কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

অপরাহ্ণ সুসমিতো




কা তব কান্তা


কাল সারা সন্ধ্যা আপনার অপেক্ষায় ছিলাম আমি চাতক ঠোঁটেআপনি এলেন না, ফোন করলেন না
অপেক্ষার রাজকন্যা হয়ে গান গাইছিলাম তোমার বাস কোথা যে পথিক...

আপনি ভালো লেখেন জানিবৃষ্টি নিয়ে আপনার লেখা পড়লে মনে হয় কাগজের পাতায়, চোখের পাতায় বৃষ্টির নূপুরসেদিন আপনার লেখায় খাবারের বর্ণনা পড়লাম, এতো সুনিপুণ বর্ণনা যে প্রতিটা লাইন আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম মুচমুচে পরোটা, ভুনা মাংস, ধোঁয়া উড়ছে পতাকার মতো, পিরিচে লাজ লজ্জাহীন গুলটু টুবলু রসগোল্লা

রান্নাঘরে চায়ের কাপে টুংটাং আওয়াজচা হচ্ছে...

আপনি এতো নিখুঁত বর্ণনা করেন যে আমার খিদে পায়। মা যেমন বাচ্চাদের খাবার সময় কত কী বাহানা করে, টিভিতে কার্টুন ছেড়ে দেয় আমারও তেমনিখাবার সময় আপনার যাদুকরী লেখাটা পড়তে শুরু করিসামন্ত প্রভুর মতো খিদে এসে হানা দেয়, খেতে শুরু করি।

একবার আপনার লেখায় নায়িকাটা চশমা পরে সম্পাদককে টেক্সট করে। কতদিন টিভির একদম সামনে চোখ বড় করে বসে থেকেছি যাতে আমার চোখ খারাপ হয়, যেন আমি ওরকম ঝকঝকে চশমা পরিঘোড়াড্ডিম আমার চোখ একদম ৬/৬

সেদিন এক সম্পাদককে আপনার লেখার প্রশংসা করাতে সম্পাদক মুখ গোমড়া করে রইলেনআশ্চর্য! ব্যাটা ছেলেরা এরকম ঈর্ষাক্রান্ত হয়!  

গত মাসে মানিকগঞ্জ গিয়েছিলাম। একটা চায়ের স্টল দেখে চা খেতে ইচ্ছা করল। আচানক চোখ পড়ে একটা কিশোর ছেলের দিকে, যত্নে চায়ে পাউরুটি ডুবিয়ে খাচ্ছেআমার চট করে আপনার ‘শালিক যখন হলুদ ঠোঁটে সুষমা খায়’ গল্পটার কথা মনে পড়ল। আমিও চা-পাউরুটি অর্ডার করলামএতো গরমে, ভিড়ে সেই কাজল কিশোরের মতো আমিও চায়ে পাউরুটি ডুবিয়ে খেতে শুরু করলাম

পাউরুটিতে চা ভিজে গেলে কী যে নরম আর পেলব হয়, টুপ করে গিলে ফেললেই হয়। মুখে চায়ের ঘন দুধের স্বাদ লেগে রইল।

কাল খবরের কাগজে পড়লাম, আপনার স্ত্রী দিনাজপুরে বেড়াতে গিয়ে একটা  হোটেলে উঠে আত্মহত্যা করেছে। আপনার স্ত্রী নামী অভিনেত্রী ছিলেন। কী চমৎকার তার ক্যারিয়ার! সমস্ত বাংলাদেশ আপনাদের জুটির কতো প্রশংসা করত, মানিকজোড় আপনারা।

এক সময় আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করত, লেখার সময় আপনার মুখ চোখ কেমন হয় জানতে ইচ্ছা করত। এখন আর দেখতে ইচ্ছা করছে না। কতো কী অদেখা থাকে এক জীবনে!

নিয়ম করেই রোদ পড়বে হাঁসের ডানায়, নদী ঘাটে একাকী মাঝি বিমর্ষ বসে থাকবেধারালো শাবলের মতো বিক্রম ঢেউ হানা দেবে ঘাটে। ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকবে আমার বোন।

চোখের জল আড়াল করব আমিও, টেবিলের উপর ধুলো পড়বে আপনার বইয়েআমার না-দেখা আপনি হয়তো শূন্য ছবির হাট ঘুরে আসবেন চোখের কোণায় ঈগলের পায়ের ছাপের মতো বেড়ে যাওয়া একেকটি বয়সী দিনের মতো।

হয়তো মানিকগঞ্জে আবারও যাব রোদরঙ শাড়ি পরেসেই কাজল কিশোর বা আপনাকে আর দেখব না।

1 কমেন্টস্:

  1. নিয়ম করেই অনিয়মগুলো।
    অনিয়মগুলোই নিয়ম।
    অপারগতাটুকুই ভালো লাগা।
    অপারগ বলেই থেকে যায় পরাণে।

    উত্তরমুছুন