কবিতার কালিমাটি ১২৬ |
মুসাফির
বছরের শেষ রাত,
জ্যোৎস্নায় ভেসে যায় ও আকাশ --
দুই চোখে নামে ঘুম,
নিরালা, নিঝুম।
মুসাফির, ঐ চোখে নামে ঘুম!
স্বপ্নের ঘোর,
স্বপ্নের মত মায়া -- অবসাদ,
শেষরাত;
হিমেল বাতাস,
শ্রান্তি জড়ানো এই ঘুম,
নিঝুম!
পাপড়ি গুটানো ফুল,
ফুলের মতন স্বপ্ন –
স্বপ্নের ফুল
ঘুম যায়;
দুধঢালা জ্যোৎস্নায়,
টুপ্টাপ্ পাতায় পাতায়
শিশিরেরা ঝরে,
বিরল মুহূর্ত সব ঝ’রে যায় --
পাতায় পাতায়।
মুসাফির!
এই রাত হবে শেষ,
সকাল নতুন --
কুহেলি ওড়না ফেলে
হাজার পাপড়ি মেলে
উঠবেই
ফুটে
আলোক-প্রসূন!
মুহূর্ত-পারুল
এখন আকাশ নীল
আমাদের স্বপ্নের, সোহাগের মত,
এখন বাতাসে
সমুদ্রের স্বাদ।
সবুজ ঘাসের গালচে,
টৈটম্বুর ভরা দীঘি,
বনমহুয়ার
গভীর বন্য ঘ্রাণ,
তারই মত নিবিড় আস্বাদ
তোমার নিভৃত সঙ্গ;
না বলা কথার মত
শব্দহীন কৌতুকী চোখ –
আমিও আশ্চর্য এক নীরব কান্নায়
সুখের কৌটো ভরি,
জমে ওঠে মুহূর্ত-পারুল
চাঁপার গন্ধে ভেজা।
বর্ষার কালো মেঘ,
আদিগন্ত বিস্তৃত শ্রাবণ,
কার্তিকের মরা ঘাসে
অলক্ষ্য শিশিরের রেখা,
হিমেল গন্ধমাখা পৌষালী রাতে
মনে পড়ে শিউলির ভোর।
অথচ আমরা কেউ
কোনো কথা কখনো বলিনি!
বাঁধভাঙা এমন প্লাবন --
অহঙ্কার, তবুও কি এত দৃঢ়মূল?
সমুদ্র কি স্তব্ধ থেকে যাবে,
অঙ্গুলি সংকেত মাত্রে?
প্রতিটি মুহূর্তই তো
একদিন স্পর্শমণি ছিল।
নচিকেতা
মানুষের চেয়ে নেই শাশ্বত কিছু,
নেই কোন গাঢ়তর প্রজ্ঞার আভাস;
ঈশ্বর অর্থাৎ, ব্যাপ্ত নশ্বরতা --
উচ্চকিত দুই চোখে আদিগন্ত তৃষ্ণার দাহ,
হীরেজ্বলা রাতের অন্বেষা।
সময় কি স্থির হতে পারে?
উত্তর মেলে না --
তবু --
জীবনের পরতে পরতে
লুকোনো বিস্ময়
টেনে নিয়ে -- ছিনিয়ে নিয়ে -- নিঙড়িয়ে নিয়ে --
পাতায় পাতায়,
স্নায়ুতে,
অনুভব্
একক, অখণ্ড আমি
সূর্যমুখী হই,
হিরণ্ময় সত্যের সন্ধানে!
প্রতীক্ষা কি এমন দহন করে?
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন