কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০২৩

অচিন্ত্য দাশ

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৬


সমুদ্র, কুকুর এবং

বালিয়াড়ি অনেকটা, তারপর সমুদ্র। প্রশান্ত মহাসাগর। জায়গাটা শহরের কাছে আর তাছাড়া রাস্তা থেকে সমুদ্র অবধি বিস্তৃত খোলা জমি আছে বলে এখানে অনেকে নিজেদের পোষা কুকুর নিয়ে আসে।  কেউ কুকুর সঙ্গে নিয়ে হাঁটে, কেউ দৌড়ে বেড়ায়। যাদের স্বাস্থ্য নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই তারা অবশ্য কুকুর ছেড়ে দিয়ে নিজেরা স্রেফ বসে থাকে।

একটা লোক এসেছে একটা গুলতি ধরনের যন্ত্র হাতে করে, ওটা দিয়ে রবারের বল অনেক দূরে ছোঁড়া যায়। তা দিয়ে একটা লাল বল সে সমুদ্রের দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে আর তার বাধ্য কুকুরটি ছুটতে ছুটতে দূরে গিয়ে বল মুখে করে নিয়ে আসছে। কুকুরটার চেহারা ছিপছিপে, দৌড়লে চিতাবাঘের মতো লাগে। আর তার দম দেখার মতো। অতটা দৌড়ে বিশেষ হাঁপিয়ে পড়ছে না। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আবার দৌড়োবার জন্য সে তৈরি। ভারি চটপটে কুকুর।

লোকটা বোধহয় গুলতির ফিতেটা বেশি টেনে ফেলেছিল - বলটা বালুকাবেলা ছাড়িয়ে জলের ভেতরে পড়ে গেল। কুকুরটা দৌড়ে গেল ঠিকই কিন্তু জলের কিনারায় এসে দাঁড়িয়ে পড়ল। হয়তো অভ্যাস নেই বা জলে তার ভয় আছে। অবশ্য সমুদ্রের ঢেউ সবকিছু ফিরিয়ে দেয় - দু-চারটে ঢেউ বলটা লোফালুফি করে বালুতটে আবার রেখে দিয়ে গেল। কুকুর বল কুড়িয়ে প্রভুর কাছে ফিরে গেল। এরকম আরেকবার হল। বল আবার জলে পড়ল। সাগরের ঢেউ আবার বলটাকে যত্ন করে রেখে গেল বালিতে।

সন্ধে হয়ে আসছে। সূর্যদেব পাটে নেমেছেন। আকাশে নানা রঙের খেলা। জলে অবশ্য নীল আর আসন্ন অন্ধকারের কালচিটে ভাব ছাড়া অন্য রং নেই। দিকচক্ররেখা আবছা হয়ে আসছে। এইরকম সময় মানুষ দার্শনিক হয়ে পড়ে। অতীতকাল, মানে হয়তো সেই পুরনো পাথর যুগ থেকে এইরকমই হয়ে আসছে। আমি কে, এই এতবড় দুনিয়ায় আমার কাজটা কী, ঈশ্বর আছেন কি নেই – এইসব উত্তরহীন প্রশ্ন মনের ভেতর বারকয়েক আসা-যাওয়া করেই থাকে।

নজরে পড়ল দুবারের বার সমুদ্র তার জিনিস ফিরিয়ে দেওয়াতে কুকুরটা ওইখানটায় দাঁড়িয়ে পড়ল। দূরের দিকে তাকিয়ে রইল কয়েক সেকেণ্ড। এ কুকুর তো ক্লান্ত হয়ে থেমে থাকার নয়। আমার মনে হলো, কুকুরটা সমুদ্র আর আকাশের সীমানার দিকে তাকিয়ে অস্ত সূর্যের রয়ে যাওয়া আলোয় কী যেন খুঁজছে। কী একটা বুঝতেও চাইছে যেন। এদিক থেকে তো তার প্রভু বল ছুঁড়ে দিচ্ছে, তবে ওদিকে তো শুধু জল আর জল। ওপরে আকাশ আর সন্ধের রাঙা মেঘ ছাড়া আর তো কিছু নেই। তাহলে ঢেউ-এর ঝাপটায় বলটা বারবার তার জন্য বালিতে কে রেখে যাচ্ছে? আকাশে বা জলের ভেতরে কেউ কি তাহলে লুকিয়ে রয়েছে! এমন কেউ যাকে সে দেখতে পাচ্ছে না…

 




0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন