কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০২৩

প্রণব চক্রবর্তী

 

গল্প নয়, শব্দ লিখলাম


গোর্কির স্পষ্ট কথা যারা পড়েছে সবাই জানে, যে একবার ঘুমের মধ্যে ফিনিক্স পাখির স্বপ্ন দেখেছে, সে কখনই স্থির হতে পারে না। পথ তাকে ছোটাবেই। মনে পড়ছে কাকা, সে সব দিনের কথা, যখন তোমার চুলে খুব উকুন হতো আর তুমি কলাবাগানের অন্ধকারে বসে একটা একটা করে ধরতে, দুহাতের নখে চিপে মারতে আর ফাটানোর শব্দ শুনে গুনে গুনে রাখতে কটা উকুন খতম করলে এক সকালেই! মনে পড়ে কাকা, তোমার হাতে ট্রিগার জোতদারের পোষা গুণ্ডা মারার আনন্দটাও ছিলো একইরকম। আমরা ছোটরা গল্পের সেই সংখ্যাগুলো শুনতে শুনতে ক্লান্ত হলেও, তোমার পাগলামির ছদ্ম পোষাকের আড়ালে ওসব রোম্যান্টিক গল্পগুলো না শুনে থাকতে পারতাম না। কেমন গা ছমছমে রহস্যের গল্প মনে হতো। তারপর একদিন বাগানে ঢুকে তোমার আর কোন হদিশ পেলাম না। আমাদের ছোটরা তোমার সঙ্গ না-পাওয়ার কষ্টে অনেকেই বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ করে দিলো। একদিন কানাঘুষো শুনলাম কাকে যেন মারতে গিয়ে তুমি বন্দুক হাতে ধরা পড়ে গেছো। জেলখানায় বসে তুমি নাকি শুধুই উকুন মারছো বেছে বেছে। কেউ বললো তোমার ফাঁসি হবে, কেউ বললো তুমি সারাজীবন জেলের ঘানি টানবে। আমাদের স্কুল, মাস্টারবাড়ির জীবন জুড়ে তারপর থেকে কেবলই ফুরফুর প্রজাপতি বেলা। কত গল্পে নিজেই নায়ক, আবার কত গল্পে নায়কের পার্শ্বচরিত্র হয়ে আজ এই আত্মহননের সীমানায় পৌঁছে তোমাকে মনে পড়াটা আদৌ অপ্রাসঙ্গিক নয়। আত্মহনন শব্দটা আগে খোলসা করা দরকার। দেরিদা আমাদের মত পেছনের বেঞ্চির ছেলেপিলেদের আর কিছু বোঝাতে না পারলেও, একটা জিনিস মোক্ষম বুঝিয়ে ছেড়েছেন যে, শব্দের কোনও একমুখী অর্থ হয় না। যেমন প্রয়োগের প্রভাবে হ্যাঁ কখনও নেতিবাচক অর্থ বহন করে তেমনই না কখনও
 অর্থভেদে হ্যাঁ-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তাই আত্মহনন নিয়ে ন্যাকা ন্যাকা কাঁওতালি না করে সরাসরি বলি, নিজেকে হত্যা করছি রোজ, সকাল থেকে রাত, রাত থেকে পরের ভোরে লাথ খাওয়া কুত্তার মত আবারও কেঁউ কেঁউ করে জেগে ওঠা। এক কর্পোরেট সংস্থার দুধেল গাই বলতে পারো। যখন বেরোচ্ছি ঘর থেকে ধোপদুরস্ত সারাগায়ে ম ম গন্ধ, গলায় টাই, মচমচ করছে পোষাক, লিফট ফাঁক হলেই দুদ্দাড় দৌড় দুচাকা, তিনচাকা, চারচাকা ছ-চাকা প্রথমে যা পাওয়া যাবে তাতেই দৌড়। আর যখন ফিরছি সেই একই লিফটে নিজস্ব খাঁচায়, পিঠ বেঁকে আসছে, চুল এবড়োখেবড়ো, পোষাক ঝুড়ো, মাস মাইনের এক ধ্যাধধেড়ে নুলো ঘোড়া। বোতল আর বিছানা। সপ্তাহে একদিন সারাদিন ঘুম, রাত্রে চুক্তির কন্ডোমপ্রিয়া ফোনে ডেকে কম কথা কাজ বেশি, ঘন্টার মাপে বিল পেমেন্ট। লে হাবলা, জীবন যেরকম তুমি শুনলে তো কাকা, এর থেকে মৃত্যুও বেশি সৎ, একবার বেরিয়ে গেলে আর ঢোকা খ্যাচাং খতম। তো এ আমার বাইনারি আত্মহনন বলে ডেকে ডেকে মনে হয় সবাইকে বলি, বালের জীবন।

(১)

কথা তো বলতেই হয়, বলে যেতে হবে, তারপর গল্পখেকো ডাঁশ বসে খুঁজছে কাহানী, তাই ফের কমোড থেকে উঠে প্রথমেই এঞ্জেলিকা-কে ফোন মারি, হাই, ব্রীফ মাই ব্লাড-ভোমিট টু বস, মেডিক্যাল চেকিং টুডে, আয়াম অফ। প্লীজ মাই ফাকিং স্লাট, আই এক্সপেক্ট ইউ টুনাইট, উঁঞঞঞঞ...। ওপার থেকে ছোট্ট কিন্ত মধুর খিস্তি  ভেসে আসে "ব্লাডি সোয়াইন"। আরে কাকা, আজ পয়সা ছাড়াই ওসব হবে। এরম  বন্ধুত্ব তোমার তাত্ত্বিক বাবাদের স্বপ্নেও ছিলো না। এঞ্জেলিকা একটা জ্যান্ত ক্রেমেটোরিয়াম, শুধু সুইচ মেরে অন করে দাও, বাকিটা ওর দায়িত্বে। রোস্টেড মুরগির মতো বিছানায় তোমায় ছড়িয়ে রেখে পরদিন গিয়ে অফিস গেটে কার্ড পাঞ্চ করবে। এভাবেই ভালোয় মন্দয় ঝুলে আছি বি-সা-ল কসমিক স্প্যানে। থাকা বা না থাকা, প্রায় একইরকম। থাকছি ভাবলে বল্টুতে নাটের মতো, খুলছে লাগছে আর না থাকা ভাবলে সবটা জুড়েই 'ধুর বাল'। আসলে এই বাল শব্দটা নিয়ে ছোটবেলা থেকে অনেক ভেবে দেখলাম মাল্টি-ডাইমেন্সনাল, দেরিদা বোধহয় বাল শব্দটা না জেনেই পণ্ডিত হয়েছিলেন। একইসাথে এমন গুরুত্বপূর্ণ ও তুচ্ছ অর্থে প্রযুক্ত হতে পারে একটা শব্দ, ভাবলেই কেমন গায়ে কিলবিল করে ওঠে কসমিক স্পার্ক। মনে আছে সে অনেক দিন আগে ভগবানের পাড়ায় দু’বন্ধু মিলে বেড়াতে গিয়েছিলাম। গঙ্গা নদীর  উৎসের জলে হাতপামুখ চুবিয়ে নেড়েঘেটে মাথায় ছড়িয়ে সেইসব পাহাড় নদী মেঘেদের কাছ থেকে ঘুরেটুরে ফেরবার পথে মনে হলো, কাছাকাছি এক বন্ধু এঞ্জিনিয়ারীঙে মাস্টার্স করছে, ওর হস্টেল রুরকী হয়ে ঘুরে যাবো। সে এক বিশাল ক্যাম্পাস। রিক্সোয়ালা বললো, আপকো উস্কা ঘর মে পহুঁছ দেঙ্গে। কোই বাত নেহি। চললুম বন্ধু সকাশে। ক্যাম্পাসের ভেতরের আঁকাবাঁকা পিচপথ প্রায়ই তো ফাঁকা, নানারকম বিল্ডিং এদিক ওদিক। হঠাৎই অপেক্ষাকৃত ছোট এক বাড়ির সামনে কাঠের ওপর ফ্যাকাশে লালরঙ দিয়ে বড় বড় করে লেখা-- "বাল-বিদ্যালয়"। আমার চোখ  সেখানে আটকাতেই, রিক্সো থামিয়ে আমি এক অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাম। আমার বন্ধুটি আমাকে যেন থামাতে পারছে না, আবার বুঝতেও পারছে না আমার হাসির কারণ। আমার হাসির এমন গমক, হাসি থামিয়ে তাকে বলতেও পারছি না কিছু। অবশেষে আকার ইঙ্গিতে বোঝাতে পারলাম ওই সাইনবোর্ড আমার হাসির কারণ। বন্ধুটি ব্যাপারটি বুঝে খোলসা করলো যে ওটা বোধহয় বাচ্চাদের স্কুল। আমার মাথা খুলে গেলো। এই সহজ ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি আমি! বিষয়টা ঠিক তা নয়। এর পেছনেও কারণ ওই কাকাদের সময়। কাকারা যেভাবে বুর্জোয়া শিক্ষা নিপাত যাক বলে আমাদের ছোটবেলায় স্কুলে স্কুলে আগুন জ্বালাচ্ছিলো, হয়তো আমার অবচেতনে সেটাই কাজ করেছে। ভাষাটা যে হিন্দী সেটা মাথাতেই আসেনি, আমার মাথায় বাল বিদ্যালয় বা বালের বিদ্যালয়, একই রকম ব্যাঞ্জনায় সম্ভবত উদ্ভাসিত হয়েছিলো। এর সাথে এটাও প্রায় বিস্মৃত ছিলাম যে, আমরা তখন এক হিন্দীভাষী রাজ্যে চেক-ইন করেছি। যেখানে সেই নয়ের দশকেও মাঝেমাঝেই হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা হতো। যেমন মিরাট দাঙ্গা তো তখন বেশ হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলো। যাইহোক সেদিন থেকে আমার নিজস্ব শব্দকোষে বাল শব্দের তৃতীয় একটা অর্থ সংযুক্ত হয়েছিলো। অর্থাৎ, বাল মানে হিন্দীতে চুল, বাংলায় খিস্তি অর্থে বাল মানে যৌনকেশ যার প্রয়োগ স্কুলজীবন থেকেই হাটে বাজারে বনে বস্তিতে ঘরে বাইরে যেখানে সেখানে শুনে আসছি, রেগে গেলেই ছেলে বুড়ো, রাজনৈতিক নেতার ভাষা্‌য়, আমজনতা এই কামগন্ধী শব্দটি নিয়ে ঝুলে পড়ে-- ক) তুই আমার বাল ছিঁড়বি খ) বাল ছিঁড়তে পারে না, আবার ৩) বালের ছেলে ইত্যাদি।... আজ থেকে বাল বলতে ছোট বাচ্চাকাচ্চা জানা হলো এবং শব্দটির এমন শুদ্ধতম সামাজিক স্বীকৃতি জেনে নিজেরই ভালো লাগলো। এবার থেকে সর্বসমক্ষেই বাল শব্দটা উচ্চারণ করতে পারবো কুণ্ঠাহীন ভাবেই। বাল বিদ্যালয় বা বালের বিদ্যালয় বা বালেদের বিদ্যালয় যেভাবেই বলি না কেন, আদালতে দাঁড়িয়েও বলা যাবে, কেউ মুখচাপা দিয়ে "ছেলেটি কী নোংরা" বলবার সাহস পাবে না। সম্প্রতি  শিক্ষা দুর্নীতি নিয়ে বাতাস এতই ঘুলিয়ে উঠেছে বা অত্যন্ত সফলভাবে ঘুলিয়ে তোলা হয়েছে, এখন আর বাল-বিদ্যালয় নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না, বরং "বালের শিক্ষক" এখন হাটমাঠের খুবই জনপ্রিয় এক বাক্যবন্ধ। আরে কাকা, তোমরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে যা করতে পারোনি, গুটিকয় ঘুষখোর মানুষ আর আমজনতার নীতিহীন পচা এক অংশের মদতে সেটা অনেকটা এগিয়ে গেছে। টাকা যারা দিয়েছে এবং টাকা যারা নিয়েছে সমান অপরাধী। আজ প্রকাশ্যে এলো প্রবহমান এই প্রক্রিয়ার খোলনলচে। কাকারা সাতের দশকে এসব জেনেশুনে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে পথে নেমেছিলে বুর্জোয়া শিক্ষার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখিয়ে, আর আজ আরও ৫০ বছর পার করে এসে, কোটি কোটি টাকা উড়িয়ে এজেন্সী উকিল মোক্তার মিডিয়া বিরোধী নামক কিছু রাজনৈতিক দলের হল্লা হুল্লোড় হয়ে সেই কাজটা তরান্বিত করছে আমাদের প্রচলিত সমাজ। অর্থাৎ সর্বব্যাপী নৈরাজ্যের গর্বিত বনভোজন। অর্থাৎ, সরাসরি বেসরকারি শিক্ষার বাজার তৈরির প্রক্রিয়া একেবারে রমরমা। বিভিন্ন দামের শিক্ষার আয়োজন। ফেলো পয়সা, মাখো তেল। পয়সা না থাকলে বাজা কাঁসি, গণতন্ত্রমাই কী, জয়!   

(২)

তো সাইনবোর্ড প্রসঙ্গ যখন এসেই গেলো আরও একটুকরো স্ন্যাপশট লেখাটায় জুড়ে দিতে হবেই। একবার জগন্নাথ দেবের পাড়া পুরী গিয়ে ঝোলা কাঁধে এখানে সেখানে উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি করছি, কোথাও বেড়াতে গেলে যেমন হয় আর কী!  তো ঘুরতে ঘুরতেই প্রকাশ্য দিবালোকে একটা সরুগলির মুখে টিন-বাঁধানো ছোট এক বিজ্ঞাপনি বোর্ডে ফ্যাকাশে লালরঙ দিয়ে বড় বড় করে ইনভার্টেড কমার মধ্যে লেখায় চোখ আটকালো-- "লালসা", তলায় অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট হরফে লেখা হয়েছে-- লেড়কি হস্টেল। দেখে আমার সিগারেট পুরোটা জ্বলে গেলো, টান দে্বার কথা  বেমালুম ভুলে গেছি। মেয়েদের হস্টেলের নামই যদি প্রকাশ্যে ঘোষিত লালসা হয়, তবে তার অন্দরে যে কত তোলপাড় রয়েছে ভাবতে গিয়ে একটা সিগারেট তো তুচ্ছ, কত দেবদাস যে বোকাচোদা হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন, কে তার হিসেব রাখবে! স্যরি, বস্তুত জীবনে প্রাত্যহিক ব্যবহৃত শব্দসংখ্যা যে এত সীমিত, লেখালিখির ফিল্ডে না ঘুরলে জানাই হতো না। তারপর আছে শব্দের আঞ্চলিক অর্থ, জাতিগত অর্থ, সাম্প্রদায়িক অর্থ, ধর্মীয় অর্থ প্রয়োগহেতু সাধারণের ব্যবহারের জন্য অতি সংক্ষিপ্ত কিছু শব্দ। আর সেজন্যই খিস্তি বা স্ন্যাঙ করে সরিয়ে রাখা কিছুকিছু শব্দ মাঝেমাঝেই  সংখ্যাগরিষ্ঠ বিরক্ত মানুষের ঠোঁটে দাপটের সঙ্গে ব্যবহৃত হয়ে এক অন্য রকম মেজাজকে চিহ্ণিত করে। এক্ষেত্রে মনে পড়ছে, বাস্তিল দুর্গ পতন ঘটানোর জন্য পথে নেমে এসেছিলো সে দেশের হাজার হাজার গণিকা তাদের উন্মুক্ত শব্দের কামান কণ্ঠে ভরে নিয়ে। আর যে শব্দসকল আপাতভাবে অভিজাতদের ব্যবহারে নিষিদ্ধ, কিন্তু তৎকালীন শাসকদের উদ্দেশ্যে গণিকাদের উদ্দাম ঘৃণা প্রকাশের জন্যই হিংস্রতম আদিরসে আগ্নেয় সেসব শব্দ, দীর্ঘদিন চাপিয়ে রাখা শৃঙ্খল উপড়ে ফেলে দিতে সাধারণ মানুষকেও করে তুলেছিলো অগ্নিস্রাবী। ভেঙ্গে যাচ্ছে বাস্তিল দুর্গ আর রুশোর মেধাস্ফুরিত সেই হাতেগরম তত্ত্ব যেন বাতাসে দৌড়ে চলেছে-- Man is born free but everywhere is in chain. বাক্যের দ্বিতীয় অংশটি পরে বুঝে নিলেও চলবে, হাজার হাজার কণ্ঠে শুধু উচ্চারিত ম্যান ইজ বর্ন ফ্রি... ম্যান ইজ বর্ন ফ্রি... ম্যান ইজ বর্ন ফ্রি... এমন কি শব্দের দাসত্বও পরিত্যাজ্য।

তো এই সেই জীবন যাকে বয়ে নিয়ে চলেছি দাঁত নখ আর ভয়ঙ্কর সব স্বপ্ন দেখা দুঃস্বপ্নের রাত্রি সাঁতরে। ভাবছি কাকা থাকলে এখনও কি শুধু উকুন মারার শব্দ গোনার জন্যই আড়ালে কোন কচুবনের মধ্যে ঢুকে সারাদিন নিজেকে লুকিয়ে রাখতো বা লুকিয়ে রাখতে পারতো, নাকি ছদ্মবেশ ছেড়ে এই ফেবু হোয়াটসাপ, ইনস্টা, টেলিগ্রাম ইত্যাদির চক্করে নিরন্তর ফোন খিচে যেত লেনিন স্ট্যালিন মাও বুখানিন ইত্যাদির সাথে চ্যাটানোর জন্য? কিম্বা সেজেগুজে দেখা গেলো হঠাৎ এসে বলে  বসলো, আজ একটু স্টেটে যেতে হচ্ছে বিল গেটসের সঙ্গে একটা ইন্টারভিউ আছে। পৃথিবীর জনসংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার যে প্রোজেক্টটা ওনারা লঞ্চ করতে চলেছেন তার এপ্লায়েড দিকটা নিয়ে একটু কথা বলতে হবে, ইত্যাদি। জানিনা কাকা আজ কোথায়, আমাদের আত্মহননের প্রচেষ্টা বিষয়ক ছোট ছোট ঢপের এপিসোডগুলো কাকার কেমন লাগতো, খুব জানতে ইচ্ছে করছে। ইনিয়ে বিনিয়ে কিছু মানুষের সেন্টিমেন্ট ঝোলায় ভরে টিআরপি বাড়ানোর এই বাণিজ্যিক প্রক্রিয়াটা বাজারে হেব্বী খাচ্ছে। আপাতত আত্মহনন বিষয়টিকে নিয়ে একটা ফিচারফিল্মের আইডিয়া মাথায় লটকে গিয়েছে, কাকা থাকলে খুব কাজে লাগতো কাকার তাত্বিক বিশ্লেষণ। কিন্তু কোথায় পাবো তারে! এখন তো গরুর হাগু মুতু দিয়ে উঠোন নিকোনোর হল্লাবাজি চলছে, এখানে নাকি ধ্বজা পোঁতা হবে। কপালে ফোঁটা মেরে সব সৎ ও সতীরা মিছিলে মিছিলে গাঁদার পাঁপড়ি ছড়িয়ে ঘোলা করে দিতে চাইছে ময়দান। বরং আমার গরম মান্তুসোনা, আবার তাকে একটা ফোন মারা যাক, সে যেন ভুল করে অন্য পথে চলে না যায়...

লেখকের কৈফিয়ৎ

লেখাটির উপজীব্য কয়েকটি শব্দ বিভিন্ন প্রেক্ষিত থেকে কুড়িয়ে নেয়া। কলাবাগানের কাকার কাছে মাথার উকুন তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে জোতদারের পোষা গুণ্ডার তাৎপর্য যেমন বহন করে, তেমনই বাল বা লালসাও অর্থবহ হয়ে ওঠে বৈচিত্রময় ব্যবহারিক প্রেক্ষিতে। যেমন পানি যতই পানীয়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকুক তার ব্যবহারে দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক প্রেক্ষিত ওতপ্রোত হয়ে গেছে। সেই সংস্কার থেকে এত সহজে বেরিয়ে আসা যাবে না যদি না ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষেরা সচেতনভাবে নিজেদের ব্যবহারের জলের বদলে পানিকে ব্যবহারের ক্ষেত্র আমজনতার কাম অনুরাগে মিশিয়ে  না দিতে পারে। যেমন বাল মানে যতই হিন্দী ভাষার চুল হোক না কেন, আমার বা আপনার ঘরের বাচ্চাটিকেও ক্ষমা করবেন না, যদি সে চেঁচিয়ে ওঠে, বাবা, মা এখন বাল আঁচড়াচ্ছে!

 

       


3 কমেন্টস্: