কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ১৪ মে, ২০২২

গোবিন্দ ধর

 

কবিতার কালিমাটি ১১৭


কৃষিশিল্পী

 

(উৎসর্গ: অনিন্দিতা দেবনাথ)

 

বংশলতিকা থেকে যে ফলকটি পেয়েছি

তাতে আমার নাম নেই

ফলকের প্রতিটি ইঞ্চিতে আছি আমি।

ফলকের দু'ধারের বংশলতিকার সুতোয় গেঁথে আছি।

 

প্রান্তিক জমিন চাষে চাষে

জলরাশি ভেঙ্গে

আমার নষ্ট কম্পাস ও পাখিচোখ জ্যামিতি।

আর চাষের শিল্প আঁকি মাঠের জমিন জুড়ে।

 

নাগরিক বিনোদন দিতে

কৃষির বিকল্প অর্থনীতি নেই, নষ্ট সময় লিখে রাখে কৃষকের শিল্পে।

আমি আমার বংশের একমাত্র লাঙ্গলের উত্তরাধিকার কৃষিশিল্পী।

 

একটি পুকুর ও এঁদো ডোবা

 

আমাদের যৌথ পরিবারে তখন একটি পুকুর ছিলো।

একটি পানাপুকুর। পানাপুকুরকে আমরা ডোবা বলতাম।

একেবারে এঁদোডোবা যাকে বলে।

ছোটবেলা এই ডোবায় খাবি খেতে খেতে সাঁতার শিখি।

 

দুপুরে বড়শিতে জিওল ধরি। সকালে ফুলকপি ক্ষেতে

কলসি ভরে ভরে জল এনে বাড়ির দক্ষিণে দিতাম।

ঠাণ্ডায় হাত হিম হয়ে কেটে পড়বে এত শীতল তার জল।

গরমের সন্ধ্যায় পচাজলকেও মনে হতো

বরফের দেশে স্নান করছি।

শরিকি পুকুরে মাছচাষ হতো।

মাঝেমাঝে মাছশিকার করে

ভাতাভাগি করে কারো পাতে মাগুর

তো কারো শিংকইলাঠিগুলো যেতো।

তা দিয়েই নানান স্বাদমতো

রান্না চড়াতেন মা কাকি ঠানদিরা।

 

পাশের পুকুর ছিলো ঠাকুরদা মন্মথ আর ঠানদি রাণীর।

জলে নামলেই নানান নিষেধ।

সকল নিষেধ ডিঙিয়ে আমরা মাঝেমাঝে স্নান সারতাম

সিগ্ধ লাগতো শরীর।

 

এখন আমাদের বাথরুম আছে সেই পানাপুকুর নেই

এঁদো ডোবা নেই। বুকজলে স্নান নেই।

মাছ শিকার নেই। যৌথ পরিবার নেই। ফুলকপি ক্ষেত নেই।

 

যৌথ পরিবারের সেই সব দিন নেই আছে শুধু

ভিডাব্লিউ এসের জীবাণুমুক্ত ব্লিচিং পাউডারজল।

নেই সে এঁদো ডোবা ও বিশুদ্ধ পুকুর!

 

সাদা পায়রার গল্প

 

শিমুল বিছানো পথে ছুটে যায় ঘূর্ণনরত চাকা

থ্যাঁৎলানো শিমুল থেকে লেনিন গেয়ে যান সাম্যগান।

ভ্রুকুটি কেটে যায় সময়।

সময় পেরিয়ে যাওয়া মানুষটির বুকের রক্তমাখা শিমুল

রাতভর জেগে জেগে পথ চলতি মানুষের পা ধুয়ে মুছে

এক সম্ভাবনার গল্প জুড়ে লিখে রাখে পথপরিক্রমণলিপি।

 

সাম্যগান বুকের অতলে রাখি সামনে লটকে রাখি সময়।

সময়ের পরিভাষা অনুসারে হাঁটি, হাঁটতে হাঁটতে গন্তব্য স্টেশনে যাই।

অআকখ পাঠশালায় পাখিদের সীমানাহীন আকাশের গল্প পড়াই।

ওরা হাঁ করে সম্ভাবণার স্বপ্ন দেখে।

স্বপ্নের কথামালা গেঁথে রাখে বাম অলিন্দে।

জগৎ সংসার আসলে কিছুই নয়। কিছুই কিছু নয়।

সব কিছু কে যেন থ্যাঁৎলে দিয়ে এ পথেই মাড়িয়েছে শিমুল।

শিমুলের লাল সংকেত ঈশারায় আগামীর প্রস্তুতি নেয়।

সব কালো অন্ধকার থেকে নিশ্চিত একদিন আবার

ডায়নামিক সূর্য উঠবেই। পথ যতই ভঙ্গুর হোক।

লাল শিমুল থেকে তুলো উড়বে সাদা, পায়রার মতো।

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন