কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৪

০৯) মেঘ অদিতি

টারক্যুইজব্লু সূর্যাস্তে



আজকের তারিখটা ওকে বলাই যায়। খানিকটা মাটি ফুঁড়েই তখন উঠে আসে ও। অবাক গলায় বলে, বাইশ জুন মানে? বাইশে শ্রাবণ মনে করে বললি নাকি? তরঙ্গ উঠে আসে বুকে। যখন আসে, আনন্দ সাথে নিয়ে আসে। ঘাস দলে যাওয়া স্নিকার দেখতে দেখতে মৃদু মাথা নাড়ি, উহুঁ…

- তবে?

- ইট ওয়াজ আ নাইস ট্রিপ। এবার যাব।

- কোনদিকে যাবি?

- জানি না।



হাহাহাসিতে আটকে পড়া হাওয়া পর্যন্ত কেঁপে যায়।



- শোন… জাদু দেখবি একটা? কী রে! তাকা?



কুয়াশা ঘিরে ধরে। বলে, দেখ কীভাবে আমি হাওয়া হয়ে যাই। ও হারিয়ে যায় অথবা আমাকে হারিয়ে দিয়ে মিশে থাকে আমার মনে। অনেকটা উঁচুতে এখন আমি। দূরে সরু ফিতের মতো, ওকি শঙ্খনদী? রিসর্ট ছেড়ে নামতে থাকি পাতালের দিকে। কোনটা যে সত্যি, সে হারিয়ে গেল নাকি মিশে গেল অন্তরে! মুহূর্তে প্রকৃতি থেকে হৃদয় বিচ্ছিন্ন, তবু তাতে বিষাদের বদলে লাগে আহীর ভৈঁরো… অবরোহণে মিশে যায় রোদ, কোমল নিষাদের গায়ে ধৈবত।





জংলি ফুলের রঙ হালকা থেকে গাঢ় বেগুনি হতে হতে সকালের রোদ সামনে এগোয়। একটু গভীরে গিয়ে চুপ করে বসি। খানিক দূরে পাহাড়ি দুই মেয়ে কলকল করে। সাথে স্কেচবুক। তির্যক আঁচড়। তখুনি কানের কাছে আলতো ঠোঁট, কবিতা শুনবি? চমকে দেখি আবার ফিরে এসেছে। নাম না জানা কোনো এক কবির কবিতায় ও চারপাশ ভরিয়ে তোলে। কুচি স্বেদবিন্দু সামলে জিগ্যেস করি.. কার লেখা?



- নাম জেনে কী হবে? কবিতা এক রকম হিলিং। ক্ষত সারাবার উপায়।

- আমার কোনো ক্ষত নেই।

- বলছিস?

- হুঁ।



পাহাড়ি মেয়েদুটো গায়, পেক্কুনেকিজিক-কাজাক গরিযা রবাহ্‌ততে ফিরিযান… আমার সমস্ত শরীরে দোল খায়… কিজিক-কাজাক।



- শব্দ নয় সুর এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে তোকে।গানের কথাগুলো তুই ধরতে পারছিস না, শব্দের অর্থ অপরিচিত বলে কিন্তু সুরের তরঙ্গে ঠিক ভরে উঠছিস। কবিতাও ঠিক তাই। অনুভবে যদি নিস, তবেই তার স্পর্শ পাবি।

আমার কী যেন হয়। রিসাং ঝর্ণা ঝরঝর নেমে আসে বন্ধ দু’চোখে। চোখ খুলে দেখি নেই। কখন চোখ লেগেছে আবার!





রাতে কটেজের বাইরে ওরা গোল হয়ে বসে। ককতো থেকে বুন্যুয়েল, আবুল হাসান ঘুরে সিলভিয়া প্লাথ। তর্কবৃত্ত থেকে ছিটকে আসা শব্দ, হাসি, গিটারের টুং-এ এদিকটায় স্পষ্ট বিভাজন। দূরে বসে এক আকাশ নক্ষত্র সাথে খুঁজে বেড়াই বিসর্জনের ম্লান আলো। নানা রকম ইমেজের মধ্যে আবার ওকে ভাবি। মনে মনে ডাকি, এখন আয় একসাথে রাতের উড়ান দেখি। কথা থেকে শব্দ, ছবি থেকে রঙ নিয়ে আয় সর্বাঙ্গে মাখি... আয়... আয়...



আসে। আমার থেকে খানিকটা দূরত্ব রেখে বসে। বসার ভঙ্গীতে নিরীহ বিষাদ। হাতদুটো মুঠো করে রাখা পায়ের ভাঁজে। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলে বলে, কবিতা ছাড়িস না কখনও। ইমেজগুলো পরপর রেখে দিস। সব ক্রিমসনে নয় মাঝে মাঝে ইয়েলো লাইম, কার্নিশে টারক্যুইজব্লু-র একটা সূর্যাস্ত, শব্দে ধরিস, শুধু তার রিক্ততাটুকু আঁকিস রঙে।



বুঝতে পারি, এই স্প্যানটুকু ফুরিয়ে গেলেই আমাকে চ’লে যেতে হবে। জানতে চেয়েছিল কোথায়, জায়গাটা আমিও চিনি না, শুধু জানি যেতে হবে। মন খারাপ হয় না। ওযে মস্ত এক ইল্যুশন বরাবর, যে আমার বুকের ভেতরই থাকে।



ওর পেতে থাকা জানুতে অন্ধকার ছড়াতে থাকে তার ডালাপালা...



আমাকে গ্রাস করে, তেইশ জুন।



(যক্কেসাঝন্যালামিএযে কবিতার পেক্কুনেকিজিক-কাজাক -- পঙক্তি মৃত্তিকা চাকমার ওয়েবসাইট মৃত্তিকাহিল বিডি ডট কম থেকে নেওয়া)

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন