কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০২২

দুটি চিঠি

 

পাঠক-পাঠিকা

বেশ কিছু বছর ধরে ‘কালিমাটি অনলাইন’ নিয়মিত পড়ি। এই মুহূর্তে বাংলা   সাহিত্যে যে কয়েকটা অনলাইন পত্রিকা সাহিত্য নিয়ে সিরিয়াস কাজ করছে, কালিমাটি তাদের অন্যতম। এখানে মলয় রায়চৌধুরীর মত স্বনামধন্য লেখক যখন আভাঁগার্দ সাহিত্য নিয়ে লেখেন, অনেক কিছু শেখা যায়। আর তাই মাঝে মাঝে এই পত্রিকার লেখায় ফাঁক দেখলে সেই নিয়ে কিছু বলতে ইচ্ছে করে। সমস্যা হচ্ছে আপনার পত্রিকায় ‘পাঠকের কলাম’ বা ‘চিঠিপত্র’ বলে কোন  বিভাগ নেই। থাকলে লেখক-পাঠক উভয় তরফের যোগাযোগে সুবিধে হত। যাইহোক, এই চিঠি আপনাকে পাঠাচ্ছি, আপনি কীভাবে সবার হাতে তুলে  দেবেন বা আদৌ দেবেন কিনা, সেটা আপনার ব্যাপার।

আমি যেহেতু কবিতা জগতের লোক, তাই এই চিঠি কবিতা নিয়ে। আরো ভালভাবে বললে ‘প্রতিবেশী সাহিত্য’ বিভাগ নিয়ে। একদম পিনবেঁধা ক্যামেরায়  বললে, বাণী চক্রবর্তীর এপ্রিল-মে-জুন সংখ্যায় প্রকাশিত লেখা নিয়ে। তবে লেখা শুরুর আগে আমি সশ্রদ্ধভাবে লেখিকাকে জানিয়ে রাখি যে, যে কোন গঠনমূলক সমালোচনা লেখার উদ্দেশ্য হল ভবিষ্যতে আরো নিখুঁত লেখা পাওয়ার আশা। আমিও সেই আশা নিয়েই লিখছি।

এপ্রিল মাসে বাণী লিখেছিলেন পাবলো নেরুদাকে নিয়ে। মে মাসে রুপার্ট ব্রুক-কে নিয়ে। এবং জুন মাসে উনি লিখেছেন খালিল জিবরানকে নিয়ে। এদের সবার অনুবাদ নিয়ে কিছু বলার আগে আমার প্রথম মন্তব্য, লেখিকা এনাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি অত্যন্ত কৃপণভাবে দিয়েছেন। কয়েক লাইন মাত্র। জিবরানের তো  মৃত্যুদিনটাও লিখলেন না (১০ এপ্রিল)। কারো লেখার স্টাইল নিয়েও কোন মন্তব্য বা আলোচনা দেখলাম না। এত তাড়াহুড়ো? এত কৃপণতা? তাহলে পাঠক এনাদের সঙ্গে পরিচিত হবেন কী করে?   

এবার আসি একে একে সংখ্যার কথায়। পাবলো নেরুদার অনুবাদে আমার প্রথম আপত্তি ভাষা নিয়ে। ‘I like u calm as if u were absent’ বা ‘I crave ur mouth, ur voice, ur hair’। ‘you’ নয় ‘u’, ‘your’ নয় ‘ur’ – এটা কি ভাষা? কবিতার হোয়াটস্যাপিকরণ? প্লিজ এটা করবেন না। কবিতাকে ভাষায় একটু  বিশুদ্ধ থাকতে দিন। এবার অনুবাদ প্রসঙ্গে। ‘I like u calm as if u were absent’এর আক্ষরিক বাংলা অনুবাদ ‘আমি পছন্দ করি তোমার মৌনতা’ কি ভাল শোনাচ্ছে? কোথাও বাঙালি হিসেবে একটু কানে লাগছে না? ওটা কিন্তু আরেকটু ভাল শোনাত যদি ‘আমি তোমার মৌনতা ভালবাসি’ লেখা হত। ভেবে  দেখবেন। দ্বিতীয়ত, এই কবিতাগুলো কোন্‌ বই থেকে নেওয়া সেটাও তো বলা  দরকার। হয়ত কেউ কেউ জানেন এগুলো Twenty Love Poems থেকে নেওয়া। কিন্তু সবাই তো জানেন না!

বাণী খুব ভাল কাজ করেছেন যে, মে মাসে রুপার্ট ব্রুকের মত স্বল্পখ্যাত কবিকে  আমাদের সামনে এনে হাজির করেছেন। কিন্তু সেখানেও একটু আক্ষেপ রয়ে গেল। ব্রুকের দেশপ্রেমী কবিতার সঙ্গে পাঠকের সঠিক অর্থে পরিচয় ঘটানোর জন্য তাঁর সব বই থেকে অন্তত একটা করে কবিতা নিয়ে আলোচনার দরকার  ছিল। সেটা কি হয়েছে? ব্রুকের সেই বিখ্যাত কবিতা ‘if I should die, think only this of me, / that there’s some corner of a foreign field/ that is forever England’ এখানে তো দেখলাম না!

জুন সংখ্যায় খালিল জিবরানকে নিয়ে লেখায় বাণীর অন্তত একটা ব্যাপার বলা দরকার ছিল। ওনার প্রকৃত নাম ‘খালিল’, ‘কাহলিল’ নয়। ঐ ভুল বিভিন্ন  জায়গায় থেকে গেছে এবং তাই নিয়ে বিস্তর আলোচনাও হয়েছে। এছাড়াও, আগের রেশ ধরেই বলি, কবিতাগুলো কোন বই থেকে নেওয়া, সেটাও বলা দরকার ছিল। আসলে আলোচনাধর্মী যে কোন লেখাই লেখকের গবেষণার ফসল  হিসেবে উঠে আসা দরকার। তবেই তো পাঠক সেখান থেকে নতুন কিছু পাবে, সেই সূত্র ধরে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাবে। যাইহোক, আজ এই পর্যন্ত। ভুল বুঝবেন  না। পত্রিকার মান আরো বৃদ্ধি পাক, সেই আশা নিয়ে এত বিক্ষিপ্ত শব্দ।  

স্বপন নন্দী

কলকাতা

০২-০৭-২০২২


‘কথনবিশ্ব বিভাগে প্রকাশিত কিম জে-হিউনের এক সাক্ষাতকার, যার অনুবাদ করেছেন অদিতি ফাল্গুনি, পড়ে আমার মনে হলো, পাঠকের মনে কোনো লেখা প্রথম থেকেই এক অভিঘাত তৈরি করে, যে অভিঘাতের রেশ ধরে লেখায় আস্তে  আস্তে অনুপ্রবেশ করে, আর তাই লেখার শুরুতেই লেখার সারমর্ম থাকলে পাঠকের পক্ষে সুবিধে হয়। কিন্তু এই লেখায় আমরা দেখলাম কিম কি-দুক এক জনপ্রিয় কোরিয়ান চিত্র পরিচালক যার সাক্ষাতকার নিয়েছেন কিম জে-হিউন। এবং ‘গত মঙ্গলবার (ধরে নিলাম ১৫ জুনের আগের মঙ্গলবার) নাকি তাঁর নির্মিত ছবি ‘স্টপ মাত্র ২৪১ জন দর্শক হলে বসে দেখেছেন। ‘গত  মঙ্গলবার ‘দ্য কোরিয়া টাইমস্-এর সাথে তাঁর কথা হয় এবং সেই সাক্ষাতকারই অদিতি  ফাল্গুনি পাঠকের জন্য অনুবাদ করেছেন। কিন্তু পুরো সাক্ষাতকার শেষ হবার পর দেখতে পেলাম, এই সাক্ষাতকার ‘দ্য কোরিয়ান টাইমস্’-এ প্রকাশিত হয়েছিল  ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬। এবং কিম  কি-দুক কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১২ ডিসেম্বর ২০২০ (যদিও এই তথ্য ভুল, কারণ তিনি মারা গেছেন ১১ ডিসেম্বর  ২০২০)। আমার প্রশ্ন, অনুবাদক অদিতি ফাল্গুনি কি এই দুটো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লেখার শুরুতেই তুলে দিতে পারতেন না? বলতে পারতেন না যে, কিম কি-দুকের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে এই লেখা দেওয়া হচ্ছে? প্রথম থেকে যাকে জীবিত হিসেবে ভেবে এলাম, লেখার শেষে গিয়ে জানলাম তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। এবং এই সাক্ষাতকার ছবছর পুরনো অর্থাৎ ‘গত মঙ্গলবার’ ছ’বছর আগের কোন এক গত মঙ্গলবার। প্রদোষ ভট্টাচার্য যেমন গত বছর সদ্যপ্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদারকে নিয়ে বেশ মনোগ্রাহী ৬ পর্বের এক লেখা লিখেছিলেন। তিনি যদি এখন এই লেখা লিখতে শুরু করতেন এবং লেখার শুরুতেই যদি না বলতেন যে তরুণ মজুমদার আর আমাদের মাঝে নেই – তাহলে কেমন লাগত? অদিতি ফাল্গুনির লেখাটাও যেন অনেকটা সেই রকম হয়ে গেল। অবশ্য আমি এর পেছনে কম হলেও দোষ দেব অভিজিৎ মিত্রকে। সেই ২০২০ থেকে বিশ্ব সিনেমা নিয়ে লিখে চলেছেন, কোরিয়ান ছবি নিয়ে লিখেছিলেন জানুয়ারী ২০২১-এ, কিন্তু একবারও উল্লেখ করেননি যে তার আগের মাসেই কিম কি-দুক আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। ভবিষ্যতে তাঁর এইসব ছোট ছোট পয়েন্ট নিয়ে সতর্ক থাকা উচিৎ।

সবশেষে সম্পাদক মশাইয়ের কাছে আমার এক ছোট্ট প্রশ্ন। আপনি ‘ছবিঘর বিভাগটা কেন রাখেন? মানে, কি উদ্দেশ্যে রাখেন? পাঠকদের শুধু কিছু প্যানোরামিক ছবি দেখানোর জন্য, নাকি এই বিভাগ থেকে ফটোগ্রাফি শেখার  জন্য, নাকি বিশেষ কিছু বিষয়ের ওপর কিছু সার্থক ছবি তুলে ধরার জন্য? ব্যাপারটা স্পষ্ট নয় আমার কাছে।

শুভ্রা বন্দ্যোপাধ্যায়

বর্ধমান

৯-৭-২২

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন