কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

অর্ক চট্টোপাধ্যায়




ডার্ক পার্ল 


পার্লে জি। খেতে হয় তাই খাঁচায় ঢুকতে হয়। আমাদের বাড়িতে উৎপাতরত প্রমাণ সাইজের নেংটিটা প্রায় পার্লে জি-র বিজ্ঞাপন হয়ে উঠছিলো। বাবা-মায়ের দয়ার শরীর। তারা ইঁদুর মারতে অক্ষম। তাই ইঁদুর মারার নয়, ধরার কল কিনে এনেছিল। মাঝে মাঝে এঘর ওঘর করতে করতে গিয়ে চোখে পড়তো, এখানে ওখানে অন্ধকারে রাখা রয়েছে একটা খাঁচা। অন্ধকার পোহাচ্ছে। খাঁচার ভেতর জুল জুল করে বসে রয়েছে দুটো পার্লে জি বিস্কুট। আমি মার কাছে পড়া করার ফাঁকে জল খাবার অজুহাতে বেরিয়ে প্রায়ই দেখে আসতাম খাঁচা ভরলো কিনা। 

অন্ধকারে খাঁচাটা জাঁকিয়ে বসতে না বসতেই এসে ঢুকে যেত একটা ইঁদুর। খাঁচার পারফর্মেন্স ভালো। পার্লে জি-র পারফর্মেন্স আরো ভালো। রাখার ঘন্টা খানেক-দুয়েকের মধ্যেই এসে ধরা দেয় ইঁদুরের বাচ্চা। ধেড়ে নয়, প্রমাণ সাইজের নেংটি। ইঁদুর বাবাজী অসময়ে ধরা দিলে সেদিনকার মতো বারান্দায় চলে যায় খাঁচা। সেখানে পায়রাগুলো চঞ্চল হয়ে ওঠে। ইঁদুরটাও লুকিয়ে পড়ে খাঁচার এক কোণে। বাবা মা ঠিক করে, পরের দিন সকালবেলা কাজের দিদিকে বলবে ফেলে দিয়ে আসতে। না হলে বাবা অফিস যাওয়ার সময় ফেলে দেবে। তাও না হলে মা আমায় স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার পথে ফেলে দিয়ে আসবে। 

ঠিক বোঝা যাচ্ছে না কোথা থেকে ইঁদুরগুলো এসে জুটছে। প্রতিবার আরো দূরে গিয়ে ফেলে দিয়ে আসা সত্ত্বেও দু-তিনদিনে ব্যাক টু প্যাভেলিয়ন। বাবা মা ভাবছে একই সাইজের হলেও আলাদা আলাদা ইঁদুর। আমার কিন্তু দৃঢ় ধারণা একটাই ইঁদুর বারবার ফেরত আসছে। আমি বাবা-মাকে বলেওছি। কিন্তু ছোট বলে বিশেষ পাত্তা পাইনি। আসলে আমি ইঁদুরটাকে চিনে গেছি। ওর চাহুনি, খাঁচার ভেতর জড়সড় ভঙ্গী, লাফালাফি, এপাশ ওপাশ করতে গিয়ে ধাতব খাঁচা কেটে ফেলার বৃথা চেষ্টা -- এসব আমি চিনে গেছি। ধরা পড়ার পর রাত কাটানোর সময় টয়লেটে যাবার অজুহাতে মাঝে মাঝেই অন্ধকারে ওর নিকষ-নিকুতি চোখ দেখে এসেছি আমি। সে চোখ আমাকেও দেখে রেখেছে খাঁচার ভেতর অন্ধকার পোহাতে পোহাতে।
 

বাবা মা কিছুতেই মানতে চায় না ও একটাই ইঁদুর। বলে, প্রমাণ সাইজের যে কোনো নেংটিকেই একরকম দেখতে। বাবা বলে, 'এ কি আর মানুষ নাকি যে সবাইকে আলাদা আলাদা দেখতে হবে?' আমি কিন্তু ঠিক জানি। ওটা একটাই ইঁদুর যে বারবার ফিরে আসে। আমার মনে হয় ও প্রতিবার আমার জন্যেই ফিরে আসে। ও যে একটাই ইঁদুর, আলাদা আলাদা নয়, এই স্বীকৃতির জন্যেই ফিরে আসে। আমি ওর নাম রেখেছি ডার্ক পার্ল। অন্ধকারে ধরা পড়তে হয়, নয়তো পিছিয়ে পড়তে হয়।      


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন