কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

উমা মন্ডল



সংক্রান্তির ভাত

(১)

ছাতিমের ধূসরতায় সূর্য নিজেকে হারিয়ে ফেলে
কুয়াশার স্তর রান্নাঘরে ঢুকে আসে।
চিমনি নিভিয়ে মা কড়াই বসিয়েছে,
ওভেনের দাউদাউ অগ্নি
 
আর তার ওপর পাক খাওয়া সাদা
স্তরীভূত জলরাশির বিচিত্র রূপ।
উড়ে যায় না গ্যাসীয় হাওয়া,
এ হাওয়া বড়ো চেনা
ঘ্রাণ আসে অতীতের।
দলিল-দস্তাবেজ থেকে উঠে বসেন
পূর্বজ - ভালো নামেরা,
গায়ে চেনা কুয়াশার সোয়েটার।
উলবোনা কাঁটায় মাতৃশব্দের নাম আছে
তো?
দুধেলা শব্দেরা যে শুধু হারিয়েই যায়।
যেমন নারায়ন শিলার স্নানের পরে
ধুয়ে দেয় গাত্র তেলের অংশবিশেষ,
সাদা জল ভেসে যায় নর্দমা,নালা পেরিয়ে
নদীর গর্ভে
মা-গঙ্গা...
স্বর্গ প্রাপ্তি ঘটে গেছে বংশজদের।

মা শুধু চিমনি নিভিয়ে খুন্তি নাড়ে,
ওপরে কুয়াশা-
পারিবারিক মিলনোৎসবে
আসর বসিয়েছেন প্রাক্তন নামসকল,
সূর্য আজ ছাতিমের তলায়েই থাকবেন...


(২)

আজ পৌষ-সংক্রান্তির রান্নাবাটি
কলাপাতার ওপর চোদ্দপুরুষ এসে বসবেন,
স্বাদ নেবেন মার হাতের গুণাবলীর।
একটা পদাবলী বা কীর্তন লেখা হবে কি
অন্তত একটা পংক্তি...
নির্জনে বসে তুলসী তলার প্রদীপ গাইবে
 
গান,
সুর ভেসে যাবে অন্তরীক্ষের চৌকাঠে।
হয়তো ব্রহ্মা নিদ্রা গিয়েছেন সেইক্ষণেই
সময়ে - সময়েই তো ব্যতিক্রম নেমে আসে...

তবুও এগিয়ে যায় মাঝি বৈঠা নিয়ে
অন্নপূর্ণার সংসার,
ঈশ্বরী পাটনী শুনে যায় চোদ্দ শাকের নির্মাণ...

পাঁচালী থেকে বকের পালক বর্তমানে
 
হোঁচট খায়,
সবুজ উপত্যকার মতো গাঢ় পাতায়
এখন পঞ্চব্যঞ্জনের সমাহার,
আমি কলম দিয়ে সব নাম লিখে রেখেছি
মা নিশ্চিন্ত হয়ে জল খায়...
                              
 জীবন্ত ঈশ্বরী জেগে ওঠে
                     কালঘুম ভেঙে –

(৩)

সিন্ধুসভ্যতা থেকে তুলে আনা মাটির গন্ধ কি বিচিত্র
 
জাতিস্মরের আত্মা শুঁকে শুঁকে দেখে,
আঁকাবাঁকা ভ্রূ
  টিকালো নাসিকা 
পদ্মচোখ,পাপড়ি ঠোঁট
জীবন্ত ঈশ্বরী জেগে ওঠে কালঘুম ভেঙে


কালঘুমের কোন শেষ নেই
ডিঙি নিয়ে শুধু ডুবসাঁতার ,
উঠে আসে শামুক, গুগলির শব
আগুনে ঝলসে নাও
একটি রাত কাবার

আর যদি ভেসে ওঠে আকবরী ঠুংরী
নুপুরের বোল
 
প্রত্যেক দেওয়ালের গায়ে সেঁটে থাকা
ছবির মুখে একই ধ্বনি
কেয়া বাত্...

চৈ চৈ করে হেঁটে যায় সময়
মুঠোর শূন্যতা জ্যোৎস্নার চোখেও ঝরণা এনে দেয়।
স্নান করে প্রজাপতি জীবন
কখন বেরিয়ে এসেছে গুটির দরজা খুলে,
তুমি ডেকেছিলে?
তোমার ডাক কালকেতুর পাশ থেকে
তুলে এনেছে আমাকে,
পড়ে আছে ফুল্লারার পোশাক
দেবীর ঘটে পুজা হয়নি
 
এই শাপগ্রস্ত জীবন...
তবুও এসেছি


হে
  আর্যজাতক
সমগ্র ভূখন্ড থেকে যখন ডাক আসে,
ফ্যারাওদের আদিনৃত্য থেমে যায়
মমির চোখে চোখ রেখে বলি-
'যেতে হবে '...
উঠে যাই আরাবল্লী পাহাড়ের
 
পাথরের নির্যাতন থেকে,
জলের স্নান ভেঙে ছুটে যাই
হরপ্পার মাটি কামড়ে পড়েছিলো যে ভ্রমর
তার পাখায় ভেসে ভেসে

নক্ষত্র আর একবার বলে দেখো -
জীবন্ত ঈশ্বরী জেগে ওঠে কালঘুম ভেঙে...

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন