কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

সুনীতি দেবনাথ




কেতকী কুশারী ডাইসন



কেতকী কুশারী ডাইসন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুন কলকাতায় তাঁর জন্ম হয়। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে রেকর্ড নম্বর পেয়ে  বি এ পাস করেন। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন। এরই মধ্যে ১৯৬৪ সালে  তাঁর বিবাহ রবার্ট ডাইসনের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছিল।  বিবাহ পরবর্তী জীবনে তিনি যুক্তরাজ্যেই বসবাস করছেন। তিনি অক্সফোর্ডের কাছাকাছি একটি নিরিবিলি গ্রাম ক্যানাল টাউনে বসবাস করেন। তিনি দুই পুত্রের জননীতাঁর সংস্কৃতির শেকড় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দুটি ভূখন্ডে সমানভাবে প্রোথিত, যেহেতু তাঁর জন্ম ভারতে আর বিবাহ পরবর্তী জীবন কাটছে যুক্তরাজ্যে।

কেতকী কুশারী ডাইসন বিশাল প্রতিভার অধিকারিণী ছিলেন। ইংরেজি ও বাংলা দুটি ভাষাতেই তিনি সুদক্ষ  এবং দুটি ভাষাতেই তিনি সাহিত্য সৃষ্টি করেন। তিনি কবিতা, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ, গবেষণা সাহিত্য সবই লিখে যাচ্ছেন। সমালোচনা সাহিত্যেও তাঁর দক্ষতা আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে তাঁর গবেষণা প্রবাদ প্রতীম।

উল্লেখযোগ্য ষাট / সত্তরের দশকে কেতকী কুশারী ডাইসন প্রায় নিয়মিত কলকাতার বিখ্যাত ‘দেশ’ সাহিত্য পত্রিকায় লিখে গেছেন। পাঠকেরা মুগ্ধ হতেন  তাঁর লেখা পড়ে। আমার স্পষ্ট মনে পড়ে সেই ষাটের দশকে স্কুল কলেজে পড়ার দিনগুলিতে  ‘দেশ’ পত্রিকার এক একটি সংখ্যা হাতে পাবার জন্য কী আকুল  আগ্রহে প্রতীক্ষা করে থাকতাম! আর হাতে পেয়ে প্রথমেই কেতকী কুশারী  ডাইসনের লেখাটি বের করে গোগ্রাসে গিলে ফেলতাম। কেতকীর লেখার বৈশিষ্ট্য হলো তিনি যা মনে এলো তা ধুন্ধুমার লিখে যেতেন না। তাঁর মৌলিক সত্তায় গবেষণা ও সমালোচনাধর্মী মননশীলতা থাকায় তিনি বারবার পরিবেশ, পরিস্থিতি ও চরিত্র নিয়ে ভাবতেন এবং সেই ভাবনায় একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছে তবেই লিখতেন। এমনকি প্রতিটি শব্দ ব্যবহার করতে গিয়ে তিনি তার উপযোগিতা নিয়ে ভাবতেন বলে মনে হয়। 

তিনি মরমী লেখিকা। বাস্তব চরিত্রগুলিকে জানা অজানায় মিশিয়ে নিজের মননশীলতায় প্রকৃত বাস্তবায়ন করতে চাইতেন। একচোখা দৃষ্টিতে তিনি কোনো বাস্তব চরিত্র রূপায়ণ করতেন না। কোনো চরিত্রকে প্রকৃত মূল্যায়ন না করে অধঃপতিত করাকে অপরাধ ভাবতেন। জীবনানন্দ দাশের ‘সফলতা নিষ্ফলতা’ বইয়ের একটি চরিত্র বাণেশ্বর।  এই চরিত্রটি বুদ্ধদেব বসুর প্রতিরূপ হিসেবে ব্যবহার করে কিছুটা হেয় ও ক্ষুদ্র রূপে দেখাতে চেয়েছেন জীবনানন্দ। এটা কেতকী পছন্দ করেননি। তিনি তাঁর ‘তিথিডোর’ বইয়ে নানাভাবে বারবার বিভিন্ন বাক্যবন্ধে বুদ্ধদেব বসুকে গুণীজন ও  শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে চেয়েছেন। রাসবিহারী এভিনিউতে কিছুদিন বুদ্ধদেব বসু ও কেতকীরা পাশাপাশি বাস করেছেন। তাই কেতকী বুদ্ধদেব বসুর গুণমুগ্ধ হয়ে  ওঠেন। বুদ্ধদেব যে ছোট বা ব্যঙ্গবিদ্রূপের পাত্র নন সেটা দেখাতে চেয়েছেন কেতকী। কিন্তু  এক্ষেত্রে গবেষক ও সমালোচক কেতকী প্রাধান্য পাননি, পেয়েছেন ব্যক্তিগত দায়বদ্ধ কেতকী। কেতকী মমতাময়ী নারী ছিলেন। তাঁর  সৃষ্ট  চরিত্রগুলি মমতার আবেষ্টনে বাস্তবতা লাভ করেছে। সাধারণ ছোট্ট চরিত্র তাঁর হাতে সংবেদনশীল হয়ে বাস্তবতা লাভ করে। তাঁর সৃষ্ট চরিত্রসমূহ প্রকৃতপক্ষে  বাস্তবের বিভ্রম ঘটায়, অন্য এক মায়ালোকের সন্ধান দেয়। বিচিত্র বিষয় ও মানুষ নিয়ে তিনি লিখে গেছেন।  ইরাকে পাশ্চাত্যের ভয়াবহ ধ্বংস যজ্ঞ, লেবাননের বোমাবর্ষণ, নৌকোয় দুর্গত জীবন যাপন, আরও কত কী! নিপীড়িত, অসহায় মানুষের জন্য তাঁর অন্তরে সুগভীর  দরদ ছিলো।

প্রকাশনা:
-------------

বাংলা কাব্যগ্রন্থ: "বল্কল (১৯৭৭)", "সজীব পৃথিবী" (১৯৮০), "জলের করিডোর ধরে" (১৯৮১), "কথা বলতে দাও" (১৯৯২), "যাদুকর প্রেম" (১৯৯৯), "দোলনচাঁপায় ফুল ফুটেছে" (২০০০) প্রভৃতি।

উপন্যাস: "নারী, নগরী" (১৯৮১), "নোটন নোটন পায়রাগুলি" (১৯৮৩), জল ফুঁড়ে আগুন (২০০৩), "এই পৃথিবীর তিন কাহিনী" (২০০৬)।

গবেষণা গ্রন্থ: "রবীন্দ্রনাথ ও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সন্ধানে" (১৯৮৫)।

প্রবন্ধগ্রন্থ: "ভাবনার ভাস্কর্য" (১৯৮৮), "শিকড় বাকড়" (১৯৯০), "রঙের রবীন্দ্রনাথ" (১৯৯৭), "চলন্ত নির্মাণ" (২০০৫),''কাছে-দূরের কক্ষপথে'' (২০১৫)।

নাটক: "রাতের রোদ" (১৯৯৪), "মোত্সার্ট চকোলেট" (১৯৯৮), "সুপর্ণরেখা" (২০০২)।

ইংরেজী সাহিত্যকর্ম:
---------------------

Sap Wood (১৯৭৮)

A Various Universe (১৯৭৮),

Hibiscus in the North (১৯৭৯),

Spaces I inhabit (১৯৮৩),

In Your Blossoming Flower-Garden: Rabindranath Tagore and Victoria Ocampo (১৯৮৮),

Bilingual Women (১৯৯৪),

Memories of Argentina and Other Poems (১৯৯৯),

In That Sense You Touched It (২০০৫)

অনুবাদ কর্ম:
-------------

"এ্যাংলোস্যক্সন কবিতা" (১৯৮৭),

বাংলা থেকে ইংরেজীতে অনুবাদ Kobirul Islam, Poems (১৯৭৯), The Home-Coming by Kabirul Islam (১৯৮২)

I Won’t Let You Go: Selected Poems of Rabindranath Tagore (১৯৯১)

Night's Sunlight (২০০০)

The Selected Poems of Buddhadeva Bose (২০০৩)

"ভারতীয় নারীত্বের আদর্শ" (১৯৮৮) - মানবেন্দ্র নাথ রায়ের ইংরেজী রচনার বাংলায় অনুবাদ।

সম্মাননা:
---------

১৯৮৬ খ্রি.: আনন্দপুরস্কার প্রাপ্তি।

১৯৮৬ খ্রি. : কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুবনমোহিনী দাসী স্বর্ণ পদকে ভূষিত।

১৯৮৬ খ্রি.: আনন্দ পুরস্কার দ্বিতীয় বার পেলেন।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন