কর্য নির্মাণ করে চলেছেন তা অমরত্বের দীপশিখা প্রোজ্জ্বল রেখেছে।তাঁর কাছে মৃত্যু ভীতিপ্রদ নিরালোক ও চিরবিচ্ছেদের সংঘটক নয়। কবির দৃঢ় প্রত্যয়, মৃত্যু পার্থিব জীবনকে প্রতিফলিত করে না; মৃত্যু ব্যক্তির আত্মচেতনার বিলুপ্তি ঘটায়--মৃত্যুর মাধ্যমে ব্যক্তিগত পরিসীমা নিরাকৃত হয় বলে মহাবিশ্বের  সাথে মানুষের গভীরতম বন্ধন সূচিত হয়।

Since death lacks mirrors

we shall soon be unselfconscious

and able to be one with the world

জলধি, উদ্ভিদ, মৎস্য, মানুষের সঙ্গে তানিকাওয়ার সম্পর্ক এতো অন্তরঙ্গ যে তা মোচ্য নয়; তিনি নিজেকে 'rhythm in a refrain' কিংবা 'subtle wave and a particle having arrived' বলে উল্লেখ করেন বিধায় মানুষের হৃদয়-তরঙ্গের সাথে তাঁর রয়েছে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। তিনি ঘোষণা করেন যে, তিনি নিজের পরিচয় জেনেছেন বলে অন্যের পরিচয় তাঁর নিকট অপরিজ্ঞাত নয়। অন্যের কোনো তথ্যাদি রাষ্ট্রীয় নথিপত্রে সংরক্ষিত না থাকলেও অপরের সাথে তিনি তাঁর সৃজনশীল কর্মের মাধ্যমে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। I Am Me, Myself  কবিতায় তাঁর আত্মচেতনা বাঙ্ময় হয়ে ওঠে; তিনি বিশ্বমানবতার সাথে অন্তঃসংজ্ঞা সূত্রে অন্বিত।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন