কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৫

রিমা দাশ

গুটিপোকা


সকাল আটটা। মোবাইল ফোন বেজে উঠলআধা ঘুম আধা জাগা অবস্থায়  রাশি ফোনটা রিসিভ করে ঘড়ির দিকে নজর দিল। না, আর শুয়ে থাকা যাবে নারাত বারোটা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত সে ফোনেই ব্যস্ত ছিল। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বন্ধুদের ফোনতারমধ্যে স্পেশাল জনের সাথেই তো প্রায় দেড় দু'ঘন্টা কেটে গেল ভাব-ভালোবাসার কথায়এখন সকাল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে উইশ করে সেকেলেরারাশি একালের মেয়ে, তার বন্ধুরাও একালেরস্বাভাবিক ভাবে তাদের জীবনযাত্রার ধরনধারণও একালেররাতভর ফোনে লেগে থাকা, বাবা-মা কেউ পছন্দ করে না তার ওপর ওই প্রেমের কথা যেদিন জানবে, রাশি নিশ্চিত,  বাড়িতে সেদিন ছোটখাটো একটা হিরোশিমা নাগাশাকি হয়ে যাবে। এ নিয়ে এখন সে মাথা ঘামাতে বিন্দুমাত্র রাজী নয়। কী করবে সে সময়, ভাবা যাবেতার  জন্মদিন উপলক্ষ্যে আজ রাত আটটায় পার্টি আছেঅবশ্য তার আগে বিকেল পাঁচটায় নন্দনে দেখা করতে হবে। মজা করে বলেছে, এমন ভাবে সেজে আসতে  যাতে সিডিয়ুইসড হয়ে যায়রাশিও মনে মনে চ্যালেঞ্জটা একসেপ্ট করে নিয়েছেতবু এত খুশীর মাঝেও একটা মন খারাপ মাঝে মধ্যে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পরছেএবার জন্মদিনে রাঙ্গাদিদার ফোন আসল নাহয়তো আর আসবেও না। তিরাশি বছরের দিদা দিন পনেরো হলো অসুস্থএই সেদিন পর্যন্ত শক্ত সামর্থ্য ছিলহঠাৎ করে জ্বরে কাবু হয়ে সব বেসামাল হয়ে গেলপ্রথম দশদিন প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় ছিল। আজ দিন পাঁচেক কিছুটা ভালোমাঝে মধ্যে কথা বলছেদিও ডাক্তার খুব একটা আশাবাদী নয়নাতি নাতনির মধ্যে রাশি তার সবথেকে আদরেরহয়তো একমাত্র নাতনি বলে যাবতীয় আদর সে নিজের দিকে টেনে নিয়েছে। কত গল্প শুনিয়েছে দিদাতার যুগের গল্প – মেয়েদের গল্পাদের মুখে কুলুপ এঁটে থাকার গল্প। রাশির যে সবসময় শুনতে ভালো লাগতো, তা নয়যে ছোট থেকে  কোয়েড স্কুল কলেজে পড়ে ছেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে বড় হয়েছে, তার কাছে এসব গল্প কেমন যেন অবাস্তব। তবুও কিছু না বলে চুপ করে শুনত। দিদা যে সাংসারিক জীবনে দাদুকে নিয়ে অসুখী ছিল, তা তার গল্প করা থেকে রাশি বেশ   অনুমান করতে পারত। সব থেকেও কী যেন নেইকী যেন এক অতৃপ্তির সাথে যুঝে গেল সারাজীবনরাশি অনেক সময় জানতে চাইলে মুচকি হেসে জবাব দিত,  নতুন জন্মে সব ঠিক হয়ে যাবে, কোনো দুঃখ থাকবে না

তন্বী রাশি সিফন শাড়ি স্লিভলেস ব্লাউজে নিজেকে সুসজ্জিত করে একগোছা ফুলের তোড়া নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথমে দিদার কাছে এলোরাশিকে দেখে শীর্ণ  চেহারার দিদার মুখ উজ্জ্বল হাসিতে ভরে উঠলধীরে সুস্থে তাকে বিছানায় উঠিয়ে বসালো রাশি। কোটরাগত চোখে বিদ্যুৎ ঝিলিকরাশি দু'হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো দিদাকে। কিছুক্ষণ পর বাহুমুক্ত হয়ে চঞ্চল চোখে তাকালো দিদা রাশির দিকে ক্ষীণ কন্ঠে একটা চুম্বনের আবদার সে রাখলো রাশির কাছেএ এমন কী নতুন কথা!  এর আগেও রাশি বহুবার দিদার গালে চুমু খেয়েছে। কিন্তু আজ দিদা নড়বড়ে  হাতে রাশিকে জড়িয়ে ধরে নিজের দিকে টেনে এনে ক্ষুধার্ত এক চুম্বন এঁকে দিল রাশির ঠোঁটে। কিংকর্তব্যবিমূঢ রাশি অনুভব করল, দিদার শীর্ণ হাত তার উদ্ধত স্তনযুগলের সঙ্গে খেলা করতে চাইছেকিন্তু অসময়ের সময় বাধা হয়ে দাঁড়ালরাশি বিস্মিত গলায় কিছু বলার আগে দিদা বলল, নতুন জন্ম! বলেই তার কোলে  ঢলে পড়ল।  

বিকেল পাঁচটা এদিকে তখন নন্দন চত্বর থেকে রাশির ব্যাগে ক্রমাগত গার্গীর ফোন বেজেই চলেছে



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন