কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১৪ মে, ২০২২

মেঘ অদিতি

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৭


একটি গ্রীষ্মকালীন ভোর

ভোরবেলা, ঘুম ভাঙবার ঠিক পরেই বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ার আগে যে আলসেমিটা আসে সেটাই উপভোগ করতে গিয়ে ঋতু আবিষ্কার করে ফেলল খুব চেনা বারান্দাটার অন্য এক ছবি। প্রথমে বিস্ময়ে জমে গেল সে। পরে ভয় এলো। আরও পরে ফিরে এলো পুরনো ক্ষোভ এবং অবিশ্বাস।

কিন্তু কী করে সম্ভব?

কী করে সম্ভব, প্রশ্নটা ঋতু করে বসলো মুখোমুখি জানলায় দাঁড়ানো প্রতিবেশিনীকে। সদ্য ঘুম ভাঙা ফোলা ফোলা চোখমুখ নিয়ে সে তখন এসে দাঁড়িয়েছে জানলায়। ঋতু তার প্রশ্নের উত্তরে একজন সমর্থক আশা করছিল। প্রতিবেশিনী তাতে জল ঢেলে দিয়ে বলে বসল, ভীষণ গরম পড়েছে। ওয়েদার ফোরকাস্ট কেবল ভুলভাল ইনফো দেয়। অথচ আজ বাড়িতে কিনা অতিথি সমাগম হবে। কীভাবে কী করব যে!

জানলা ছেড়ে ঋতু ফিরে আসে বিছানায়। বসে বসে ভাবে, মনের বাড়ি থেকে বারান্দার দূরত্ব ঠিক কত। হয়ত খুব অল্প। চোখ বুজলেই যাকে ছুঁয়ে ফেলা যায়।  হয়ত তা যোজন যোজন দূর। আরও দূরে যেতে যেতে কুয়াশায় ঢেকে গেছে যার অবয়ব। অথচ কদিন আগেই কিনা ঋতু অনুভব করেছিল, বসন্ত এলে বারান্দাটা দোলের আনন্দে মুখর হয় ওঠে। আর কী করে যেন সম্পর্কের দূরত্বও ঘুচে মনের ভেতর সব রকমের আস্থা ফিরে আসে। কিন্তু বসন্ত গিয়ে গ্রীষ্ম আসতেই কেন যে ছবিটা পাল্টে যেতে চাইছে!

গরম ঋতুর সহ্য হয় না। কিন্তু ভেতর ভেতর সব আয়োজন তো সে করছিল। ভেবেছিল, কোনো এক গ্রীষ্মের সন্ধ্যাকে বসন্তের সন্ধ্যায় রাঙিয়ে দেবে ওই বারান্দাতেই। পারফ্যুম কিনেছিল। গরমে পরার জন্য মলমল শাড়ি। বেলফুলের মালা। ডোকরার গয়না। কিন্তু এখন আর গ্রীষ্ম-বসন্ত ভেবে কী হবে। বারান্দাটা আর ঋতুর নেই। কেবল কটা দিনের জন্যই সে হয়ত ঋতুর সঙ্গী হয়েছিল। তা বলে ওই মুহূর্তগুলো? সেই ভোরবেলা, যেখানে রাস্তার ওপর দোল খেলছিল একদল ছেলেমেয়ে! অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঋতুও তো ওদের হুল্লোড় দেখছিল। বেলা বাড়লে বারান্দাটা তাকেও রাঙিয়ে দিয়েছিল আবিরে। আজ দেখছে, সে বারান্দার ভেতর বাস করছে অন্য একটা সকাল। সে সকালে উদ্ধত মুখ উঁচিয়ে ট্রেতে বসে আছে এক অপরিচিত চায়ের কাপ, সাথে দুটো মারি বিস্‌কুট। ট্রেটা ব্যালান্স রাখার খেলায় কিছুটা যেন সন্ত্রস্ত। নাকি সিদ্ধহস্ত? ভেবেই নিয়েছে, ভারসাম্য রাখবার খেলাটা খেলে যাবার মধ্যে কখনও কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটতেই পারে না!

কল্পনাতে সে এখন উপাদানগুলোকে এদিকে সেদিক করে বসিয়ে দেখতে চায়, কী কী সেখানে ঘটতে পারে। আর এইসব কল্পনা করতে গিয়ে মাথা ভোঁ ভোঁ শুরু। গলা শুকিয়ে কাঠ। একাএকা বিড়বিড় করে ঋতু। অভিযুক্ত করে কাউকে। কাকে? বারান্দাকে?

কিন্তু কেউ যদি সেই বারান্দা ছেড়ে চলে যায় সেখানে তো যে কেউ এসে আবার দাঁড়াতেই পারে! নয়? না নয়। নিজের যুক্তিকে সে নিজেই বাতিল করে দেয় এবং ভাবে, বারান্দাটা ঋতু নিজেই কখনও ছেড়ে যায়নি।


1 কমেন্টস্: