কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০২৩

সম্রাট লস্কর

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৬


তোমার এই শহরে    

পার্ক সার্কাস ময়দানে রং লেগেছে ডিসেম্বরের এই দুপরে। রঙিন ফ্ল্যাগ, রঙিন ফেস্টুন, রঙিন মানুষ। স্পন্দিত এই ভিড়কে জুড়েছে এক উদ্ধত রংধনুর সেতু। তুমি এলে সেই রংধনু ভেদ করে। রঙিন তুমি। কী যে সুন্দর লাগছে তোমায়! এই প্রথম আমাদের মুখোমুখি দেখা। সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরে, ফোন কল, ভিডিও কলের বাইরে। তুমি জড়িয়ে ধরলে আমায়। তীব্র ভাবে।

“অবশেষে দেখা হল, বলো?”

“সত্যিই তাই”, আমি বলি। “কতদিন ধরে যে এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”

“আমিও তো। কী মিষ্টি যে তোমায় দেখাচ্ছে আয়েশা!”

এ’সব কথা ভিডিও কলে কি শুনিনি আগে? কিন্তু সামনাসামনি শুনে কান, গাল উষ্ণ হয়ে উঠল।

“তুমি তো ব্লাশ করছ দেখছি”, তোমার ঠোঁটে দুষ্টু হাসি। আমার চোখ নত হল কিছুক্ষণ। কিন্তু তোমার দিকে না তাকিয়ে কতক্ষণ থাকব? আমি তাকালাম আবার তোমার দিকে। পূর্ণ দৃষ্টি মেলে।

হাঁটার পালা শুরু হল আমাদের। তোমাদের শহরের এই গর্বিত মিছিলে। এই শহরে, এই মিছিলে প্রথমবার আমার। কিন্তু তুমি তো পাশে আছ। রঙিন পার্ক স্ট্রিট দিয়ে আমরা হাঁটছি। তুমি পাশে। তাকিয়ে দেখছি তোমায় অপাঙ্গে। মাপছি তোমায় নির্লজ্জতার নিজস্ব একক দিয়ে।

মানতেই হবে তোমার এই শহর, আমার শহরের মতো, আমার দেশের মতো নয়। এ এক অদ্ভুত রংধনুর শহর। এই শহর কি আমায় আশ্রয় দেবে? অনুমতি দেবে যাতে আমি তোমার পাশে হেঁটে যেতে পারি? শুধু আজকে নয়? আরো কয়েক দিন? সপ্তাহ? বছর? দশক? জীবন?

হাঁটার শেষে শুরু হয় এক অন্য রকমের উল্লাস। স্বস্তির, মুক্তির, আনন্দের উচ্চকিত ঘোষণা।

“একটা চ্যানেল আমার ইন্টারভিউ নেবে এখন। আমি ওটা দিয়ে আসি?”

“ইন্টারভিউ? আমি যাই তোমার সাথে?” আমি জানি তুমি তোমাদের এই শহরে বেশ জনপ্রিয়। বেশ নাম করা লেখিকা, সমাজকর্মী। তোমার কয়েকটা সাক্ষাৎকার তো সোশ্যাল মিডিয়াতেই দেখেছি। তাই দেখেই তো যোগাযোগ করেছিলাম নিজে থেকেই। তারপরেই তো…। কিন্তু এখন তোমার লাইভ ইন্টারভিউয়ের সময় আমি পাশে থাকতে চাই। তুমি যদি টেলিভিশন চ্যানেলের সামনে ঘোষণা করে দিতে চাও, আমার কথা, আমাদের কথা, তাহলেও আমার আপত্তি নেই। আমি তো সেটাই চাই।

“ঠিক আছে”, তুমি বলো। কিছুটা কি স্তিমিত গলায়? বুঝি না ঠিক।

প্রশ্ন শুরু হয়। তুমি অনায়াস দক্ষতায় প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে যাও। আমি তোমায় দেখি। মুগ্ধ হই আরো। ডুবি গভীরে।

“আপনি নিজে স্ট্রেট হয়েও…?” প্রশ্ন ধেয়ে আসে। আমি মুগ্ধতা থামিয়ে তোমার দিকে তাকাই। স্ট্রেট! কী উত্তর দেবে তুমি এই প্রশ্নের? তুমি থমকে যাও এক মুহূর্ত। তারপর উত্তর দিতে শুরু করো। আমি শুনি। একের পর এক ভাঙনের আওয়াজ হয় ভিতরে। কী সহজ ভাবে ঘোষণা করছ তোমার স্ট্রেটনেসের কথা…ক্যুয়ারদের প্রতি তোমার সহমর্মিতার কথা। ওরা আলাদা হলেও ওদের অধিকার কে তুমি সম্মান করো, মান্যতার জন্য লড়াই করে যাও। ওরা, ওদের! স্ট্রেট, ক্যুয়ার; সোজা, বাঁকা; আমরা, ওরা। আগে কেন বলো নি এ’কথাগুলো কোনোদিন? তোমার ইন্টারভিউ চলতেই থাকে। তোমার এই শহরে আমি দাঁড়িয়ে থাকি, একা। রঙিন নয়, ফ্যাকাশে এই শহর।

তোমার ইন্টারভিউ শেষ হওয়ার পর তুমি কি আমার দিকে আর তাকাবে, রমিতা? তাকালেও আমাকে কি খুঁজে পাবে তোমার এই শহরে?                                

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন