কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ১৪ মে, ২০২২

তমাল রায়

 

সমকালীন ছোটগল্প


ভাষা

বনপর্বে চিরুনি-তল্লাশি চালিয়ে যেভাবে অক্ষর তুলে আনা হয়, হ্যাঁ, তারপরই আলোর জন্ম। আলো মানে ভাষা। এবং ভোর, ছড়িয়ে পড়তেই পারত, কিন্তু...

তৃপ্ত মিলনের পর যেভাবে সিলিং-এর দিকে ঊর্ধমুখ থাকে পুরুষ। সেভাবেই লোকটা উদাসীন। আর ভাষা শুয়ে আছে বিপরীত-মুখ, নিরাবরণ। ভাষা কি কাঁদছে?

সকালের যা টুকিটাকি বাজার-দোকান, ভাষাই করে। শীত আসছে। শূন্যতাও। অগত্যা কাঠমিস্ত্রী ডাকো, দরজা ভালো বন্ধ হয় না। জলে খুব আয়রন। পাইপলাইন জ্যাম। প্লাম্বার ডাকো। সন্ধ্যেয় পুরুষ ফেরার আগে জলখাবার বানাও। সব, মানে সবটাই একাহাতে সামলানো! উনি অবশ্য অফিস থেকে ফিরেই ভাষার সমস্ত কাজকে নস্যাৎ করে দেবেন। ভাষা তখন মুখ কালো করে, বারান্দায়। সেখানে এখনও অন্ধকার বাঁচে। ভাষার অন্ধকার!

অবশ্য বাগানবিলাসে ভাষার ইচ্ছেটাই প্রধান। নানারঙের ফুল ফুটিয়েছে। প্রতিটি ফুলই মিষ্টি করে ডাকে। কথা বলে। কারও সাথে তো অক্ষর বিনিময়ও প্রয়োজন। বাকি সময়টা তো অক্ষরহীন ঘন বুনোট শূন্যতা। সম্পর্কের বয়স বাড়লে ভাষা আর পুরুষের  মাঝে কোথা দিয়ে যেন দূরত্ব এসে পাঁচিল তোলে। ভাষার আগে দুঃখ হত। এখন গা সওয়া। সইয়ে নিতেও তো শিখতে হয়। সে জল দেয়, আলোকে আঁজলা ভরে এনে দেয় পাতায়। ওটা রান্নাঘর। তাই ওম দরকার। এসব করতে করতেই ভাষার দুচোখ জুড়ে ঘুম নামে। ভাষার ঘরের দেওয়ালগুলো সরে সরে তখন অরণ্য, কত গাছগাছালি, পাখপাখালি... ভাষা ডুব দেয় গভীর নির্জন পথের কোথাও, আবার সে ভেসে উঠবে কোথাও আচমকাই। এই ডোবা আর ভাসাতে, তবু কিছুটা আনন্দ ফিরে পায়। পেতে হয়। আনন্দ অনেকটা ট্যাবুর মত। নিতে হয়, তারপর গা সওয়া... ক্রমে...

বিকেলের পর ভাষা খাবার গুছিয়ে রাখে টেবিলে। পদ্য ফেরে, গদ্যও। যে যার সময়েই ফেরে। ভাষার সাথে ওদের বিনিময় কেবল প্রয়োজনের! বাকিটা নীরবতাই। পদ্যের অনেক বন্ধু জুটেছে  এখন, গদ্য একটু কর্কশ। সুরে মেলে  না ওদের নিজেদের, ভাষারই বা অত কী! ও মাছ পুষেছে, তাদের দেখে,  নিজেও জলে সাঁতার কাটে, ওদেরই সাথে। টিভি চালায় না। বাহির থেকে কখনও ভেতর পানেও ফিরতে হয়। ভাষার তাই আশ্রয় গান। চোখ বুজে অনুভব করে সুর। আচ্ছন্ন করে। নিজেকে এসংসারে অপ্রয়োজনীয় ভাবার বোধটাও ক্রমশ কমে আসছে। মানাতে হয়। উপায় কই!

'দিন হল ভাষারও খুব বাঁচতে ইচ্ছে করছে। ও শুনেছে প্রতি চোদ্দদিনে না'কি একজন করে ভাষা, ভাষার মতরা বিলীন... আলাপ হয়েছে নতুনের সাথে, বয়স অল্প। উন্মাদনাও প্রবল। অত কি আর ভাষা পারে, অত দৌড়তে, অত ঘোরাঘুরি, অত উচ্ছাস! এখন আবার রাত নামছে, ভাষা সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতে থাকে। লিফটেরই বা কি প্রয়োজন? না কাউকেই তেমন জানানোর নেই। ছিল কি সত্যি কখনও?

বিপ্লবের সাথে এবার দেখা হবে, তারপর দে ছুট...

বনপর্ব শেষে না'কি আবার সত্যের প্রতিষ্ঠা হয়! নাকি হয় না, অত জেনে কি হয়? ভাষা উড়াল দেয় বসন্ত এপার্টমেন্টের  ছাদ থেকে, ভাষা লাফ দেয় আকাশে, নীচে অজস্র লাল কৃষ্ণচুড়ারা লুটোপুটি খাচ্ছে, সাথে ভাষাও... বসন্তের আগমন কি এভাবেই ঘটে?

অজ:, নিত্য: শাশ্বত: অপক্ষয়রস্থিত: পুরাণশ্চ 


1 কমেন্টস্: