কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ১৪ মে, ২০২২

যুবক অনার্য

 

কবিতার কালিমাটি ১১৭


দেয়ালে রক্তের দাগ

 

হলদে রঙের ডাস্টবিন

কতিপয় কাক

পথচারী

১০টা ৫টা অফিস

ক্লোজ সার্কিট ভেঙে রেখে

চর্চিত উৎকোচ

প্রেক্ষাগৃহ -  মাংসল ঢেউ

নেপথ্যের লাড ভাই

কৌণিক ইশারা - নিঁখোজ মান্তু

কিংবা মান্তুর বাসি লাশ

ক্ষমতাসীন ছায়া

বুলেটপ্রুফ রোদ্দুর

রাজধানী-রোড

অব্যর্থ বুলেট

লুটিয়ে পড়ে স্বাধীন বাংলার

একজন পূরবী স্যানাল

জরিনার দুই দেয়ালের মাঝখানে

সাপের ছোবল

রক্তাক্ত শায়া

কেউ বলছে না কিছুই

যেন বা কোথাও কেউ নেই

সমগ্র রাষ্ট্র জুড়ে স্তব্ধতার কুলকুচি

আন্তঃনগর ট্রেনের হুইসেল

গন্তব্যবিহীন মানুষ

 

স্পীকারে ভেসে আসে--

'মধ্য আয়ের দেশ'

 

দেয়ালে রক্তের দাগ আরও বেশি

                               লাল হয়ে ওঠে

 

চিন্তাসমূহ কূজনভরা

 

চিন্তাসমূহ প্রায়শ প্রদর্শনমূলক

ব্যধিগ্রস্থ মানুষ আর তার চার পা,

যেহেতু মানুষেরা প্রায়শ পশু

যেমন আজ কাল পরশু'র

যে-পদচারণা সাম্প্রদায়িক এবং

বটে সাম্রাজ্যবাদী - এই কলেবরে আজকাল বড়ই

হই হট্টগোল

হে অই ঐরাবত তোমার কাছে কলাগাছ বুঝি প্রিয়!

মানুষের কাছে রক্ত - মানুষের - হয়ে আছে প্রিয়

জেমস জয়েস যেভাবে লিখেছিলেন

ফিনেগান্স ওয়েক তাহা ইংগিতমূলক

বোকা সব সাম্রাজ্যবাদী আর অমুকতমুকবাদীর

 মুরোদ কি হবে কোনোদিন যে বুঝে নেবে

এক প্রস্থ ফিনেগান্স কিংবা ইউলিসিস!

জেমস জয়েস তিনি  যিনি বলেছিলেন-

I wrote Ulysses, what did you  do?

এ কথায় খুব কি বোঝা হলো -

আমরাও লিখবো প্রকাশ্য কাব্য এক

ইংগিত মুদ্রিত ক'রে!

নজরুলের কথা এখন যদি করো উচ্চারণ -

 নজরুল কেন নয় ইংগিতবাচক

কেন লিখেছেন - প্রকাশ্যদিবালোকে-

'ভগবান বুকে এঁকে দেই পদচিহ্ন?'

ঠিক আছে হে বৎস তবে তাই হোক - জয়েস আর মিশিয়ে নজরুল সৃষ্টি হোক প্রণালীকথন-

উদ্বৃত্ত আয় জমা হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে - 'ডাস ক্যাপিটাল'র এ কথার বৈজ্ঞানিক সত্যতা

মেনে নিতে হলে প্রয়োজন নেই অবিশ্বাসী

কিংবা বিশ্বাসী হবার।

 

সেই যে এক দিন ছিলো যখন পাখিরা গাইতো গান

হায় আজ তারা গান ভুলে শ্রোতা হয়ে গেছে!

 

মাননীয়,

আমাকে বুঝতে হলে আপনাকে টিকে থাকতে হবে

তিন শতাব্দীভর

সময় আপনাকে দেবে কি সেই সময়!

 

প্রেম কিংবা জাম্বুরা বিষয়ক

 

না এভাবে ঠিক হয় না।এই ভারচুয়াল লেনদেন ব্যাপক অর্থেই এক বৃত্তাকার প্রতারণা। অবন্তিকা আমাকে বলেছিল: সে খুব জাম্বুরা ফুলের ঘ্রাণ পাচ্ছে আর তার লাগছে মাতাল মাতাল যদিও তার আশেপাশে তখন কোনো জাম্বুরা বৃক্ষের ছায়াও ছিল না লুকিয়ে - অদৃশ্য কিংবা গোপন শত্রু অথবা গুপ্ত  ঘাতকের মতো করে আর বলেছিল: জাম্বুরা ফুলের ঘ্রাণ নিয়ে একটি কবিতা লিখে দিতে। আমি বলেছিলাম: আমি কখনো জাম্বুরা ফুলের ঘ্রাণ শুঁকিনি কি করে লিখবো কবিতা তবে জাম্বুরা নিয়ে। বরং বলতে চেয়েছিলাম: তোমার চুলগুলো এলিয়ে দাও। আমি অভিজ্ঞ আর গন্ধসন্ধানি মৌমাছির মতো শুঁকে নেবো তোমার রেশমি চুলের ঘ্রাণ।  তোমার অনাঘ্রাতা চুলের মধ্যেই করছে অধিবাস পৃথিবীর তাবৎ ফুলের ওরকম ঘ্রাণ আর মাদকতা ওইরকম। বলতে পারিনি সংগত কারণেই কেননা অবন্তিকার সংগে তখনও আমার সম্পর্কটা হয়ে ওঠেনি অবন্তিকাময়। তাই আরো একটি  ভারচুয়াল অভিজ্ঞতা থেকে আমাকে বঞ্চিত হতে হয়েছিল। জাম্বুরা বা তার ফুল নিয়ে কবিতা লেখা সুতরাং আমার হয়ে উঠল না। অবন্তিকা তারপর যেরকম হয় ভাচুয়ালি এবং সশরীরে কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলো। হারিয়ে যাবার যুক্তি  সম্মত কারণ আমি খুঁজে  বেরিয়েছি দীর্ঘ বছর কিন্তু পাইনি তা খুঁজে। তবে খুঁজে পেয়েছিলাম জাম্বুরা তার ফুল ফুলের ঘ্রাণ-এর অর্থ আর সেই নিয়ে যা লিখতে  হবে যেভাবে লিখতে হবে কী অর্থ ছিল সেই কবিতার  আর কবিতা লেখবার যে কবিতা লিখতে গেলে চারপাশ জানালার পাশে কিংবা উঠোনে জাম্বুরা গাছের কোনো প্রয়োজন নেই!

 

পৃথিবীর সমস্ত পুরুষকে খোঁজা করে দাও

 

আমাকে ওরা যখন ধর্ষণ করে চলে গেলো আমার কোনো সান্ত্বনা ছিলো না

পরক্ষণেই মনে পড়লো আমি ওদের পেটে ধরিনি মানে ওরা যে পৃথিবীতে আসবে এই ব্যাপারে আমার কোনো ভূমিকা নেই, যাবতীয় ভূমিকা পুরুষের কারণ আমার মধ্যে Y ক্রমোজম নেই, আমার আছে শুধু XX;

অতএব ওদের দুষ্কর্মের দায় বহন করতে হবে পুরুষকেই। আমি এক্ষেত্রে ভূমিকাহীন এবং নির্দোষ। আমি কোনো ধর্ষক পুরুষের মা নই কারণ পুরুষ জন্মের ব্যাপারে আমার কোনো হাত নেই। পুরুষ জন্ম দেয় পুরুষ, কেউ কেউ জন্ম দেয় ধর্ষক আর ধর্ষক যদি দলীয় হয় তবে খেলাটা জমে উঠে। খেলাটা এরকম - ধর্ষক ধর্ষণ করে আর সরকার প্রথমে নীরব থাকে। জনগণ আন্দোলন করলে সরকারের টনক নড়ে। এর প্রধান কারণ হল ধর্ষক কখনোই সরকারকে ধর্ষণ করে না। ভয় পায়। আমরা নিরীহ বলে আমাদের উপর চড়াও হয়, তাই ভেবেছি আগামী বছর নির্বাচনে দাঁড়াব। জানি হেরে যাব তবুও দাঁড়াব। হেরে যাওয়া কোনো প্রার্থীকেও ধর্ষক ভয় পায়। কিন্তু ভয় কোনো সমাধান নয়। সবার পক্ষে ইতো নির্বাচনে দাঁড়ানো সম্ভব নয়! উপায় একটা বের করতেই হবে। সমস্ত পুরুষকে খোঁজা করে দিতে হবে। প্রথম ব্যক্তিকে খোঁজা করতে গিয়েই সবার চক্ষু চড়কগাছ। তার নামটা বললে আমি গ্রেফতার হয়ে যাব, তাই বলছি না। দেশের সব পুরুষ খোঁজা হয়ে গেছে। সন্তান উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। আমারা বিজ্ঞানীদের বলে দিয়েছি পুরুষ বা প্রজনন ছাড়া সন্তান উৎপাদনের পদ্ধতি আবিষ্কার করে দিতে। বিজ্ঞানীরা তাই করল। সন্তানের জন্যে এখন আর পুরুষ বা প্রজনন প্রয়োজন নেই। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতেই আমরা দেখতে পাচ্ছি সন্তানের মুখ। পৃথিবীতে এখন ধর্ষণ নেই, পৃথিবীতে আর কোনো পুরুষ নেই, যারা আছেন তারা কেবলি খোঁজা। এর মধ্যে একটি মেয়ে দ্রোহে ফেটে উঠেছিলোঃ তবে আমাদের জৈবিক চাহিদার সমাধান কি হবে! বড়ই যুক্তিসম্মত কথা। এই নিয়ে সারা দেশে শুরু হল হাউকাউ। অবশেষ তুমুল আন্দলোনের চাপে খোঁজাকরণ বন্ধ হল। শুরু হল আবার ধর্ষণ। ধর্ষণও হবে না, পুরুষকেও খোঁজা হতে হবে না - এমন কোনো বুদ্ধি আছে কি? এমন কোনো বুদ্ধি সম্ভবত নেই কারণ পুরুষ মানেই ধর্ষক। তাহলে মেয়েদের চাহিদা? সেই চাহিদা মেটানোর পদ্ধতিও বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে ফেলেছেন, তাই পুরুষের আর কোনো প্রয়োজন নেই। পৃথিবীর সমস্ত পুরুষকে খোঁজা করে দাও!


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন