কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১৪ মে, ২০২২

অপরাহ্ণ সুসমিতো

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৭


গল্পের গল্প – ১

অনেক মানুষ যেমন গবেষণা করে, আমার মাঝে মাঝে তেমনি গবেষণা করতে ইচ্ছা করে। নিজে আমি গবেষক নই। গবেষকের মুখের দিকে তাকাই।

একবার দুপুরের পর কাজে যাচ্ছি। বাইরের দেশে এই ‘কাজ’ এক জিনিস বটে। আমাদের দেশের মতো অফিস করে না। সবাই কাজ করে। একটা অ্যাভেনিউ ধরে হাঁটছি। মাথায় উড়ে এলো এরকম একবার গবেষণা করলে কী হ!

কখনো আমি ডোম দেখিনি। ডোম নিয়ে একটা বড় গল্প লিখলে কেমন হয়! আমার বেশ কজন ভাল ডাক্তার বন্ধু আছেন। শুরু করলাম ফোন।

এক ডাক্তার বন্ধু বলল, ওরা খুব ড্রিংক করে।  

একজন বলল, একবার সন্ধ্যায় চট্রগ্রাম লাশকাটা ঘরের বাইরে ঝড়ো সন্ধ্যায় এক অর্ধমাতাল ডোম দেখে ভয় পেয়েছিলাম

আবার গৌতম ঘোষের সিনেমা  ‘অন্তর্জলী যাত্রা’ র শত্রুঘ্ন সিনহাকে দেখি আর শূদ্র জীবন ভাবি। ছাত্র ইউনিয়ন করত এমন একজনের সাথে এক বিকালে কফির দোকানে বসি। ডোম নিয়ে খোঁজ খবর নিই। এক ওকে ফোন করি। গুগল করি।

এর মাঝে অদ্ভুত এক সমস্যা দেখা দিল আমার। যেহেতু মানসিকভাবে তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এই গল্পটার প্রেক্ষাপট হবে পুরনো ঢাকা, কিন্তু আমি ঢাকা চিনি  না। আমার জীবন যাপন সবকিছু ঢাকার বাইরে। শহর আমার পোষায় না।

পুরনো ঢাকা নিয়ে পড়ে গেলাম দিন রাত।

সে এক আশ্চর্য জার্নি শুরু হয় আমার। পুরনো ঢাকা থেকে হাজার হাজার মাইল  দূরে আমি ল্যাপটপ খুলে বসে থাকি রাতের পর রাত। এক প্যারাগ্রাফ লিখি আর চরিত্রগুলোর সাথে কথা বলি। বুঝতে পারি লেখালেখি এক অপূর্ব মায়ার জাল।

জাল ছড়াচ্ছে। গল্পের ডোম নৃপেশ আমাকে অবহেলা করে। ডোম নৃপেশের মেয়ে নৃপবালা আমার সাথে রঙ্গ করে।

রাত গভীর হলে গান শুনতে থাকি, কত কী যে গান শুনি। একটু একটু করে চেহারাগুলো ডালপালা মেলে।

কলেজ জীবনে ফার্স্ট ইয়ারে ভার্গব ব্যানার্জী নামে এক স্যার আমাদের ফিজিক্স পড়াতেন। প্রথম দেখায় স্যারের নামটা ভালো লেগে গেল। স্যারের প্রতি সেই কবেকার বোধ আমাকে তৈরী করিয়ে নিল এই গল্পে ‘ভার্গব’ চরিত্রটি। গল্পের ভার্গব আর ভার্গব স্যারের মাঝে শুধু নামেরই মিল। আর কিছু না।

রাত বাড়ে আর এই চরিত্রগুলো আমার পাশে গা ঘেঁষে বসে থাকে সোফায়।

ভুট্টো নামে আমার এক বন্ধু, বরিশাল মেডিকেল থেকে পাশ করে এখন কানাডায়, একদিন রাতে ডিসকো ক্লাবে প্রচণ্ড ভিড় ও তীব্র মিউজিকের শব্দ ছাপিয়ে ও আমাকে এক ডোমের গল্প করতে থাকে। ওরকম শব্দ বোমা মাখানো পরিবেশে আমার কানের কাছে প্রায় মুখ লাগিয়ে ডোমের গল্প বলে একটু।

এপ্রিলের সেই ডিসকো রাতে ভিড়ের মাঝে ওর কথা শুনে থমকে যাই, কেঁপে উঠি। ভোরে বাসায় এসেই লিখতে বসে যাই গল্পের শেষ অংশটুকু।

এভাবেই নৃপেশ ডোম, ভার্গব, নৃপবালা আমার পরম সুহৃদ হয়ে যায় আর ৩৪৯০ শব্দের গল্প ‘ঘুরছে ওরা ঘুরছে চাকা’ এভাবেই লিখে ফেলি।

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন