কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৪

০৪) কাজল সেন

জলসমাধি



পায়ের তলায় সমানেই জল গড়িয়ে আসছিল। প্রথমে অল্প অল্প, ক্ষীণ ধারায়। তারপর একটু একটু করে বাড়তে থাকে তার বেগ ও পরিমাণ। এত জল আসছে কোথা থেকে? রান্নাঘর, বাথরুম, হাত ধোয়ার বেসিন – ঘরের সব জলের কল কি একসাথে খুলে দিয়েছে কেউ? কিন্তু কে খুলেছে?

সত্যব্রত স্থির হয়েই বসেছিল ভেতরের ঘরে একটি চেয়ারে। খালি পায়েই বসেছিল। জলের তোড়ে ভিজে যাচ্ছিল তার দু’পায়ের পাতা। বেশ আরাম লাগছিল। কেমন যেন একটা ভালোবাসার ছোঁইয়া। কামনারও। সত্যব্রতর দু’পায়ের পাতা একটু একটু করে ডুবে যাচ্ছিল জলের গভীরে।

অনিশ্চিত এই জীবনে জল নিয়ে সত্যব্রত অনেক খেলাই খেলেছে। জলও তার সঙ্গে খেলেছে কতই না খেলা। আর সত্যবতী! সেও তো জলক্রীড়ায় ছিল খুবই পটিয়সী। আবার জলকেলিতেও তাই।

জলের উচ্চতা সমানেই বেড়ে যাচ্ছিল। সত্যব্রত খেয়াল করলো, তার দু’পায়ের পাতা ছাপিয়ে জল এবার উঠে এসেছে তার দু’পায়ের ডানায়। সত্যব্রত জানে, এভাবেই জলের উচ্চতা বাড়তে বাড়তে একে একে ঢেকে দেবে তার হাঁটু, জঙ্ঘা, পুরুষাঙ্গ , পশ্চাৎদেশ, কোমর, উদর। সত্যব্রত আরও জানে, জলের এই আগ্রাসন এখানেই থেমে যাবে না। দখলের দুরন্ত নেশায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে জল। ক্রমশ আরও উচ্চতা বাড়িয়ে জবরদখল করতে চাইবে সত্যব্রতর বুক, পিঠ, বগল, কাঁধ, ঘাড়, চিবুক, ঠোঁট, নাক, কান, চোখ, কপাল... এবং শেষ পর্যন্ত ব্রক্ষ্মতালুও। একটা গোটা মানুষকে গ্রাস করার উন্মত্ততায় জল সব সময়ই অত্যুৎসাহী, একরোখা।

সব জেনেও তবু সত্যব্রত চেয়ারে অবিচল বসে থাকে। সরে আসে না জলের ঘেরাটোপ থেকে। কিন্তু কেন? তাহলে সত্যব্রত কি জলসমাধি কামনা করে! তার এই এত দিনের অনিশ্চিত জীবনকে কি শেষ পর্যন্ত নিমজ্জিত করতে চায় গহীন জলের বুকে!

সত্যব্রতর মনে পড়ে, এভাবেই তো একদিন সত্যবতীও তাকে নিমজ্জিত করত জলীয় উচ্ছ্বাস ও গভীরতায়। সত্যব্রত একটু একটু করে তলিয়ে যেত অতলে। পায়ের চেটো থেকে ব্রক্ষ্মতালু – একটা আস্ত মানুষকে পুরোপুরি গ্রাস করার উন্মাদনায় সত্যবতী উন্মুক্ত করে দিত তার ভয়ংকর সুন্দর জলপ্রপাত। আর সেই ধেয়ে আসা উন্মোচিত জলধারায় জলসমাধি ঘটতো সত্যব্রতর।

সত্যব্রত অনুভব করলো, জল এবার স্পর্শ করেছে তার শিশ্ন। ঠান্ডা জলের ছোঁয়ায়, সত্যব্রত আশা করেছিল, তার শিশ্ন আরও শিথিল হয়ে পড়বে। কিন্তু কী আশ্চর্য, তার মনে জাগলো এক অদ্ভুত ছটপটানি। উত্তেজনা। বুকের ভেতরটা টনটন করে উঠলো। সত্যব্রত বুঝতে পারলো, তার জননেন্দ্রিয় ক্রমশ সুদৃঢ় হয়ে উঠছে। আজ কতদিন, কতদিন হয়ে গেল, সত্যব্রতীর সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত সে। কতদিন হয়ে গেল, সত্যবতীর ছোঁয়া পায়নি তার এই উপোসী প্রত্যঙ্গ।

কতদিন পরে আজ জলের অনুষঙ্গে একটু একটু করে সত্যব্রতর দখল নিতে থাকে সত্যবতী। বুক, পিঠ, বগল, কাঁধ, ঘাড় অতিক্রম করে সত্যবতী এবার অনুপ্রবেশ করে সত্যব্রতর মুখমন্ডলে। সত্যব্রতর চিবুক, ঠোঁট, নাক, কান, গাল, কপাল – সব সবকিছু ক্রমশ ডুবে যেতে থাকে সত্যবতীর বিশাল অপ্রতিরোধ্য ঘূর্ণিজলে।

সত্যব্রত বসে থাকে। একই ভাবে বসে থাকে। অনড়। অটল। কোনো ব্যস্ততা নেই। কোনো উদ্বেগ নেই। কোনো উৎকন্ঠা নেই। এবং এভাবেই এক সময় নিমজ্জিত হয় তার ব্রক্ষ্মতালু। তাহলে কি সত্যি সত্যিই জলসমাধি ঘটলো সত্যব্রতর! সত্যবতীর অতলেই তলিয়ে গেল সত্যব্রত!

এত জল! এত জল এলো কোথা থেকে? রান্নাঘর, বাথরুম, হাত ধোয়ার বেসিন – ঘরের সব জলের কল কি একসাথে খুলে দিয়েছে কেউ? কিন্তু কে খুলেছে? সত্যব্রত নিজেই খুলে দেয়নি তো! অথচ সত্যব্রত কিছুতেই মনে করতে পারে না, সে আদৌ খুলেছে কিনা! হয়তো সে খোলেনি। তাহলে কি সত্যবতী? যাবার আগে নিজের হাতে সব জলের কল খুলে রেখে গেছিল সত্যবতী?


2 কমেন্টস্:

  1. তাই বোধহয়,'যাবার আগে নিজের হাতে সব জলের কল খুলে রেখে গেছিল সত্যবতী।' অপূর্ব।

    তিলকে তাল করার ভাবনাটা কোথা থেকে আসছে বা তা জারিত হচ্ছে কোন প্রসেসে, সেটা বুঝতে এই ঝুরোগল্প ঠিকানায় পৌঁছে যাওয়া। প্রথম গল্পেই ক্লিন বোল্ড হয়ে চিনতে চেয়েছিলাম সম্পাদকের মনোভঙ্গীতে এর ব্যাখ্যা কি। স্পষ্ট জানাই, ওখানে তবু খেলেছিলাম, এখানে ব্যাটে বলে হলোই না... দিনের শুরুতে ফার্স্ট বলেই...

    অনেককিছু পেলাম, শিখলাম, মুগ্ধতায় ভরে গেলাম।

    উত্তরমুছুন
  2. আপনাকে আমার শুভেচ্ছা জানাই। এবং অনেক ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন