কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১৪ মে, ২০২২

প্রদীপ চক্রবর্তী

 

কবিতার কালিমাটি ১১৭


নগরকীর্তন

 

(১)

শব্দে ঢালু হচ্ছে সমস্ত শরীরী। ভোরে, জানলায় পাখিরা দ্যাখে কিন্তু মনে দাগ কাটে না। পাখিদের মন? ঝরা পাতার ছায়ারা জানে। চৈতি বাতাসে ভর ক'রে চুলের সুগন্ধ। শব্দে ঢালু হচ্ছে অমীমাংসিত উত্তরায়ণে রিফ-করা আলো

ভুরু বাঁকায় বনশ্রেণী। খুলে রাখে শরীরের সব ক'টি কোষ। এক চিলতে দোল খাওয়া শালিখ।

কৃষ্ণ রহস্যের এক আভাকে সঙ্গী ক'রে পিঁপড়ের দল ফিরে যাচ্ছে দীপ শলাকায়।  ঈষৎ হাতের তালুতে সেই নগরের বাইপাস ভেঙেচুরে গেছে।

পায়ের গোড়ালি ভেঙে ভেঙে ক্রমশ মাটির ভেতর মিলিয়ে যাচ্ছে মানুষের কঙ্কাল ও তার দুরন্ত রিফ্লেক্স। তার প্রতিসাম্যে পার হয়ে যাচ্ছে উঠ ও ছায়াপথ...

আপাতত স্বপ্নতাড়িত মানুষের প্রতি শহরতলীর বনরক্ষী রক্তে শর্করা বা লোহিত কণিকার মতো মিশিয়ে দিচ্ছে বনস্পতির হাঁপানির টান, পাতার ঘামজল আর ধোঁয়া ময়লায় জন্মানো কিছু বিষাদ। বিষাদ এমন সুগঠিত নেশা -- যার ফাঁক  গলে সেভাবেই বয়ে যায় মৃদু নেশা মৃদু আলো, মৃত গাছের শ্রী ও শৃঙ্গার...

 

(২)

যাবতীয় ক্রিয়াকর্মশেষে তাকে বিজন বলা যাবে কি যাবে না, টুটাফুটা ঠান্ডা মফস্বল থেকে এই সব মৌনমীমাংসার অপেক্ষায় না থেকে বিজন আপাতত লিফটে উঠে যাচ্ছে আকাশে। আংশিক ঘুমের মতো কারুকাজ যতটা সফল, যতটা কুপি জ্বালাবার কেরোসিন বাঁচে, হা মিউজ দেবী সরস্বতী, দক্ষিণে সমুদ্র বাতাস...

বিজন পাশ ফিরে সাড়া দেয়। এর বাড়ির উঠোন ওর বাড়ির পুকুর ধার ঘুরে, পুকুরের হাঁস চমকে, জানলায় জানলায় মুখ দেখিয়ে লোকাল ট্রেন চলে যায় চক্রধরপুর।  

হাওয়ারঙের ইচ্ছের দরজাগুলো আজ খুলে গেলো। শেষ সন্ধ্যায় শান্ত বর্ষা চেয়ে কুহকিনী শরীরে খেলছে। ওই নতুন সতেজ শিরায় ঝিঁঝির অস্পষ্ট দেহ শব্দময় হবে। কাল একটা অটোকে হাত নাড়িয়ে দেখলাম, তুমি তুমি তুমি হ্যাঁ তুমিই তো সেই অবিকল বিজন। গত গ্রীষ্মের ছুটির আগের দিন তুমিই তো গিয়েছিলে  মানিকচক গ্রামের অদূরে। হাত থেকে বাটি পড়ে উঠোনে ছড়াচ্ছে সব মুড়ি। ত্রিকুন্ডলী থেকে ষটচক্র ভেদ ক'রে সহস্রারে মাথা তুলছে গেঁয়ো তারিণী কাকার মেয়ে, তোমার জন্য...

 

(৩)

 

আমার শৈবালমথিত শরীরের নীচে তুমি

আঙুলের গিঁটে গিঁটে তোমার দুরারোগ্য মৌনতায়

নিঃস্ব হয়েছে নিদমহল

তুমি কি বলে ডাকতে আমাকে? আবার বলো...

 

যে ক'টা বসতি ছিলো পাহাড়ের ঢালু বেয়ে

ঈশান কোণে, অজ্ঞাতবাসের দিনে পঞ্চপান্ডব এখানে আশ্রয় নিয়েছিল।  

নদীর নাম : উরুবিল্ব

পাহাড়ের নাম : জগৎকারু।

 

ধুলোর কলকা তোলা পাতায়, মধ্য দুপুর বা শেষ রাতে অশ্বপৃষ্ঠে মরদ জোয়ান সব, মহল্লার বস।

ভুলে মেরেছে সে অতীত প্রমাণের অভাববশত

 

শরীর ধরেছি তার, তোমাকে ধরতে পারিনি।

শুকনো ফোয়ারাটি, ঠিক যেন সুহাসিনী, সাদা পোর্সিলিন।

অমানবিক হাতে গড়া ধাতুমূর্তি!

 

বহু বছর আগে  অবন্তী থেকে কৌশাম্বী যাবার পথে আমার মৃত শরীর তুমি ছায়ায় নামিয়ে দিয়ে যাও

কে এক জ্যোৎস্নাবরণী, অন্ধকার শষ্প শয্যায় রেখে গেছে কানের দুল

নৈশ ভূর্জপত্রের গন্ধে আজ দাহ্যমান শস্যক্ষেত্র, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে,  জনপদে  মিশে যাচ্ছে কালভৈরবীর জিহ্বা

 

যে বাতাসে মিশে আছে মেয়েটির শ্বাসবায়ু 

সেই অন্ধকার তবে কী তার স্বপ্রকাশ? সে কী স্বয়ম্ভু - আদি?

তার ঘ্রাণের বিষটুকু বুকে নিয়ে আজও বেঁচে আছি, তারই অপেক্ষায়...

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন