অচেনা সে
আমার ছয় বছর বয়সে বাবা মারা যান। মা দেখতে
খুব ধবধবা ফর্সা। বাংলাদেশে ফর্সা মানুষের অনেক ডিম্যান্ড। ফর্সা
মানেই সে সুন্দর। ফর্সা হলো সচল পদাবলী। পাতিলের তলার মতো কুচকুচে
কালো ছেলেও
বিয়ের সময় ফর্সা মেয়ে খোঁজে।
মা ছিল একাধারে ফর্সা আবার নাদুসনুদুস। বাবা মারা যাবার এক বছরের মাথায় আবার হাঙ্গা হয়ে গেল, মানে মা আবার বিয়ে করলেন। তরকারিতে অপাংক্তেয় আলুর মতো আমি মায়ের আঁচল ধরে থাকি। ছোটবেলা থেকে আমার সর্দির ধাত। সারাক্ষণ নাক দিয়ে তিস্তা নদী। সুযোগ পেলেই মায়ের আঁচলে নাক মুছি।
মায়ের দ্বিতীয় স্বামী কারণে অকারণে আমাকে পেটায়। ফুটবলের মতো আমার পাছায় কিক করে। জুলফি টানে। পেটের চামড়া ধরে টান। সবচেয়ে কঠিন অবস্থা যখন লোকজনের সামনে টান মেরে আমার লুঙ্গি খুলে ফেলে, আর ওখানটায় দুই আঙ্গুল দিয়ে চিমটি দিয়ে তুলে বলে;
মা ছিল একাধারে ফর্সা আবার নাদুসনুদুস। বাবা মারা যাবার এক বছরের মাথায় আবার হাঙ্গা হয়ে গেল, মানে মা আবার বিয়ে করলেন। তরকারিতে অপাংক্তেয় আলুর মতো আমি মায়ের আঁচল ধরে থাকি। ছোটবেলা থেকে আমার সর্দির ধাত। সারাক্ষণ নাক দিয়ে তিস্তা নদী। সুযোগ পেলেই মায়ের আঁচলে নাক মুছি।
মায়ের দ্বিতীয় স্বামী কারণে অকারণে আমাকে পেটায়। ফুটবলের মতো আমার পাছায় কিক করে। জুলফি টানে। পেটের চামড়া ধরে টান। সবচেয়ে কঠিন অবস্থা যখন লোকজনের সামনে টান মেরে আমার লুঙ্গি খুলে ফেলে, আর ওখানটায় দুই আঙ্গুল দিয়ে চিমটি দিয়ে তুলে বলে;
: হারামীর বাচ্চা মুসলমানী হয় নাই। তোর এই ঘরে খাওন নাই।
এই অঞ্চলে একটা এতিমখানা আছে। আল নাহিয়ান
শিশু নিকেতন। কুয়েতের টাকায়। মা আমাকে চুপিচুপি এই এতিমখানায় ভর্তি করে দিলেন। অবশ্য আমাকে ভর্তি
করাতে ঘুষ দিতে হয়েছিল চার হাজার টাকা। কারণ আমি তো পুরো এতিম না। মা আছে, সৎ বাবা আছে। আমি যে এতিম এরকম একটা সার্টিফিকেট জোগাড় করতেও ইউনিয়ন পরিষদে এগার'শ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছিল।
এতিমখানাটা নতুন। দিনের বেলা সারাদিন স্বরে অ স্বরে আ করি আর সন্ধ্যা হলে আমাদের দেখাশোনা করার জন্য যে খালামনি আছেন, ওনার পা টিপি। তাতে খাবারের সময় আমার ভাগে
বেশি খাবার জোটে।
অষ্টম শ্রেণীতে ওঠার সময় আমি এতিমখানা থেকে পালাই। আমার মায়ের খোঁজ করি, খবর পাই মা আর দ্বিতীয় স্বামীর সংসারে নেই। কেউ জানে না মায়ের
সন্ধান। কেউ কেউ বলে, ঢাকায় চলে গেছে। কেউ কেউ অসভ্য ইঙ্গিত
করে।
আমি একদিন সকালে মোবাইলের বাটন টিপতে টিপতে ট্রেনের জানালায় নকশাদার বৃষ্টির আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা দেখতে দেখতে ঢাকায় পাড়ি দেই।
ঢাকায় এসে কয়েকদিনের মধ্যে খবর পাই, আমার মা এখন সংসদ সদস্য। পত্রিকায় ছবি দেখে চিনতে পারি না। কত বছর আগে দেখা সেই মা আরো মোটা হয়েছে। হাসি কুমকুম অন্য রকম মা।
কাঁঠালবাগান বাজারে দারোগা সাহেবের মেসে রাতে ঘুমাই। অনেক রাত পর্যন্ত চারপাশে শোরগোল। ঢাকায় কেউ ঘুমায় না কি?
কখনো রাত নিভে যায়, দূরে রিক্সার টিংটিং। জানালার পাশে কখনো জন্ডিস একাকী বিষণ্ণ আলো, টের পাই না জ্যোৎস্না না নিয়নের আলো!
একা লাগে। ঘোরের মধ্যে টংঘরে আধো ঘুম আধো জাগরণে ছোটবেলার আমি মায়ের আঁচল ধরে ঘুরঘুর করি। সর্দির প্রকোপ বেড়ে যায় বর্ষার আবাহনী মোহামেডানে। মায়ের আঁচলে নাক মুছি।
আমি একদিন সকালে মোবাইলের বাটন টিপতে টিপতে ট্রেনের জানালায় নকশাদার বৃষ্টির আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা দেখতে দেখতে ঢাকায় পাড়ি দেই।
ঢাকায় এসে কয়েকদিনের মধ্যে খবর পাই, আমার মা এখন সংসদ সদস্য। পত্রিকায় ছবি দেখে চিনতে পারি না। কত বছর আগে দেখা সেই মা আরো মোটা হয়েছে। হাসি কুমকুম অন্য রকম মা।
কাঁঠালবাগান বাজারে দারোগা সাহেবের মেসে রাতে ঘুমাই। অনেক রাত পর্যন্ত চারপাশে শোরগোল। ঢাকায় কেউ ঘুমায় না কি?
কখনো রাত নিভে যায়, দূরে রিক্সার টিংটিং। জানালার পাশে কখনো জন্ডিস একাকী বিষণ্ণ আলো, টের পাই না জ্যোৎস্না না নিয়নের আলো!
একা লাগে। ঘোরের মধ্যে টংঘরে আধো ঘুম আধো জাগরণে ছোটবেলার আমি মায়ের আঁচল ধরে ঘুরঘুর করি। সর্দির প্রকোপ বেড়ে যায় বর্ষার আবাহনী মোহামেডানে। মায়ের আঁচলে নাক মুছি।
মা হৈ হৈ করে ওঠে।
এতিমখানার খাঁচার গরাদে হু হু করে তিস্তা জ্বর নামে। বিছানায় কুঁকড়ে থাকি। টের পাই মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায় দানবীয় বিমান। আকাশে এক টুকরো শান্তির নীড়। মা সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সাথে টপ্পার ধ্বনি রাজস্থান যাচ্ছে।
আমি উটের গ্রীবার মতো স্বপ্নে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে থাকি।
এতিমখানার খাঁচার গরাদে হু হু করে তিস্তা জ্বর নামে। বিছানায় কুঁকড়ে থাকি। টের পাই মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায় দানবীয় বিমান। আকাশে এক টুকরো শান্তির নীড়। মা সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সাথে টপ্পার ধ্বনি রাজস্থান যাচ্ছে।
আমি উটের গ্রীবার মতো স্বপ্নে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে থাকি।
মা আর আমাকে চিনতে পারে না।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন