কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৫

দেবযানী কর সিনহা

আলেয়া ঈশ্বর


নক্ষত্রদের যদি ফুল ভাবি, আকাশটা একটা বৃক্ষের মাথা, ভুল কি? আকাশ সরোবর, সরোবরে ফুটে থাকে পুন্ডরীক্ষ। গোলাপি, সাদা, রক্তাভ। এরও অলিগলি আছে, মানে দুর্গম পথ পেরিয়ে যাওয়ার রহস্য। বড় বড় ভ্যাকুওল আছে সুন্দর মসৃণ জন্মরহস্যের গভীরে। গহ্বর যখন তখন তৈরি হতে পারে। জীবনের নানা সময়ের উপহার হলো ক্ষতকুঁয়োক্ষতে জন্ম হয় পুঁজ, রক্ত, পচন। এতেও যদি কাউকে মৃত বানানো যেত! নাহ! কেউ মরে না। মৃত্যু বলে কোনো শব্দ নেই অভিধানে। যা আছে তা দৃষ্টির ভ্রম। ক্ষতেরাও জীবকূলকে গিলে খেতে চায়। সময় পেলে শ্বাপদ সাহসে ভর করে ভেতরে ঢুকে দেখে আসে তার থাকার আশ্রয়। ওদের ভেতরে পারস্পরিক সমঝোতা জঙ্গম। এরপর কোনোদিন সেখানে দেবতার মন্দির গড়ে উঠলেও আশ্চর্য হব না। কী  না সম্ভব এই দুনিয়ায়? বিখ্যাত দেহকে মরা বলব না - কোনোদিনও না। কারণ  তাকে ছুঁয়েও দেখা চলবে না - কোনোদিনও না। এক জীবনে এসব বিশ্লেষণ দেখিয়ে নক্ষত্ররা আমাদের আত্মাকে স্নান করিয়ে দিয়ে যায়। তারপর পাপের আর সাবানের দেনায় তাদের চোখ জ্বালা করে। বৃষ্টির জলে চোখ ধুয়ে ওরা ফিরে যায় অন্য গ্রহে। ওরা প্রকৃত ঈশ্বর। যে জীবন দেখায় তাকে আমরা শত্রু নাম দিই। কারণ কষ্ট যেন বেশি মাত্রায় তেতো স্বাদে জিভকে আড়ষ্ট করে, তারপর মিষ্টতা টের পাবার আগেই অন্তর্হিত। তোমরাও কি সংসার বাঁধো আকাশকক্ষে? ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করে। মনে হয়, তোমাদের বিছানায় গিয়ে উদোম হয়ে শুই। ওখানে তো মান সম্মানের ভয় নেই, সবাই ভাসমান। কেউ কাউকে স্পর্শ করতে গেলে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। তোমাদের পা-গুলো কেমন, জানি না। তবু কীভাবে মহাশূন্যে ছোটাছুটি করো? ওখানেও কি ফসল ফলাও প্রজন্ম বাঁচাতে? ওখানকার ফসলের মূল্য কি এখানকার মতোই আকাশমুখী? বলে গেলে না এমন কত কিছু, যা জানতে চেয়েছি। হাতে এক একটা বাঁশি, পাশে রোহিণী শতভিষা অনুরাধাদের মৌনশ্লাঘা। মরণ নেই, নেই জন্ম, তবু কেন এক একটা ভ্যাকুওল বানিয়ে শরীরটাকে নষ্ট করে গেছ? তোমাদের শাখায় শাখায় সোনার কাঁটা, হয়তো বিষাক্ত হবে না। আর এখানে চিকিৎসালয় আছে, কিন্তু ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই। ভালোবাসা নেই। জন্ম আছে, মৃত্যু আছে, লোভের বশবর্তী হয়ে স্বপ্ন দেখার মন আছে। তোমরা স্বপ্ন দেখানোর কারিগর আর শূন্যের প্রতিম। এই ক্ষত ভেদ করে বহুদূর গিয়েও মেদমাটি বা নিদেনপক্ষে জলরক্ত বা বৃক্ষহাড়-গোড়ের ছোঁয়া পাই। নিঃস্ব হয়েও নির্মাণ করি ইশারায় দেখা ঢেউ। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলেও এই গর্তের শ্বাপদেরা সাধু হয়ে উঠবে নিশ্চিত। তোমরা দূরে আছ, দূরেই থাকো আলেয়া ঈশ্বর। 

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন