কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৫

সুমী সিকানদার

ব্রাউনি এবং তারপর


দু'হাতের Joy pad থরথর করে কাঁপিয়ে Xbox খেলেছে বুমবুম রোজ অফি থেকে ফিরেই এই দৃশ্য দেখে তার বাবা প্রতিদিন ভাবে, বুমবুমকে নিয়ে বসতে হবে। ওকে সময় দেওয়া দরকার। আজ মন ঠিক করে নাস্তা খেয়ে ছেলের পাশে বসল বাবা।  

“বুম্বু চলো আজ খেলা থাক, গল্প করি অশান্ত বুমবুমের গল্প করার ধৈর্য নেই। কোনোরকমে হুঁ হাঁ করে সে লিভিংরুমে দৌড় লাগায়

"তোমার ন্য ব্রাউনী বেক করেছি বাবা ... গরওওওম এসো দুজনে খাই" ভেন থেকে ব্রাউনি বের করে নিজেই দাঁত বের করে হাসতে থাকে সে ভালো কুক। বাসায় যদিও কুক আছে, তবে ছুটির দিগুলোতে সে নিজেই রাঁধে

অবশেষে বুমবুম ধরা পড়ে তার সামনে কোয়ার্টার প্লেটে ব্রাউনি, কাঁটা চামচ এবং আইস্ক্রিম বুমবুমের চোখ খুশিতে গোল গোল হয়ে যায়   
এবার এত্ত মজা হবে! লাস্ট উইকের রেড ভেলভেটের চাইতেও বাবা!" হাসি চেপে রাখাই মুশকিল হয়েছে বুমবুমের।

"তাহলে গল্প শুরু করা যাক" ধীরে ধীরে শুরু করে বাবা উদ্দেশ্য, বুমবুমকে খেলা থেকে দূরে  রাখা।
"জুরিখে একটা হ্যাপী ফ্যামিলি ছিল"  
"আমাদের মতো?'' বুমবুমের মুখ ভর্তি ব্রাউনী।  
"হ্যাঁ বাবা শোনো তারপর কী হলো, তাদের ছেলেটা তোমার মতো শুধু গেইম খেলত তার চোখে ছিল মোটকু চশমা।'' 
"আমি বুঝেছি, এই তোমার গল্প। আমার তো স্কুল বন্ধ, তাই..." গলায় কৈফিয়তের সুর বুমবুমের।
"আহা শোনো আগে! ছেলেটি খুব বুদ্ধিমান নাম 'ডিউক' খেলতে গিয়ে অনেকের  সাথেই তার ফেসবুকে পরিচয় কেউ কেউ ঘনিষ্ঠও হয়েছে। এক সময়  একজনের সাথে খুব বন্ধুত্ব হলো ডিউকের। বন্ধুর নাম এমিল।  
তো এমিল দেখা করতে চাইলো, গিফট দিতে চাইলো ডিউক কিছু না ভেবেই তার বাড়ির ঠিকানা এমিলকে দিল"।

এইটুকু বলে বাবা বুমবুমের দিকে তাকিয়ে থাকল 
''উফফ বাবা, এই সময় কেউ থামেবিশ্রি অভ্যাস তোমার। তারপর বল"। বুমবুমের গুমগুম গলা
কিন্তু ঠিকানা দিয়ে এখন ভয় করতে লাগল ডিউকের এভাবে দুম করে বাড়ির ঠিকানা দেয়া কি ঠিক হলো? অচেনা বন্ধু গিফট দিতে বাসায় আসতে চেয়েছে,  আর সে কিছু না ভেবেই ঠিকানা দিয়ে ফেলেছে। কি এক অচেনা কারণে খুব অস্থির হয়ে থাকল ডিউক সেই রাতে।
দিন কাটতে থাকল। সপ্তাহ খানেক এইভাবে উল্টোপাল্টা চিন্তা করে করে একসময় এসব ভুলে গেল ডিউক।

উইকএন্ড।
 বাইরে থেকে লাঞ্চ করে ফিরেছে সবাই। বাবা মা রেস্ট নিতে ঘরে গেলেন। ডিউক ল্যাপটপ নিয়ে বসলো সে আপডেট দেখে তারপর পড়তে বসবে।  বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে অসময়ে। ডিউকের ঘুম পাচ্ছে। সে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়েই পড়লো খানিক বাদেই তুমুল চিৎকার, আর্তনাদ ডিউক ভয়ে নিজেও চিৎকার করে উঠল অপরাহ্ণের অলস নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে সেই শব্দ যেন শরীরে কেটে কেটে ঢুকছিল। এক দৌড়ে বাবা-মা' ঘরে গিয়ে ধপ করে বসে পড়ল ডিউক। দেখল, বিছানা ভেসে যাচ্ছে রক্তে। বাবা মা এলোমেলো, দ্বিখণ্ডিত। সব শেষ। হতভম্ব ডিউক বুঝে উঠতে পারল না, সে কী করবে! ফোন করা দরকার। কিন্তু  কোথায়? কাকে?
 
ঠিক তখনই সে কারো
 গলা শুনতে পেলো এমিল নয় তো? তার সেই বন্ধু! যে আজ এ বাড়িতে আসতে চেয়েছিল গিফট দিতে!
ডিউক অস্ফূট স্বরে বলল, ''এমিলমাই ফ্রেন্ড?''
''ডিউক, ইটস মি এমিল''
কথাটা শেষও হয়নি, একটা সুতীক্ষ্ণ ছোরার ফলা ডিউকের পেটের ভেতর মোলায়েম হয়ে ঢুকে গেল। মেঝেতে লুটিয়ে পড় ডিউক। 

তৃপ্ত মুখে ছোরা
টা মুছে পকেটে রাখলো এমিল তার দায়িত্ব শেষ। এরপরের কাজ অন্য কারো। 
কিন্তু বাগান পেরোতে গিয়ে একটা কান্নার শুব্দ শুনতে পেলো এমিল সে ভেবেছিল পালাবে। কী মনে করে কান্নার শব্দ ধরে ধরে বাগানের ভেতর ঢুকে দেখল, একটা প্র্যমে শুয়ে পাঁচ-ছয় মাসের বাচ্চা কাঁদছে। এমিল অবাক হয়ে গেল সে তখন বুঝতে পারলো, তাহলে ডিউকের একটা ভাইও আছে এমিলের একথা জানা ছিল না। 
ছোরাটা আবার বের করল সে। এবার এই পিচ্চিটার বুকে ঢুকিয়ে দিলেই ল্যাঠা চুকে  যায় বিরক্তিকর! বিরক্ত হয়ে ছোরাটা বের করেছিল সে। কিন্তু যেই মারতে যাবে, বাচ্চাটা এমিলকে দেখে খুব খুশি হয়ে গা দুলিয়ে হাসতে শুরু করল। মুখে কোনো দাঁত নেই ছোট ছোট দু'হাত বাড়িয়ে দিল এমিলের দিকে মুখে কিছু যেন বলছে। বলছে। এমিল খুব বিপদে পড়লো সে বাচ্চাটাকে মারতে পারলো না। ছয় মাসের টুকটুকে সুন্দর টিউলিপ ফুলের মতো বাচ্চাটাকে মেরে ফেলা সহজ ছিল না   

ডিউক পরিবারের একমাত্র জীবিত বাচ্চাটাকে কোলে করে নিজের বাসায় নিয়ে এলো এমিল। দ্রুত তার ঘর রেডি করে, বেবীকট অর্ডার দিল প্র্যামে করে বেবীকে নিয়ে গ্রোসারী করতে বের হলো এমিল বাচ্চাটার নাম দিল : বুমবুম ডাকনাম"

এটুকু শুনে বুমবুম আনমনে বলে উঠল, “আমিও তো বুমবুম, বাবা!" ব্রাউনী খাওয়া শূন্য প্লেটে কাটা চামচ দিয়ে আঁকিবুকি কাটতে থাকে সে। কী যেন ভাবে। গলে  যাওয়া আইসক্রিমের রেখায় সদ্য ফুরানো ব্রাউনি খোঁজে।

এমিল কিছু বলে না। কিচেন নাইফ দিয়ে দক্ষ হাতে চিকেন পিস পিস করে ভিনিগারে ভেজায় সে। হুইস্কির মোছা গ্লাসগুলো মন দিয়ে আবার মুছতে থাকে আজ সন্ধ্যায় কিছু বন্ধু আসবে তার বাড়িতে


2 কমেন্টস্: