কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০২৩

<<<< সম্পাদকীয় >>>>

 


কালিমাটি অনলাইন / ১১১

এবছর কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় বিভিন্ন বৃহৎ মাঝারি ও ক্ষুদ্র প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে অসংখ্য বই। সাধারণ মানের বই থেকে উচ্চমানের বই। লঘু বিষয়ক বই থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বা সিরিয়াস বিষয়ক বই। সব বই সংগ্রহ করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। মানুষ তার সাধ ও সাধ্যমতো বই সংগ্রহ করে। কিন্তু সাধ ও সাধ্যের মধ্যে যেহেতু প্রায়শই অসামঞ্জস্য দেখা দেয়, তাই সাধ থাকলেও সাধ্য না থাকার দরুন অনেক কিছ থেকেই বঞ্চিত থেকে যায়। আর তাই যারা প্রকৃত পাঠক-পাঠিকা এবং যথার্থ জ্ঞানপিপাসু, তারা তাদের প্রয়োজনীয় ও পাঠ্য সব বই সংগ্রহ করতে না পেরে অতৃপ্ত থাকে। আর আমাদের মতো মধ্যবিত্ত জীবনের এটাই বাস্তব চিত্রনাট্য।

আসলে কিছু কিছু বই সন্ধানী পাঠক-পাঠিকাদের কাছে এতটাই অপরিহার্য বলে মনে হয়, সেই বই সংগ্রহ করার জন্য তারা সাধ্যের বাইরে যেতে বাধ্য হয়। এরকম বেশ কিছু বইয়ের নাম এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, যা এবছর কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সম্পাদকীয় কলমে বেশি শব্দ লেখার যেহেতু কোনো সুযোগ নেই, তাই আমি শুধুমাত্র একটি বইয়ের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব। বইটি প্রকাশিত হয়েছে আমারই সম্পাদনায় ‘চিন্তা প্রকাশনী’ থেকে। কবি-ঔপন্যাসিক-প্রবন্ধিক রবীন্দ্র গুহর লেখা একটি বই, শিরোনাম ‘বাংলা কবিতায় রীতির বিপরীত রীতি’। আমি মনে করি, যারা বাংলা কবিতা চর্চা করেন, তার নিরন্তর বাঁকবদল সম্পর্কে অবহিত হতে চান এবং নতুন আঙ্গিক ও ভাবনায় কবিতা নির্মাণের প্রয়াস করেন, তাঁদের সবার জন্য এই বইটি অত্যন্ত জরুরি এবং অবশ্য পাঠ্য। আমি এই প্রাসঙ্গিকতায় আমারই লেখা বইটির ভূমিকা থেকে কিছুটা অংশ উদ্ধৃত করছি –

“বাংলা কবিতার বর্তমান ধারা বা চেহারা ঠিক কেমন, তা এক কথায় বলা সম্ভব নয়। আসলে পরিবর্তিত সময়ের ধারাবাহিকতায় কোনো ভাষার সাহিত্য ও সংস্কৃতিও যে সরলরেখায় বা একরৈখিক মাত্রায় পরিবর্তিত হবে, তা তো নয়!  যখন থেকে ‘মিডিয়া চলে গেল আধিপত্যবাদীদের হাতে, তখন থেকেই পতন শুরু হলো আধুনিকতার। এবং এই আধুনিকতার ভাঙনের ফলে কবিদের এতদিনের স্থিতাবস্থায় গন্ডগো্লের সূচনা হলো। তাঁরা অনুধাবন করলেন, গতানুগতিকতায় আর কবিতাচর্চা সম্ভব নয়। যাবতীয় সাজানো শৈলী, আঙ্গিক, ভাবনা কালপ্রবাহে তছনছ হয়ে যেতে বসেছে। শব্দের মর্মার্থ, প্রতীক, রূপকচিহ্ন,  কিংবদন্তি আগের মতো আর ধরে রাখা যাচ্ছে না। কবিরা নিজেরাই নিজেদের প্রতি সন্দিহান হয়ে পড়লেন। আর তাই স্বাভাবিক কারণেই তাঁরা অস্তিত্বের সংকটের মুখোমুখি হলেন। উপলব্ধি করলেন, কবিতার প্রচলিত প্যাটার্ন ও স্ট্রাকচারে আর নতুন কবিতা সৃজন করা আদৌ সম্ভব নয়। অথচ নিজেদের পালটে ফেলাও এক কঠিন ও জটিল ব্যাপার। বিশেষত ঘেরাটোপ থেকে নিজেদের বের করে আনা আরও কঠিন। কবিতার ভূ-সম্পত্তির টানাটানিতে তাঁরা হলেন বিভ্রান্ত। বুঝতে পারলেন, এবার তাঁরা বাতিলের তালিকায় ক্রমশ অনুপ্রবেশ করছেন।

কিন্তু যাঁরা এই ঘূর্ণিস্রোতের প্রবাহে ভেসে না গিয়ে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন, শুরু করলেন নতুন খোঁজ ও তল্লাসী, তাঁরাই প্রচলিত রীতির বিপরীত রীতিতে আস্থা রাখলেন, নতুন সৃজনের সাধনায় নিমগ্ন হলেন। তাঁরা চাইলেন চলতি ভাষাশব্দের চমক তথা উপাদানের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি। চালু প্যাটার্নকে সরাসরি বাতিল করলেন। অল্টারনেটিভ অস্তিত্বের অনুসন্ধানে প্রয়াসী হলেন। স্বাভাবিক কারণেই ঘটল কেন্দ্রিক ঠাঁইবদল। পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়াল কিছুটা  কেয়াটিক। কবিদের মধ্যে শুরু হলো নানারকম দ্বন্দ্ব, হতাশা, নেগেটিভ লংমার্চ। আবির্ভার ঘটল বিভিন্ন ভুল পদ্ধতির ও ভুল ভাবনার। কিন্তু কবিতা হয়ে উঠল সর্বজনীন। যাঁরা দুর্গম পথের পথিক হলেন, নতুন পর্যায়ে কবিতার সূচনা  করলেন, তাঁদের নিয়ে শুরু হলো বিস্তর আলোচনা, সমালোচনা। কে আদৌ ঠিক বা বেঠিক, তা নিয়ে শুরু হলো কাটাছেঁড়া।

রীতির বিপরীত রীতির এই অবস্থানকে অত্যন্ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন একাধারে গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ও কবি রবীন্দ্র গুহ। তাঁর দীর্ঘদিনের নিবিড় সাহিত্যপাঠ ও সাহিত্যসৃজন বাংলা সাহিত্যকে নিরলসভাবে সমৃদ্ধ করে চলেছে। তিনি অত্যন্ত সততার সঙ্গে অনুধাবন করেছেন, পরিবর্তিত কালখন্ডে  পরিবর্তিত সাহিত্যের বিভিন্ন বাঁকবদল। এবং শুধুমাত্র অনুধাবন করেননি, বরং নিজের সৃষ্টিতেও তা্র সুনিপুণ প্রয়োগ করেছেন। বিশেষত কর্মসূত্রে দেশের  বিভিন্ন জায়গায় অবস্থানের ফলশ্রুতিতে তিনি ওয়াকিবহাল হয়েছেন বহির্বঙ্গের সাহিত্যসৃজন সম্পর্কে। মূল বাংলার বাইরে যে কী ব্যাপকভাবে বাংলা গদ্য ও কবিতার কায়াবদল ঘটে চলেছে, কীভাবে রীতির বিপরীত রীতিতে খুলে যাচ্ছে বাংলা গদ্য ও কবিতার নতুন নতুন দিগন্ত, তা প্রত্যক্ষ করেছেন এবং নিজেও সেই দিগন্ত রচনার শরিক হয়েছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন।

রবীন্দ্র গুহর বিভিন্ন রচনা পড়ে আমরা উপলব্ধি করতে পারি, কীভাবে এই নতুন বাংলা গদ্যসাহিত্য ও কবিতার ক্ষেত্রে পালাবদল ঘটে চলেছে। এই নতুন ধারায় পোয়েটিক জাস্টিসকে অস্বীকার করা হলো। আর পোয়েটিক জাস্টিসকে অমান্য করা মানেই ইনটেলেকচুয়ালিজমের বিরোধীতা। প্রশ্ন উঠল অনেক। কিন্তু আন্দোলন অব্যাহত থাকল। এতদিনের ব্রাত্য, দেশজ, প্রান্তিক ভূমিপুত্ররা উঠে এলো বাংলা সাহিত্যে। বহির্বঙ্গের অহংকারী যুবক-যুবতীরা হাত উঁচু করল। ভাষার ঘেরাটোপ ভাঙতে শুরু করল। শোনা গেল বহুস্বরীয় কন্ঠ। কবিতায় আমদানী হলো ‘আনকমন উপাদান। কবিতার স্ট্রাকচার বা গঠনতন্ত্র নিয়ে চর্চা   শুরু হলো ডাউন-টাউনে, গ্রামে-গঞ্জে, বৃহৎবাংলায়। প্রশ্ন উঠল, শব্দের অর্থ শুধুমাত্র ভেতরে নয়, তার বাইরেটাও কেন দেখা হবে না? আমরা কেন গোঁড়ামিমুক্ত, মালিন্যমুক্ত হব না? ইচ্ছার অরবিটারী ফোর্সকে কেন মনের মধ্য চাড়িয়ে দেওয়া হবে না? একরৈখিকতা থেকে কবে আমরা বহুমাত্রিকতায় উপনীত হব?

রবীন্দ্র গুহ মনে করেন, ক্রিয়েটিভ ব্যাপারটা সবার রক্তের মধ্যে থাকে। তিনি আরও মনে করেন, কবিতার আয়ু বাড়ছে এবং তার ছায়াতেই আমরা বসবাস করছি। আমাদের ম্যারাথন দৌড় চলছে। খন্ডিত অনিশ্চিত ভাবনাকে কে কীভাবে প্রকাশ করবে, তা নির্ভর করে তার সামাজিক অবস্থান ও ইনার ডিভাইসেসের ওপর। কোনো কবিতা উপাদানের জন্য বিপরীত রীতির আখ্যা পায়, আবার কোনোটা পায় অ্যান্টি ওয়ার্ডের আখ্যা। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, আধুনিকতার পরের  স্টেশন যদি উত্তর আধুনিকতা হয়, তাহলে উত্তর আধুনিকতার পরের স্টেশন কী? ফিউচার ট্রুথ? তাহলে তখন পোয়েটিক জাস্টিস বলতে কী বোঝানো হবে?”

‘কালিমাটি অনলাইন’ ব্লগজিনের ফেব্রুয়ারী সংখ্যা আমরা প্রকাশ করতে পারিনি কিছু অসুবিধার কারণে। মার্চ সংখ্যা প্রকাশ করা হলো। এবং এই সংখ্যার সঙ্গেই পত্রিকা দশ বছর পূর্ণ করে এগারো বছরে পা দিল। এখন প্রকৃতির নিয়মে বসন্তকাল চলছে। সবাইকে আমাদের বাসন্তী শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাই।

 

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :

kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com

দূরভাষ যোগাযোগ : 9835544675

অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ : Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India.

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন