কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১৪ মে, ২০২২

প্রয়াত কবি কেদার ভাদুড়ীর কবিতা

 

কবিতার কালিমাটি ১১৭


এসো, প্রেমে পড়ি

(১)


ট্রেনের মধ্যে প্রসব ক’রে মা আমার চলে গেল

চলে গেল? চলে তো যায়নি দূরে, এই তো আছেই

এই যে ডাকছি, এই যে ভাবছি, এই যে বলছি এই যে লিখছি, এই

পাতাল গঙ্গার কথা, আকাশ গঙ্গার কথা অনেক উঠলো

মনে, বাস্তবিক, আর কি কখনো হারাই, হারাবো?

এমন স্টেশন দেখি না যে নেমে যাবো।

 

(২)

 

ট্রেনের মধ্যে প্রসব ক’রে মা আমার চলে গেলো।

যাত্রীরাই ধোয়ালো মোছালো, ধীরে ধীরে বড় ক’রে তুললো

জটিল লৌহবর্ত্মে ধ্বনি এমন কলকোলাহল মুখর

যে, তারাই স্টেশনে স্টেশনে রেলওয়ে পুলিশ, বেশকয় টিকিটচেকার

কাছে এলে স্পষ্ট শুনি সৌভ্রাতৃত্বে শেষ মৃগদাব

এমন স্টেশন দেখি না যে নেমে যাব।

 

(৩)

 

ট্রেনের মধ্যে প্রসব ক’রে মা আমার চলে গেলো।

পাশের প্রথমশ্রেণী থেকে উড়ে এলো কেচ্ছার দিদির বড়ো

স্বেচ্ছাচারী হাসি। যা বলো তা বলো, যা করো তা করো

এই সব বর্ধিষ্ণু নিয়মে আমি দেখি আমাকে তাতালো

ফলে দেখা হ’লে স্বর্গীয়াদের কেনই বা আর অশ্রুকে মোছাবো

এমন স্টেশন দেখিনা যে নেমে যাবো।

 

(৪)

 

ট্রেনের মধ্যে প্রসব ক’রে মা আমার চলে গেলো।

চলে গিয়ে গাছ হ’য়ে ফুটে উঠলো, মিথ্যে কথা, ফুল দিলো ফল

মিথ্যে কথা, ছায়া দিলো, মিথ্যে কথা, সবুজের অশ্রু টলোমল

রং দিলো, মিথ্যে কথা শুধু কাঠ হয়ে জ্বললো, জ্বলে উঠলো

পুড়লো, পুড়ে গেলো, ছাইভস্ম মেধা শক্তি, দেহটির স্নেহ, কখন জানাবো?

এমন স্টেশন দেখি না যে নেমে যাবো।

 

কাব্য

 

আমি যুবতীটিকে বললামঃ সাবান যে মাখো, সাবানেরও

একটা স্নেহভাব আছে। শাড়ি যে জড়াও, গায়ে

শাড়িরও একটা সূত্রভাগ আছে। সেই স্নেহভাব, সূত্রভাব-

নিয়েই তো ভালোবাসা, নয়?

শুনে ও দেখি তখনো চুপ করে রইলো, যেমন যুবতীরা থাকে।

দাবদাহ এমনই যে অরণ্যে লেগেছে আগুন, আগে।

 

বইমেলা-৯৩, এবং কয়েক ফোঁটা আধুনিক অশ্রু

 

এবার বইমেলায় গিয়ে দেখি ফাঁকা

ফাঁকা মানে? বই আছে, বুকস, কিন্তু অক্ষরগুলো নেই

ফাঁকা মানে? লোকজন আছে, কিন্তু মানুষজন নেই

সজল পাইপ টানে, আমি চুটা, তামাক বিহীন

কাঁচাপাকা দাড়ির ভিতরে ধোঁয়া জমে, জমে লালন ফকির

অশোক পদ্যের পেছনে কয়েক সহস্র কাস্ক মদ্য উড়িয়ে এখন

এখন? বইমেলায় গিয়ে দেখি ফাঁকা

ছড়া ও কবিতা যারা উগরে দিতো প্রতিপদে জ্যোৎস্নার ভিতরে

তারাও নিস্তেজ যেন, নিথর নীরব

তাদের  জীবন ঘোড়াগুলো, উটগুলো

ঐতিহাসিকের পাতা ছিঁড়ে, পাতা ছিঁড়ে খেতে চায়

লবণবিহীন

 

এমনি খবর

 

মালিনী যে মেয়ে, চিকন শাড়ির মতো আলো, এখন কোথায়

মালবিকা জানে, মৃত্যুঞ্জয় জানে, উত্তম জানে না

এবার বইমেলায় গিয়ে দেখি ফাঁকা

অতীন্দ্রিয় বলেছে জবর, মৎস্য-নিগমে শুধু

হৃদয়ের বাইপাস ছিঁড়ে আঁশ পড়ে আছে ফ্যাকাশে ও সাদা


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন