কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০২২

সুবল দত্ত

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৯


আলো ও আঁধারের জাদুকর    

‘তোমার ফ্ল্যাটটা বড়ো নোংরা’, স্বদেশের কাঠকাঠ জবাব। ‘ঘরের মেঝেতে ম্যাজিকের সরঞ্জাম ছড়িয়ে রেখেছ কেন? আমাদের সূর্যের উপাসকেরা বলে, ওতে হলুদ আলোর প্রভাব পড়ে সন্মোহক ক্ষমতা দূষিত হয়। যেখানে যার অধিষ্ঠান সেখান তার থাকা উচিত। আর… আর ঘরময় গর্ভবতী পশুমাংসের গন্ধ? ছি ছি তোমরা ওদেরও ছাড়ো না? যা প্রকৃতির বর্জ্য তাই তোমাদের পূজোর সামগ্রী?’

বিদেশের উদ্ধত জবাব, ‘তোমার ঘর, তুমি উপযুক্ত ভাড়া পাচ্ছ, এর বাইরে তোমার এসব প্রশ্ন করার কোনো অধিকার নেই। আমরা চন্দ্র উপাসক। আমরা দিন বুঝি না। রাত বুঝি। এর বেশি জানতে চেয়ো না’। এই কথা বলে বিদেশ জাদুকর মাথা টানটান উঁচু করে জামা একটানে খুলে ফেলে ছুঁড়ে দেয় মেঝেতে। মুখ ভর্তি খৈনির থুতু জানালার বাইরে পিচকারির মত পচ করে ছুঁড়ল। স্বদেশ মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল, ‘আমাদের নিয়মে আছে, জামাকাপড় পরে যখন তুমি ঘর থেকে বের হয়েছিলে তখন তুমি পরিবেশে ছড়িয়ে পড়েছিলে। তখন নিজের ও অনেকের খুশি দুঃখ দয়া ঘৃণা তোমার পোষাকে মিশেছে। নিজেকে আরও ভাল বোধ কর বা খারাপ, নির্ভর করে পোশাকে কেমন দৃষ্টি ও আলো পড়ে তার  ওপর। পোশাক সবসময় আবেগকে বস্তুতে রূপান্তরিত করে। এটি দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যের মধ্যে সেতু। যেমন শান্তির মৈত্রীর পোষাক সাদা। শোকের পরিধান কালো। কিন্তু ভাই, তুমি এখন কি না কি অদৃশ্য অবগুণগুলি ঘরময় ছড়িয়ে দিলে? কোথাও টাঙ্গানো হলে পোশাক এমনকিছু ক্ষতিকারক হতে পারে না’।  স্বদেশ  জাদুকর চুপ করতেই বিদেশ ওর হাত খপ করে ধরে টেনে নিয়ে এলো বাইরে। ফাঁকা দিগন্তে অস্তগামী লাল সূর্য। বলল, ‘ভালো করে চেয়ে দেখ, সূর্য ক্ষমতাহীন হয়ে এল। রাত্রি এবার প্রাণীদের হিংস্র হতে শক্তি দেবে। পৃথিবীর সমস্ত মানুষের ভিতরে চন্দ্র উপাসনা ছড়িয়ে পড়ুক এই আবেদন আমরা সমস্বরে আকাশের দিকে গলা উঁচু করে প্রার্থনা করব। বড় বড় প্রাণীদের রক্ত মাংসে শক্তি  বাড়াব। অন্ধকারের অসীম শক্তি। তার তোমরা কি জানো? মারকাট খুনখারাবি যেমন করেই হোক আমাদের অন্ধকারত্ব বাড়াতে হবে’।

স্বদেশ জাদুকর হাওয়ায় হাত ঘুরিয়ে হাত পাততেই একটা  অমৃত ফল অশত্থ  পাতা ও শিউলি ফুল এল। বলল, ‘এসবই সূর্যের অবদান। সূর্য বাইরে নিষ্ঠুরতা  ছড়িয়ে দিতে বলে না। অন্তর্মুখী প্রশান্তি আনে। পৃথিবীতে দুইই সত্য। অন্ধকার থেকে আলোয় যাত্রা ও আলো থেকে অন্ধকার কামীতা। আমরা কাউকে সূর্য উপাসক হতে বলি না। সে তো জন্ম থেকেই সূর্যের অংশ। তোমরা তাকে অন্ধকারে দীক্ষিত করো’।  

ফাঁকা মাঠের মাঝে এই ঘরটি একটি সূর্য মন্দির। দিনের বেলায় মস্ত তালা ঝোলানো থাকে। সন্ধের পর অল্প আলোয় শক্তি সাধনা চলে। বিদেশ জাদুকর হাঁটু মুড়ে বসে দুই হাত উপরে তুলল। একটু পরেই একটা আগ্নেয়াস্ত্র হাতে চলে এল।…

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন