কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩

শাহনাজ নাসরীন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২১


জীবন

সে যখন উঠছিল দরজার কাছে গাদাগাদি ভীড়। সবাই চেচামেচি করছিল জায়গা নেই জায়গা নেই, ড্রইভারকে গালাগাল দিচ্ছিল কেন বাস থামিয়ে রেখেছে! কিন্তু বাইরে থেকে সে দেখেছে ওপরটা নীচের মতো অত ঠাসা নয়। অতীত অভিজ্ঞতায়ও সে জানে যে, ওপরে উঠে যেতে পারলে দাঁড়ানোর জায়গা তো পাবেই, ভাগ্যে বসার জায়গাও মিলে যেতে পারে। বেশিরভাগ মানুষের অদ্ভূত সাইকোলজি, তারা ওপরে  যেতে চায় না!

সে ঠেলাঠেলি করে ওপরে ওঠার জায়গা বের করতে চেষ্টা করার সময় সবসময়ই খারাপ কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে। কিন্তু ও চুপচাপই থাকে। জানে এ সময় চিৎকার করলে লাভ তো হবেই না উল্টো ভীড়ের মানুষগুলো আরও নিষ্ঠুর হয়ে উঠবে। হয়তো ধাক্কা মেরে ফেলেই দেবে ওকে। তাই সে নিজেকেই যতটা পরে সামলাতে চেষ্টা করে; বুকের কাছে চেপে ধরে ব্যাগ, বিশাল এক কাপড়ে শরীর মাথা গলা পেঁচিয়ে নিজেকে প্রায় অদৃশ্য করে ফেলতে চেষ্টা করে।

ধাক্কাধাক্কি করে ওপরে উঠে দাঁড়ানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন উঠে দাঁড়ায় - পরের ষ্টেশনে নামবে।  দ্রুত বসে পড়ে ঘাম মোছে সে। মধ্যদুপুরের ঠাসাঠাসি ভীড়ের বাসে প্রচন্ড জ্যাম ঠেলতে ঠেলতে মহাবিরক্ত ড্রাইভার, কন্ডাক্টারের অকথ্য গালাগালের শব্দ ভেসে আসছে এই দোতালায়ও। তবু সে নিজের ভেতর ডুব দিতে পারে। সেজন্যেই দোতলা বাসের ওপরমহলটা তার এতো প্রিয়। 

এই যে শহরময় গিজগিজে ভীড় এমনকি বাড়িতেও দু’কামরায় বাবা-মা সহ পাঁচভাইবোনের ঠাসাঠাসি সংসারে সে ভাববার কোন অবকাশই পায় না, অথচ দেখো এখন বিচিত্র সব অনুভূতি তাকে ভাসিয়ে নিচ্ছে কোন অজানায়! তার একবার মনে হয় সে বুঝি পাখি হয়ে গেছে। আবার মনে হয় প্লেনে চড়ার অনুভব কি এমন? আহা সে তো প্লেনে চড়েনি কখনো! কোনদিন কি পারবে চড়তে? ভাবতে ভাবতে বুকের  ভেতর মাছটা খলবল করে ওঠে। পারবে পারবে হবে হবে। মাছটা ঘাই মারে, লেখাটা দিচ্ছ না কেন কবে থেকে তাগাদা দিচ্ছে। মাছটা অনবরত সাঁতার কাটে, লেজ দিয়ে চাটি মারে, নরম কামড় দিয়ে প্রতিদিনকার ঘাত প্রতিঘাতে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া সীমাকে জাগাতে থাকে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন