কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০২৩

অর্ক চট্টোপাধ্যায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৬


জোড়

বিকেলের পড়ন্ত আলোয় ছোট্ট হলুদ সাইকেলে চড়া বাচ্চা যেদিন পিছু পিছু এসে বাড়িতে ঢোকবার আগে ওকে জিজ্ঞাসা করলো, 'কাকু, তুমি কার বাবা?' আর মধ্যরাতের অন্ধকার বিছানায় চাপা দুরমুশ পেটার শব্দ শুনে যেদিন সে আর বুঝতে পারলো না, শব্দটা বাইরে হচ্ছে না ভেতরে! একসঙ্গে লেখার ফলে আদৌ কি এই  দুই ঘটনার মধ্যে কোন সম্পর্ক স্থাপিত হল? মানুষের মন! কিসের সঙ্গে কী জুড়ে দেয়! লিখে দেয়। আজব সব সম্পর্ক গড়ে ওঠে  যেখানে আসলে কোন সম্পর্ক নেই! নেই কি? নিশ্চিত করে কি বলা যায়, নেই?

তারপর ভাষা আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে আসে, জ্বালাতন বন্ধ করে দেয়, যেন সকল নোটিফিকেশন অফ করা সাইলেন্ট স্মার্টফোন।

পাহাড়ু পথ। ইচ্ছেগাঁও। সারারাত বিছানায় স্বামী স্ত্রী বৃদ্ধ এক কুকুরের কান্না শুনেছিল। ঠান্ডা লাগছিলো নাকি মৃত্যু হানা দিচ্ছিল সারমেয় মনে? ওরা দুজন কান পেতে শুনেছিল সারারাত। ঘুমোতে পারেনি। দরজা খুলে ডেকেও নিতে পারেনি কুকুরটাকে! পরদিন সকালে দেখেছিল শান্ত বসে রোদ পোহাচ্ছে। লোম চকচক করছে রোদ্দুরে।

প্রবীর দাশগুপ্ত। অল্পবয়েসে মারা যায়। কবিতাগুলো কোন জাদুবলে যেন থেকে গেছিল। খুব কি অসামান্য ওর কবিতা? নাকি সামান্য? ও জানে না, তবে মুখে মুখে ফিরেছিল এক দশক অন্তত। ওরা তখন কলেজে। প্রবীরের ডায়েরিতে পাওয়া গেছিল অসম্পূর্ণ এক গল্পের শুরুয়াত। বন্ধ কারখানার শ্রমিক ছিল তার কেন্দ্রীয় চরিত্র। প্রবীর তাকে বলেছিল 'প্রতিনায়ক'! লোকটার নাম দিয়েছিল 'টাইমবাবু'! নিরন্ন বাড়িতে তিন শিশুর কান্না। টাইমবাবু জানতেন এক ধমকে চুপ হয়ে যাবে সবাই, কিন্তু ধমক দিতে পারেননি। শব্দ বা কান্নাকে "জবরদস্তি হত্যা করে তিনি  কি শবদেহ পাহারায় শ্মশান জাগবেন?", এমনটাই লিখেছিল প্রবীর। তারপর আর বিশেষ লেখেনি।

ওরা স্বামী স্ত্রীও কুকুরের কান্না থামাতে পারেনি। ধমক দিলেও কি থামতো? কে জানে হয়ত টাইমবাবু স্বয়ং দেখা দিয়েছিল পাহাড়ের শীতার্ত মধ্যরাত্রির বুকে, প্রাজ্ঞ সারমেয়কে, সময়ের দূত হয়ে?

একসঙ্গে লেখার ফলে আদৌ কি এই  দুই ঘটনার মধ্যে কোন সম্পর্ক স্থাপিত হল? মানুষের মন! কিসের সঙ্গে কী  জুড়ে দেয়! লিখে দেয়। বাচ্চার প্রশ্ন প্রতিধ্বনিত হয়, ভেতরে না বাইরে, বোঝা যায় না। প্রতিনায়ক আয়নায় নিজের ছায়াময় মুখের প্রতিফলন দেখে মনে মনে জিগোয়, সে কার বাবা? হয়ত এই তার ডার্ক ডিসেন্ট ইন্টু ম্যাডনেস।  অথবা নিজের যন্ত্রণাকে সে বড্ড বেশি ভালোবসে।

তারপর ভাষা আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে আসে, জ্বালাতন বন্ধ করে দেয়, যেন সকল নোটিফিকেশন অফ করা সাইলেন্ট স্মার্টফোন।

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন