কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০২৩

সুদীপ্ত বিশ্বাস

 

কবিতার কালিমাটি ১২৬


মানুষ খোঁজা

 

মাঝে মাঝে খুব একা লাগলে

আমি মানুষ খুঁজি।

গাছের মতো প্রিয় মানুষ

অরণ্যের মতো গভীর মানুষ

পাখির মতো প্রাণবন্ত মানুষ

নদীর মতো দিলখোলা মানুষ

পাহাড়ের মতো উদার মানুষ

আকাশের মতো উন্মুক্ত মানুষ

প্রকৃত মানুষ খুঁজে পেলে

 

তাকে নিয়ে যেতে ইচ্ছে করে

আমার হৃদয়ের চোরা কুঠুরিতে

আমার প্রতিটি আলোকিত কক্ষ

প্রতিটি সীমাহীন অন্ধকার

তাকে দেখাতে ইচ্ছে করে

তাকে পেয়ে খলবল করে

কথা বলতে শুরু করে

আমার গুমরে ওঠা দুঃখগুলো...

 

বাঁচা

 

শিশিরের শব্দে ঘুম ভাঙেনি কখনো

পকেটে টাকার টান, জঠরের খিদে

বস্ত্রহীন শীতরাতে ঘুম কেড়ে নেয়।

অভাবই বন্ধু হয়ে আছে চিরকাল

অভাবের আগুনেই ধিকিধিকি বাঁচি।

বাবার শরীর দেখি ঘামে-রক্তে ভেজা

অভাবী মায়ের গায়ে শতছিন্ন শাড়ি

তবুও আদর মাখা স্নেহের পরশ

অভাবের গন্ধ আমি বড় ভালোবাসি

অভাবের আগুনেই সেঁকে নিই রুটি।

 

দহন ১

 

কীভাবে ভুলব সেই পাখিডাকা ভোর?

কীভাবে ভুলব সেই অপার আদর?

যে ছিল আপন খুব হৃদয়ের কাছে

অন্তরে নদী হয়ে সেই বেঁচে আছে।

জানি ভুলে যাওয়া ভালো, তবুও কেন যে

স্মৃতির অতল থেকে আনি খুঁজে খুঁজে

অনেক না বলা কথা, কত অভিমান

মনে হয় ভালোবাসি বিষাদের গান!

বাঁচিয়ে রেখেছি তবু সেই ব্যাধিঘোর

থেকে যাক এ আঁধার, না আসুক ভোর।

ব্যথা, তবু ব্যথা হয়ে হৃদয়েই থাক

কান্না গুমরে উঠে হৃদয় জুড়াক।

 

দহন ২

 

কোনখানে গেলে বলো জুড়াবে হৃদয়?

মুছে যাবে সব ব্যথা, হারানোর ভয়।

তীব্র দহনে মন ছায়া খুঁজে মরে

অশ্রু ছলকে ওঠে, দুই চোখ ভরে।

এই ব্যথা, এই স্মৃতি, তার বেঁচে থাকা

হৃদয় নিলয়ে আছে কিছু ছবি আঁকা।

মনে হয় কিছু ব্যথা পুষে পুষে রাখি

কিছু জ্বালা বুকে নিয়ে বেশি ভালো থাকি!

শীতল বিষের জ্বালা কাকেই বা বলি?

তুষের আগুন জ্বেলে ধিকিধিকি জ্বলি।

 

দহন ৩

 

ধুলোর ঝড় উঠেছে মরুরাত্রিতে

চাপচাপ অন্ধকার

বিষাদ নদীর শীতল স্রোতের আবর্ত

ঘুটঘুটে মধ্যযুগীয় অন্ধকারে

পেঁচারা ওড়াউড়ি করছে

আমার দু'হাতে শুধু সূর্য পোড়া ছাই

তুমি নেই

তোমার আমার মধ্যে অনন্ত গ্যালাক্সির ব্যবধান।

আরও দূরে সরে যাচ্ছি আমরা

আমার চারিদিকে দাবানল

আমার বুকের ভিতরে জ্বলন্ত ভিসুভিয়াস

আমার চারিদিকে পাথর ভাঙার শব্দ

আমার হৃদয়ের স্ফটিকটা ভেঙে

কাচের টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে মেঝের ধুলোয়

কান্নারা বোবা হয়ে গেছে

অশ্রুরা স্তম্ভিত

ভাঙা মাস্তুল হাতে নিয়ে আমি একলা দাঁড়িয়ে আছি।

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন