কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৯ |
গল্পগুলোর গল্প – ৩
বাজারে যাওয়া সবচেয়ে অপছন্দের কাজ হবার পরেও বাবার কনে আঙ্গুল ধরে ছোটবেলায় বাজারে যেতাম। আমাকে বলতেন কী মাছ খাবি?
পেটমোটা ইলিশ মাছ দেখিয়ে বলতাম,
ডিম খাব। বাবা বলতেন, সবসময় ডিম
খেতে হয় না। তাহলে মাছের বাচ্চা হবে কী
করে?
অনার্স পরীক্ষা দেবার পর বাসা থেকে পালিয়ে চাঁদপুর চলে গেছি। মেঘনায় নদী পাড়ের ভাসমান হোটেলগুলির একটিতে একদিন খেতে গিয়ে আমাকে আবিষ্কার করলেন আমার বিশ্বনাথ স্যার, যিনি আমাকে ক্লাস এইটের বৃত্তি পরীক্ষার অংক করাতেন।
বেলাল নামে আমাদের যে কাজের ছেলেটি ছিল সে আমাকে বলত, আসেন ভাইজান, বিড়ি খাই দুই ভাই। বেলাল নামে আমার আরেকজন ভাইয়ের
সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে দেখে মনের আনন্দে বিড়ি
খেয়েছিলাম।
বেলাল আমার সামনেই লুঙ্গিটা তুলে হিসু করতো আর বলত, ভাইজান
বেশি খাবেন আর বেশি বড় করবেন। বড় না হইলে ব্যাটা মাইনষের দাম নাই। ইলিশের যেমন ডিম
ছাড়া জেবন বৃথা…
আমাদের পাশের বাসায় দীপালী নামে একটা মেয়ে ছিল। পড়াশোনায় খারাপ। অংকে আরো খারাপ। মাঝে মাঝে অংক করিয়ে দিতাম।
বেলাল আবার মন্ত্র দেয়-
: ও ভাইজান,
সুযোগ মতো একদিন জাপটে ধইরবেন। না ধইরলে ইলিশ মাছের পেটে ডিম হবি
কেমনে?
আমার একটা মোরগ ছিল ছোটবেলায়। নাম রেখেছিলাম মন্টু। মন্টুকে কোলে করে নিয়ে এ পাড়া ও পাড়া করতাম, মোরগ লড়াই করতাম। ক্ষত বিক্ষত মন্টুকে দেখে কেঁদে ফেলতাম। ঘুমোতে যাবার আগে স্বপ্ন দেখি, মন্টু আর আমি তুরস্ক চলে যাচ্ছি। কোথায় যেন পড়েছিলাম তুরস্কের লোকজন মোরগ লড়াই খুব পছন্দ করে। মন্টু সব জায়গায় চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে, আমার গলায় সোনার মেডেল।
একদিন ভোরে ওস্তাদ বেলাল সাহেব মন্টু আর বাসার কিছু টাকা পয়সা
নিয়ে নিখোঁজ।
ক্লাস এইটে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পেয়ে গেলাম। বাসায় আমার দাম বেড়ে
গেল হু হু করে। ইলিশ মাছের ডিম চাইলেই পাই। দীপালী আমার দিকে মিটিমিটি গদগদ হাসি
নিয়ে তাকালেও দীপালীকে পাত্তা দিই
না।
আয়নায় নিজের ঈষৎ গোঁফ দেখে ভালো লাগে। বাইরের ব্যালকনিতে রৌদ্র ছায়ায় ঝুলে থাকা ব্রা লুকিয়ে দেখতে ভালো লাগে। কলাবেণী করে মেয়েরা স্কুলে যায় স্কুলের ইউনিফর্ম পরে, ভালো লাগে। পাহাড় থেকে নেমে আসা বাতাসের ঘ্রাণে চারপাশ লাবণ্য ভালো লাগে। লুকিয়ে সিনে ম্যাগাজিন দেখি। এলায়িত রঙ্গীন নায়িকারা আমার চারপাশে দোল খেতে খেতে ঝরণার হাসির মতো ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ে…
আমি বড় হতে শুরু করি। কবিতার রূপনারাণের কূলে আমি জেগে উঠি...
একটা ভয়, একটা অনিশ্চয়তায় নিজেকে আড়াল করতে
লুকিয়ে ডুব দিই রোম্যান্টিক এক গল্পে। একদিন আচনক ‘অনুক্ষী’ নামে একটা মেয়ের নাম
কানে এলো।
এই প্রথম আমি শুধু নাম শুনেই লিখতে বসে গেলাম অনুক্ষীকে
নিয়ে গল্প। লিখে ফেললাম ইচ্ছা মতো রোম্যান্টিক
একটা গল্প: আমি কেন তিথি ডোরে বাঁধা রে!
এই গল্পে অনুক্ষী হেঁটে কোথায় যে চলে যায়, আমি অন্যদিকে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন