কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৯ |
কবিতা
কবিতার সব কথা গুমঘরে বন্দী। চাঁপা ফুলের মতো বিকেলে ও অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে বসে থাকে। ঘরটাতে অজস্র পোকা ঘুরে বেড়ায়। কবিতার মা দেখতে পায় না সেসব। কিন্তু কবিতা দেখতে পায়। পোকারা ওকে কামড়ায়। মা মাঝে মাঝে কবিতার ঘরে আসে। শিউলি ফুলের মত ভোর থাকে তখন। কবিতা মাকে দেখে। ভোরেও বিষণ্ণ বিকেলের চোখ। হঠাৎ কবিতার মনে হয় মায়ের দু'চোখের মণিতে সেই কবেকার মেঘ। গালে যেন ঝোড়ো হাওয়া। কবিতার শীত করে। মাকে চলে যেতে বলতে চায়। পারে না। তখন কবিতা শুয়ে পড়ে। মাটির মতো দেখতে মেঝেটাতেই শুয়ে পড়ে। মা খাবার রেখে যায়।
বাঁশবাগানের ওপার থেকে একটা বিকেল নেমে আসে। কবিতার ভাই বাড়ি আসে তখন। কবিতার ঘরের দিকে তাকায়। একমুঠো অবজ্ঞা ছুঁড়ে দেয়। ওর হাতে ফুটবল। ঠিক তখনই কবিতার শরীরে তীব্র দহন-জ্বালা শুরু হয়। এই দরজা ভেঙে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। হঠাৎ কবিতার মনে হয় এই এক ফালি ঘরের মেঝেটা একটা সবুজ ঘাসের মাঠ। কবিতার পা নড়ে ওঠে।
"ছাওয়ালের মত ফুটবল খেলবি লো মাগী!” আকাশ ফুঁড়ে একটা চিৎকার ভেসে আসে। ঠাকুমা বোধহয়। তারপর একটা সাদা রংয়ের স্রোত বয়ে যায় কবিতার শরীর দিয়ে।।
এমনই একটা সূর্যমুখীর মতো বিকেল ছিল সেদিন। রোজ চাতক পাখির মত মাটির দিকে তাকিয়ে থাকতো কবিতা। সেদিন ভাইয়ের জ্বর ছিল। কবিতার গায়েও ইচ্ছেজ্বরের উত্তাপ লাগলো। ভাইয়ের ফুটবলটা হাতে নিয়ে মাঠে গিয়েছিল। সবাই কেমন শুকনো, ঝরা ফুলের মত করে তাকিয়েছিল ওর দিকে। ‘মেয়ে ছেলের শখ দেখো!’ আকাশী শার্ট পরা ছেলেটার তীক্ষ্ণ নজর। দৌড়ে চলে এসেছিল কবিতা। তবে ফুটবলটা বেমক্কা ছুঁড়ে মেরেছিল ছেলেটার বুকে। রাগে, ক্ষোভে, যন্ত্রণায় কবিতা তখন হাঁপাচ্ছে। পরের দিন বিকেলেই সাদা তরলটা জানালার বাইরে দিয়ে কবিতার মুখে ছুঁড়ে মেরেছিল। ওটাকে নাকি অ্যাসিড বলে!
শুকনো পাপড়ির ফুল যেন কবিতা। খসে পড়েছিল চামড়া। তারপর হাসপাতাল-ঘর। চোখে আবছা দেখে এখন। বাড়ির উঠোনের ঘরটাই এখন কবিতার মাঠ। রোজ বৃষ্টির অপেক্ষা করে। শুকনো, বিবর্ণ, পুড়ে যাওয়া পাপড়ির মত মুখ নিয়ে কবিতা বৃষ্টির আশা করে। যে বৃষ্টি মুছে দেবে ওর আগুনখসা চোখের জল। তারপর…
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন