সুভাষ ঘোষ
ফুলমতি
[একটি সম্ভাব্য শ্রুতি নাটক। কোনো এক আবেগ মণ্ডিত সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই শ্রীকাঞ্চন ভট্টাচার্য মহাশয়ের স্মৃতির দরজা
খুলে গিয়েছিল। তখন অনেক কাহিনীর টুকরো টুকরো সুখ-দুঃখের ফুলসম্ভার ভেসে ভেসে
এসেছিল সময়ের স্রোত বেয়ে। তারই কয়েক টুকরো এই নাটকের অনুপ্রেরণা জাগিয়েছে আমার
মনে। অবশ্য আমার ভালো লাগাই শেষ কথা নয়, নাটক,
শ্রোতৃ্মন্ডলীর মনে ধরবে কিনা, তা তাঁরাই বলবেন। তবু আমি
দিতে চাই। সেইটুকুই তাদের মনে সত্যি হয়ে থাক।
কয়লাখনি অঞ্চলের একটি প্রায়-দুর্গম জনবসতিতে অবস্থিত একটি ব্যাঙ্কের
আভ্যন্তরীণ পরিবেশে যে সুখ-দুঃখের, আনন্দ-বিষাদের চলমান ছবি ফুটে ওঠে, তার সামান্য
প্রতিফলন এই নাটকে।]
(চরিত্র : ফুলমতি, ভাশুর, আগন্তুক, রাজাবাবু, কুসমি, অ্যাকাউন্টেট
ও ম্যানেজার)
(১)
(ব্যাঙ্ক চলছে। কর্মচারীরা ব্যস্ত। সাধারণের আনাগোনা চলছে। লেনা দেনার কিছু
গুঞ্জন। এরই মাঝে এই নাটকের শুরু।)
ভাশুর- নমস্কার। অন্দর আ সকতা হুঁ?
অ্যাকাউন্টেট- আসুন। বাবা, একসঙ্গে এতগুলো লোক এলে আমার কিন্ত বসতে
দেবার জায়গা নেই।
ভাশুর- পিতাজী আপ বৈঠিয়ে; হম খড়ে হোকর
বাত কর লেঙ্গে।
অ্যাকাউন্টে্ট- বলুন, আপনাদের জন্য কি করতে পারি?
ভাশুর- স্যর, হামাদের
একটা অ্যাকাউন্ট খুলবার আছে। দোএয়া করে একটু মদত করেন।
অ্যাকাউন্টেট- আরে এটা আর এমন কী ব্যপার! কিন্তু কার নামে, কে আকাউন্ট খুলবেন ?
ভাশুর- ওই যো বাহার খাড়া আছে। লড়কী -- ওর
নামে।
অ্যাকাউন্টেট- সে তো ঠিক আছে,
কিন্তু আইনটা জানেন তো? ওকে তো খুবই
ছেলেমানুষ লাগছে। ওর বয়স কত? ইন্ট্রোডিউস করবে কে? ও লেখাপড়া জানে কি?
ভাশুর- হাঁ, হাঁ
সবই বলছি, ওর নাম ফুলমতি আছে। ও আমার ছোট ভাইয়ার ঘরওয়ালী আছে। ক্যায়সে ভী ওহ সহি
কর লেতি হ্যায়; পর অনপঢ় ত হ্যায় হী হ্যায়।(বাবার উদ্দেশ্যে) আপ হমারা বাবা হচ্ছেন,
আউর ফুলমতিকে পহচান করিয়ে দিবেন। উনার ইখানে একটা আকাউন্ট আছে। আপ্নে একটু জলদি জলদি
করিয়ে দেন।
অ্যাকাউন্টেট- ওর বয়স কত বললেন?
ভাশুর- করিবন্ আঠারা-বিশ সাল হোবে।
অ্যাকাউন্টেট- তা ওর একার নামে অ্যাকাউন্ট খুলবে কেন? ওকে তো বিবাহিত দেখছি, সুন্দর ফুল
ফুল শাড়ি পরেছে, গা ভর্তি গয়না, সিঁথিতে প্রসস্ত সিঁদু্র, নতুন-বৌ নতুন-বৌ চেহারা;
ডাকুন তো ওকে।
ভাশুর- এ ফুলমতি, হেনে আবো, সাহাব বুলা
রহে।
অ্যাকাউন্টেট- তোমার নাম ফুলমতি?
ভাশুর- আরে জবাব তো দে!
ফুলমতি- হাঁ
অ্যাকাউন্টেট- তা শোন ফুলমতি, আমি বলি কি, একার নামে অ্যাকাউন্ট না খুলে, স্বামীর সঙ্গে জয়েন্ট
খোলো। সেটাই ভালো হবে; তোমার স্বামী কোথায় ?
ভাশুর- সোনটাই তো
বোলছি, ওর স্বামী নাই, মতলব, ইধর নহী হ্যায়, আমার তো উটাই মাঙ্গ আছে, ওর স্বামীর
ওর একটা জয়েন্ট একাউন্ট খুলে দেন ।
অ্যাকাউন্টেট- দেখুন সেটা সম্ভব নয়।
ওর স্বামীকেও আমার সামনে সই করতে হবে। আপনারা অন্য কোনো দিন তাকে নিয়ে আসবেন।
ভাশুর- সো তো আজ হি এসেছে, পর নিচে আছে,
ইখানে আসতে সক্ছম হোবে না। ওর তবিয়ৎ ভালো নেই।
অ্যাকাউন্টেট- বেশ তো, ভালো হলে
আসবেন।
ভাশুর- আউর কভি ভী ওহ ঠিক নহী হোগা
বাবুজি, জলদি হি ওহ গুজর যায়েগা।
অ্যাকাউন্টেট- কি ব্যপার বলুন তো, আমি
তো কিছুই বুঝতে পারছি না। কিছু একটা গণ্ডগোলের আভাষ পাছি!
ভাশুর- বাবুজি, ম্যায় বাতা রহা হুঁ, পর
ইয়ে একাউন্ট খোলনা বহত জরুরী হ্যায়, আজ হী। অভি হী। হমারা ভাই অভি ভি হোস মে
হ্যায়, উস্কা টিপ্পা তো হম দিলওয়া দেঙ্গে ।আপকে মদত বিনা ইস লড়কী কী জিন্দগি বরবাদ
হো যায়েগা।
অ্যাকাউন্টেট-(স্বগতোক্তি) খটকা
লাগছে। কি এমন জরুরী ব্যপার? মেয়েটির ভবিষ্যতের সঙ্গে কি সম্পর্ক আছে অ্যাকাউন্ট খোলার!(প্রকাশ্যে)
শুনুন, গোটা ব্যপারটা আমি জানতে চাই। চলুন, আমি ওর স্বামী কে দেখতে চাই, কথা বলতে
চাই। আমার সামনে ওকে টিপ দিতে হবে। বুঝতে পারছি, অ্যাকাউন্ট খোলাটা আপনাদের জন্য
জরুরী, কিন্তু সব কিছু আমাকে জানতে হবে, কেন এটা আপনাদের জন্য এত জরুরী।
ভাশুর- হাঁ, হাঁ হম সবকুছ বোলেঙ্গে ন,
আপ্নে সক্ করবেন না - সন্দ করবেন না। চলেন, চোলতে চোলতে আপনাকে সোব বলছি। হমার ভাই
বিল্কুল অনপঢ হ্যায়, কোলিয়ারিমে ছোটা মোটা নোকরি করে। তো বিতা কল ওহ কাম কে লিয়ে খাদ মে উৎরা ঔর অচানক উসকো
গ্যাস লগ গয়া। আপ্নে তো জানেনই, গ্যাস কেমুন খতর্নাক হোয়। অভী তক্ জিন্দা তো হ্যায়
পর হালত বহোত হী খরাব --- লগ্ রহা হ্যায়, জীনা ন-মুম্কিন।
অ্যাকাউন্টেট- আর সেই লোককে নিয়ে
আপনারা ব্যাঙ্ক আকাউন্ট খুলতে--
ভাশুর- না না সাহাব, গলত্ সমঝ্বেন না। যা
কুছু কোরছি, ওই বাচ্চা ম্যেয়েটার জন্য কোরছি। ম্যানেজারবাবু ডেকে পাঠিয়ে গাড়ি
দিলেন, ঔর বোললেন, তুরন্ত ইলাজের জন্য অস্পাতাল নিয়ে যেতে।
অ্যাকাউন্টেট- তা ব্যাঙ্ক-এ এসে
সময় নষ্ট করছেন কেন? আগে ওকে সুস্থ করে তুলুন, তারপর না হয়--
ভাশুর- ম্যনেজারবাবু ঔর ভি বোললেন, অগর্ ইন্দর্ কা দেহান্ত
হো গ্যা, তো কোম্পানী বঢ়িয়া কিমত কা মুয়াব্জা ঔর হর্জানা ভরেগা। পর উসকে লিয়ে
ফুলমতি ঔর ইন্দর্ কে নাম এক জয়েন্ট একাউন্ট হোনা জরুরী হ্যায়; অস্পাতাল কোতো দূর
আছে সো তো আপ্নে জানেন, ইকবার গেলে ইন্দরকে আনবার বহোত মুশকিল হোবে, ফুলমতি ভী কিস
হালত মে রহে--। ইসিলিয়ে যাওয়ার পোথে এই
কামটা সেরে যেতে চাই, ঔর আপ্নের সহারা চাই।
অ্যাকাউন্টেট- গাড়ি কোথায়? ও কথা
বলতে পারবে?
ভাশুর-
নিচে হ্যায় না— চলিয়ে সাহাব, যো পুছনা হ্যায় পুছ
লিজিয়ে ঔর টিপ্পাভি লগা লিজিয়ে।
অ্যাকাউন্টেট- (স্বগতোক্তি)ওরে
বাবারে, কী ভীষণ দৃশ্য! বুকটা যে ভাবে ওঠা নামা করছে, বেঁচে আছে বোঝা যায়, কিন্তু কী
প্রশ্ন করব!(প্রকাশ্যে)তোমার নাম ইন্দর্ দেওয়ান ?... ও তো কথা বলতে পারছে না !
ভাশুর- উয়ো তো ঠিক হ্যায়, পর ঈশারা সে, শির হিলাকে ‘হাঁ’ তো বোলা ন?
অ্যাকাউন্টেট- ফুলমতি তোমার স্ত্রী?
ভাশুর- অভি ভি ‘হাঁ’ হী বোলা ন? পুছ লিজিয়ে, পুছ লিজিয়ে, যো ভি পুছনা হ্যায়, পুছ লিজিয়ে।
অ্যাকাউন্টেট- কি আর জিজ্ঞাসা করব!
ভালো লাগছে না। ফর্ম-এ এই দু-জায়গায় অর টিপসই নিন । ...হয়েছে? এবার
চলুন ওপরে যাই। বাকি কাজ করতে হবে তাড়াতাড়ি। সবাই না এলেও হবে। আপনি আর ফুলমতি
আসুন। ওহ না, আপনার বাবাকেও আসতে হবে — ইন্ট্রোডিউসার
তো উনিই—না কি? ...বসুন; কুসমি একটা স্পেসিমেন সিগ্নেচারের
ফর্ম দাও তো; আর বাদলবাবুকে দেকে দাও।
ভাশুর- আপকো বহুত
পরেশান কর রহা হুঁ, পর ম্যায় তো নাচার হুঁ।
অ্যাকাউন্টেট- ইয়ে বাদলবাবু, এরা একটা অ্যাকাউন্ট খুলছেন, পাশবইটা
একটু তাড়িতাড়ি করে দিলে ভালো হয়। ফুলমতি তুমি ওর সঙ্গে
যাও, যা
করতে বলেন কোরো — কুসমি,
তুমিও ফুলমতির সাথে থাক।
ভাশুর- যা ফুলমতি
সাথ যা, আপকা বহুত বহুত এহসান মানতা হুঁ সাহাব,
মালুম নহী ফুলমতিকে ভবিষ্য মে ক্যা লিখা হ্যায়।
কুসমি- ল্যাও কেনে,
বই-টই গুল্যান বুঝে লাও।
অ্যাকাউন্টেট- এই পাশবই, এই টাকা জমা দেবার ভাউচার। প্রার্থনা করি
ইন্দর্ তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক। কিবা আর করতে পারি, যান
তাড়াতাড়ি
ওকে হাস্পাতালে নিয়ে যান।
ভাশুর- তো হম চলে — আপকা বহুত বহুত সুক্রিয়া সাহাব। নমস্কার! [প্রস্থান]
..........................................................................................
অ্যাকাউন্টেট- এক পর্ব গেল। বাব্বা, মানুষের জীবনে এমন অবস্থাও হয়!
কুসমি, দাও, এবার আমাকে এক কাপ চা দাও।
কুসমি- ল্যানছি,
টুকু দাঁড়াও কেনে।
অ্যাকাউন্টেট- এই শুরু হলো তোর ‘দাঁড়াও কেনে’।
হ্যাঁরে কুসমি, তুই
কতদিন ধরে চাকরি করছিস রে?
কুসমি- হিসাব জানি
নাই। আমি যখন ওই ম্যেয়া’টার মতোন ছিলাম, আমার
মরদ গেইলো — বাবুদের
দয়ায় চাকরি ট প্যেলম। সেই সময় থিক্যে তু’দের
সেবা কর্যে চল্যেছি — তো মা তো হথ্যে পারলামই না, মাসী, পিসি, দিদি
কিছুই হতে লারলাম। বুঢ়ী হইয়্যে গেলম, তো কুসমি তো সে
কুসমি থাইক্যে
গ্যেল।(হাসি) বড় হল্যাম নাই গো, বড় হল্যাম নাই; বল
কেনে!!!
(দু-জনের
উচ্চকিত হাসি)।
(দৃশ্যান্তর)
(২)
অ্যাকাউন্টেট- কুসমি, দে, এক কাপ চা দে। (স্বগতোক্তি) কাল হাট-বার
গেছে, আজ ভিড়-ভাট্টা কম হবে, একটু আরামে দিনটা কাটাব।
কুসমি- ল্যানছি,
টুকু দাঁড়াও কেনে!
অ্যাকাউন্টেট- হ্যাঁ হ্যাঁ টুকু
দাঁড়াচ্ছি, তুই দে।(স্বগতোক্তি)কলকাতায় একটা ফোন করতে হবে - ছেলেটাকেও আজই টাকাটা পাঠিয়ে
দিলে ভালো হয়... এদিকে মাসের বাজারটা...
আগন্তুক-
ক্যা হাল বনাকে রক্খে হ্যায় ব্যাঙ্ক কা—আপ
লোগো কে মনমানে মে কাম চলেগা ক্যা?
অ্যাকাউন্টেট- কে আপনি, কী ব্যপার? বসুন, বসুন, পাশবইটা ছুঁড়ে দিলেন- বুঝলাম আপনার রাগ হয়েছে; কিন্তু কী কারণে, সেটা তো জানা দরকার।
কুসমি- লাও তুমার চা, উয়ার ল্যাইগ্যে?
অ্যাকাউন্টেট- (কুসমিকে) দাঁড়া,
(আগন্তুককে) আপনি... আপ চায় পিয়েঙ্গে?
আগন্তুক- চায় পিনে কে লিয়ে ম্যয় য়হাঁ নহী আয়া, পহলে মেরা খাতা
দেখিয়ে—
অ্যাকাউন্টেট- (কুসমিকে) ঠিক আছে
তুই যা, বলুন কী আপনার প্রবলেম।
আগন্তুক-
বীতে মহিনা মেরে পাসবুক সে পান্সো রূপয়ে নিকালা হুয়া দিখা রহা, পর ম্যয় তো
একও পয়সা নহী উঠায়া! ম্যয় য়হাঁ থা হী নহী। ইয়ে ক্যায়সে হো সকতা হ্যায়?
অ্যাকাউন্টেট- না না এরকম কখনও হয়
না - মনে করে দেখুন, আপনি নিজে না তুললেও, অন্য কারো সাহায্যে টাকা তুলেছেন কিনা!
আগন্তুক- ইয়ে তো আপ জবরদস্তি কর রহে হ্যায়
সাব, ম্যয় কহ রহা হুঁ- ম্যয় প্যায়সা নহী নিকালা, আপ কহতে, অ্যায়সা হো নহী সকতা! আজকাল দাদাগিরি চল রহা
হ্যায় ক্যা, য়া আমজন্তাকে প্যায়সা লুটনে কা কোই সাজিশ!
ম্যানেজার- হ্যালো, হ্যালো, হোয়াট’স রঙ? নো মব অ্যাসেম্বলি প্লিজ। যাইয়ে যাইয়ে সব আপনা
আপনা কাম পর যাইয়ে। (আগন্তুককে) কহিয়ে ক্যা প্রব্লেম হ্যায়?
অ্যাকাউন্টেট- আমি বলছি স্যার। উনি
বলছেন, গতমাসে উনি কোনো টাকা তোলেননি, কিন্তু পাসবুক বলছে - উনি পাঁচশ টাকা
তুলেছেন।
ম্যানেজার- আপ চেক সে প্যায়সা নিকালতে হ্যাঁয়?
আগন্তুক- জী সাহাব।
ম্যানেজার- কুসমি, রেকর্ড থেকে গত মাসের সব চেক ভাউচার নিয়ে
এসো।... হুঁ, এইগুলোই! আপ দেখিয়ে তো, য়হ হস্তাক্সর আপকে হ্যায় য়া নহী?
আগন্তুক- জী, ইয়ে তো মেরা হী হ্যায়।
ম্যানেজার- বাট, অ্যাকাউন্টেট
সাহেব, হ্যান্ডরাইটিং সিমস্ ইয়োরস্। ইজ’ন্ট
ইট?
অ্যাকাউন্টেট- ইয়েস স্যার, হাতের
লেখা আমারই।
ম্যানেজার- বাট দিজ ইজ এইগেনষ্ট
রুল। এটা তো ঠিক নয় — আপনি ব্যাঙ্ক-এর কর্মী হয়ে পার্টির
চেক লিখে দিচ্ছেন – সেটা...
অ্যাকাউন্টেট- স্যার, আমি স্বীকার করছি, ব্যাঙ্কের আইনে আমার কাজটা
হয়তো বে-আইনি; কিন্তু আপনি তো মানবেন স্যার, এখানে শতকরা
নব্বই
ভাগ লোক অশিক্ষিত। দু-চার জন সই করতে পারে কোনো মতে,
কিন্তু
লিখতে পড়তে পারে না। এখানে স্যার, আমাদের, ব্যাঙ্কের
লোকেদের এ কাজ
হামেশাই করতে হয়। এতগুলো লোক দাঁড়িয়ে আছে, আপনি জিজ্ঞাসা
করে
দেখতে পারেন।
ম্যানেজার- নোন্ নো, দিজ ইজ অ’ফুলি আন-ডিজায়ার্ড। আই অ্যাম নট
স্যাটিস্ফায়েড। আমি খুশী হলাম না। আপ বাংলা সমঝ্তে হ্যায়?
আগন্তুক- জী, সমঝ্
লেতা হুঁ, পর বোল নহী পাতা।
ম্যানেজার- অ্যাকাউন্টেট সাহাব মান লিয়ে কি কাম তো গৈরকানুনী হ্যায়।
আপ উঙ্কে খিলাফ শিকায়ত করনা চাহেঙ্গে?
আগন্তুক– জী জরুর; পর ম্যায় তো অনপঢ় হুঁ, - কোই মদত ন করে তো
ম্যায় কুছ ভি নহী কর পাউঙ্গা।
ম্যানেজার- আপ মে কোই ভি ইনকা মদত করনা চাহেঙ্গে? ...নো বডি,
ও.কে.। ম্যায় আপকো মদত করুঙ্গা, আপ আইয়ে। (দু’জনে চেম্বারে যায়)।
অ্যাকাউন্টেট- জানি না, ম্যানেজার সাহেবের আমার উপর এত রাগ কেন!
কি আমার অপরাধ! বাঙ্গালী বলে? কলকাতায় কি আমার দেশের
মানুষেরা
ইনি অ-বাঙ্গালী হওয়ায় কোনো রকম অসৌজন্য প্রকাশ করেছে!
এনি হাউ,
‘তোমার কর্ম তুমি কর’। (দীর্ঘশ্বাস) অপেক্ষা করি ভাগ্য-দেবীর পরীক্ষার
জন্য।
ম্যানেজার- (চেম্বার থেকে বেরিয়ে এসে)আপ মে সে কোই এক দো ইসমে
হস্তাক্ষর করেঁ। --সাবুতকে লিয়ে —আপ আইয়ে —ঔর আপ -- ...ঠিক
হ্যায় -- বাকি মেরা কাম। ও.কে. ,থ্যাঙ্ক ইউ। (চলে যায়
চেম্বারে, সামান্য
পরে আগন্তুক বেরিয়ে আসে।)
অ্যাকাউন্টেট- হ্যালো, ম্যায় আপসে এক মিনিট বাত কর সকতা হুঁ?
আগন্তুক– কহিয়ে--
অ্যাকাউন্টেট- আমি বাংলাতেই বলি, আপনি তো বাংলা বোঝেন বললেন।
শুনুন, চেকটা আমার লেখা, তাই আইনের চোখে আমি সকলের সামনে
অপরাধী হলাম। কিন্তু আগেও আমি আপনাকে অনেক চেক লিখে
দিয়েছি, তাই
না? আমি জানি, শাস্তি তো আমার হবেই, হয়তো চাকরীটাও যাবে — টাকাটা
আমি ফেরত দিতে বাধ্য — আপনিও তা ফেরত পেয়ে যাবেন — কিন্তু বলুন
তো, আমি কি চুপ করে বসে থাকবো? আমার কি পরিবার নেই? ছেলেমেয়ে
নেই? (উত্তেজিত হয়ে) আমি কেস করবো — চেকে আপনার সই, টাকা
নিয়ে চেকের পিছনেও আপনি সই করেছেন — তবু আপনি বলছেন, গত মাসে
আপনি কোনো টাকা তোলেননি? আমি সবাইকে বলব, ম্যানেজার আর
আপনি
মিলে সাট করে আমার চাকরী খাওয়ার জন্য... আপনি... আপনি
মিথ্যে কথা
বলেছেন।
আগন্তুক– আরে রুকো রুকো। শাঁস তো লো -- দম টুট যায়গা। হুঁম্... মুঝে
ভী থোড়া সোচনে দিজিয়ে -- হাঁ বাবু, ইতনা তো ম্যায় সোচা
হী নহী...
পিছলে মহিনা... পিছলে মহিনা... হাঁ, আরে হাঁআআআআআ, ...ইয়াদ
আয়া... ম্যায় তো থা হী নহী, পর জরুরত সে পৈসা নিকালনেকে
লিয়ে দোনো
জগহ হস্তাক্ষর করকে ছগন কো দিয়া থা -- ঔর কহে থে আপসে মিলনে...
গলতি তো মেরা হী হ্যায়... ম্যায় শর্মিন্দা হুঁ সাহাব,
মুঝে মাফ কর দিয়া
যায় -- হে ভগবান, অব ম্যায় ক্যা করুঁ, ওহ শিকায়ত কা ক্যা
করুঁ...!
অ্যাকাউন্টেট- যদি অনুমতি করেন তো বলি... ম্যানেজার বাবুর কাছ থেকে
ওই কমপ্লেইনটা ফেরত নিয়ে আসুন — এখনও তো কিছুই হয়নি...। আমার
শাস্তি হলে এত আনপঢ় লোককে এই ব্যাঙ্কের কেউ আর কোনোদিন
সাহায্য
করবে না।
আগন্তুক– সহি বাত। ম্যায় অভি আয়া। (চেম্বারে যায় — কাগজ নিয়ে ফিরে
আসে)।
আগন্তুক– লিজিয়ে...
অ্যাকাউন্টেট- আরে ব্বাস, নিয়ে চলে এলেন? বিজয়ীর ভঙ্গীতে বেরিয়ে তো
এলেন... তা, উনি কি বললেন?
আগন্তুক– কুছ নহী, ম্যায় সির্ফ বোলা কি ওহ কাগজ মুঝে ওয়াপস
চাহিয়ে,
মুঝে কোই শিকায়ত নহী করনা হ্যায়... থোড়াদের দেখে মুঝে,
ফির দে হি
দিয়ে। লিজিয়ে...
অ্যাকাউন্টেট- ম্যানেজার কাঁচের দরজা দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন... এ
আমি ছিঁড়ে ফেলে দেব...( ছিঁড়ে ফেলে দেয়)
আগন্তুক– আরে আরে আরে...
আপ তো গুসসে মে হ্যায়। মামলা তো
খতম। আপ বুরা ন মানিয়ে... ম্যায় তো মান লিয়া ন ....গলতি
তো মেরা
হী হ্যায়... আপ শান্ত হোইয়ে... ম্যায় আপকা এহসান মানতা
হুঁ। আব ম্যায়
যা সকতা হুঁ ন? নমস্কার। (চলে যায়)।
কুসমি- কি হোলো
বোবার পারা বস্যে রইলি? রাগিস নাই, রাগিস নাই...
রাইগ্লে লিজেরই লুক্সান — মন টো কে সান্ত রাখ। সুখ আছে, দুখ আছে,
কিন্তুক মনকে অসান্ত করিস নাই।... লাও কেনে, এক কাপ চা খাও। মন
টো সান্ত হবেক। (সামান্য নীরবতা) (স্বগতোক্তি) আমার কথা
ভাব কেনে!
ঠোকর খাঁয়ে খাঁয়ে শরিল সামল্যাব, না মন সামল্যাব, না কাম
সামল্যাব?...
কিন্তুক মনকে কখনও অসান্ত করি নাই... বুঝলি! কি দিন গেইল্ছে।
অ্যাকাউন্টেট- হ্যারে কুসমি, আমি খুব রেগে গিয়েছিলাম, নারে! ভেরী
ব্যাড।
কুসমি- নিজে বুঝিস
নাই?
অ্যাকাউন্টেট- ঠিক আছে, ঠিক আছে, তোর চা খেয়ে মন আমার শান্ত হয়ে
গেছে, তোকে আর শাসন করতে হবে না। তুই যা।(স্বগতোক্তি)
কুসমি ঠিকই
বলছে, মনটা বড় অশান্ত হয়ে গেছে। কাগজটা দু টুকরো করে
ছিঁড়েই
ফেললাম! ম্যানেজারবাবু মানুষ হিসাবে আমার গুণগ্রাহী না হলেও,
তিনি
কর্মদক্ষ, এ ব্যপারে তো কোনো সন্দেহ নেই। তার প্রতি
বিরূপ হওয়াটা আমার
ঠিক হচ্ছে না। না, আমি ম্যানেজার বাবুর কাছে গিয়ে বলি-
ম্যানেজার- কমপ্লেইনটা আপনি ছিঁড়ে ফেলে দিলেন?
অ্যাকাউন্টেট- হ্যাঁ স্যার, উত্তেজনার মাথায় আমি দু টুকরো করে ফেলেছি।
কাজটা ভালো হয়নি — এই
নিন স্যার সেই টুকরো দুটো। আই অ্যাম সরি।
ম্যানেজার- দ্যাটস ও.কে.। তা এটা আমাকে দিছেন কেন? হোয়াট আই
অ্যাম টু ডু উইথ দিস?
অ্যাকাউন্টেট- এটা আপনার নিজের হাতে লেখা। লোকটির এখন মনে পড়েছে
টাকাটা সে তুলেছিল। তাই এটার আর প্রয়োজন নেই। ও বলল ফাড়
দিজিয়ে,
আমিও ছিঁড়ে ফেল্লাম। অবশ্য আপনার নিজের হাতেই এটার নিষ্পত্তি
হওয়া
উচিৎ ছিল।
ম্যানেজার- কেন?
অ্যাকাউন্টেট- চিঠিটার কি হলো, না জানলে আপনার মন অশান্ত থাকবে,
তাই না? আর একটা কথা স্যার - এই কোলিয়ারী বেল্টে শতকরা নব্বই
ভাগ লোক অশিক্ষিত, নেশাখোর ও গোঁয়ার। ওরা মনে করে ওদের
টাকা ওরা
যখনি চাইবে, তক্ষুনি দিতে হবে, লিখে দিতে বললে লিখে দিতে
হবে।
আড়াইটায় ওয়ার্কিং আউয়ার শেষ, বোঝে না। তাই আমাদের
ব্যাঙ্কের সব
স্টাফই ওদের গুড হিইমারে রাখে - যাতে সহজ ভাবে মেলামেশা
করা যায়,
চলাফেরা করা যায়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। কোনো ফ্রড করার
চিন্তা
আমার মাথায় আসেনি স্যার। আপনি অভিজ্ঞ লোক, আপনার
সহযোগিতা পেলে
আমরা উপকৃত হই। আমাদের শত্রুপক্ষ ভাববেন না স্যার।
ম্যানেজার- (সামান্য নীরবতা) আমার কলকাতার অভিজ্ঞতা ভালো না।
আমি অ-বাঙ্গালী, বাংলা বলতে শিখলাম, কিন্তু কলকাতার
মানুষের মন পেলাম
না, কাজ করে আনন্দ পেলাম না, কলকাতা ছাড়লাম, কিন্তু এটা
আমার কাছে
পানিশমেন্ট পোষ্টিং লাগে। আপনাদের বন্ধু ভাবে পেলে আমার
ভালোই লাগবে।
কিন্তু আমার আগের অভিজ্ঞতায় আমি সহজ হতে পারছিলাম না, ও
কে...
লেট আস ফরগিভ অ্যান্ড ফরগেট।
অ্যাকাউন্টেট- আমি তাহলে আসি স্যার?
ম্যানেজার- বসুন, লেটস্ হ্যাভ এ
কাপ অফ টি। কাইন্ডলি একটু কুসুমিকে বলবেন?
অ্যাকাউন্টেট- কুস্...শী ইজ রেডি
উইথ টি স্যার।
কুসমি- ল্যাও কেনে, চা খাও। মন হাল্কা
হবেক।
অ্যাকাউন্টেট- আই ফিল লাইট স্যার,
আমার মনের বোঝা একদম হাল্কা হয়ে গেল- থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। আসি স্যার।
..........................................................................................
ভাশুর- আইয়ে সাহাব, ম্যয় আপহি কা
ইন্তজার মে হুঁ। নমস্কার।
অ্যাকাউন্টেট-(স্বগতোক্তি)দুটো বাজে,
ভেবেছিলাম আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি যাব, তা আর হবে না।(প্রকাশ্যে)আরে! আপনি! বলুন কি করতে
পারি! আপনার ভাই... কি যেন নামটা... কেমন আছে?
ভাশুর- সাহাব, যো হোনে কা থা, ওহি হুয়া।
হম সব কোলিয়ারী সে আ রহে সাব, ফুলমতি ভী সাথ মে হ্যায়।
অ্যাকাউন্টেট-(স্বগতোক্তি)ওই বাইরে
দাঁড়িয়ে — ও ফুলমতি! কোথায় সেই ফুল ফুল শাড়ি,
কোথায় সেই গা ভরতি গয়না - সিঁথিতে সেই চওড়া
করে বিছান সেই মেটে সিন্দুর-অন্তবিহীন পথ।(প্রকাশ্যে)বলুন, আমি কি করতে পারি!
ভাশুর- কোলিয়ারী তো পুরা মুয়াব্জা ভর
দিয়া হ্যায়, তাকি ফুলমতি কো কোই তকলিফ উঠানা ন পড়ে। চেক নহি, ড্রাফট মে দিয়ে — কহে হ্যায় কি সিধা হী ক্যাশ রুপয়ে মিল যায়েগা। টাইম তো
খত্ম হোনেওয়ালা হ্যায় - উসি লিয়ে আপকে পাস আয়ে মদত কে লিয়ে -- লিজিয়ে সাব ।
অ্যাকাউন্টেট- উরে বাবা, এত অনেক
টাকার ব্যপার — পাঁচ লক্ষ সাতাশ হাজার। সঙ্গের এই
কাগজটা কি? ও, টাকাটার হিসাব।(স্বগতোক্তি)ব্যাপারটা খুব স্বাভাবিক লাগছে না, এখানকার
অ্যাকাউন্ট হোল্ডার হোয়েও টাকাটা ক্যাশে নিতে চাইছে কেন? (প্রকাশ্যে) দেখুন,
টাকাটা একটু বেশি, আমাদের ছোট ব্রাঞ্চ,
এখনি দেবার মত এত টাকা ক্যাশে নেই। সচরাচর আমরা বলি, অন্তত একদিন আগে আমাদের নোটিশ
দিতে। ম্যানেজার সাহেবের সঙ্গে কথা বলে দেখছি — তবে আমার
জানার ইচ্ছা, এটা অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে দু দিন পরে ক্যাশ করতে পারেন কিনা।
ভাশুর- ইয়ে তো
অসম্ভব, ফুলমতি কো বার বার লানা কোই মামুলী বাত
নহী—
অ্যাকাউন্টেট- ঠিক আছে, ঠিক আছে, দেখছি -- কুসমি, ড্রাফ্ট ক্যাশ
করার ফর্ম আন। নিন, এখানে ফুলমতিকে সই করতে বলুন, আর
আপনি
এখানে সই করুন। কুসমি এই কাগজগুলো ম্যানেজার সাহেবের ঘরে
দিয়ে এস।
অনেক টাকার ব্যপার তো, আছে কিনা তাও জানি না, তাই,
ম্যানেজার
সাহেবের অর্ডারের জন্য পাঠালাম। দেখা যাক।
কুসমি- ম্যানেজার
সাহেব ফুলমতিকে ডাইকছে। আস কেনে।
ভাশুর- যা ফুলমতি, দেখ
ক্যা গড়বড়ি কিয়া হস্তাক্ষর মে।
কুসমি- আপনাকেও যাতে
বলল, যাও কেনে।
অ্যাকাউন্টেট- তুইও আয়। একলা মেয়ে থাকবে কেন, আপনারা বসুন-
ইয়েস স্যার।
ম্যানেজার- আপনার নোট পেলাম। কিন্তু আমার একটু ডিটেইলস এ জানা
দরকার। টক উইথ দিস গার্ল।
অ্যাকাউন্টেট- ফুলমতি, তুমহে ম্যায় আপনা শোক প্রকট করতা হুঁ।–
ফুলমতি- আপনি বাংলায়
বলুন। আমি বাংলা জানি। আমার অনেক বাঙ্গালী
বন্ধু ছিল আমার দেশে।
অ্যাকাউন্টেট- ভালোই হলো, ফুলমতি, তোমাকে সমবেদনা জানানোর ভাষা
আমার জানা নেই। এমন কি তোমার ওই কৃশ পান্ডুর মুখের দিকে
তাকাতেও
আমার কষ্ট হছে। তোমাকে মনে হচ্ছে এক পাথর প্রতিমা।
ম্যানেজার- হোহাই শী ওয়ান্টস সো মাচ মানি ইন ক্যাশ?
অ্যাকাউন্টেট-ফুলমতি, এত টাকা তুমি ক্যাশে চাইছ কেন ?
ফুলমতি- আমি চাইছি না
স্যার, আমার ভাশুর চাইছেন। টাকাটা ওরা পেয়ে
গেলে, আজই আমি আমার বাবার সঙ্গে বাবার ঘর চলে যাব-জনম
ভরের
জন্য।
অ্যাকাউন্টেট- বাইরে একটু দূরে রোগা মতো যে ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে ছিলেন-
তিনি তোমার বাবা?
ফুলমতি- হ্যাঁ, আমাকে
নিতে এসেছেন। আমি জানি না আমার জীবন এবার
কোথায়, কেমন করে কাটবে।
অ্যাকাউন্টেট- আছা ফুলমতি, টাকাটা তোমার, টাকাটা ওরা নিয়ে নেবে
কেন? তুমি ওদের দিতে চাও?
ফুলমতি-(কাঁদতে
কাঁদতে)না দিলে ওরা ছিনিয়ে নেবে। বাবা দুবলা পাতলা
গরীব লোক, ওদের সঙ্গে তো লড়তে পারবে না।
অ্যাকাউন্টেট- কেঁদো না ফুলমতি, আচ্ছা ফুলমতি, টাকাটা যদি আমরা তোমাকে দিই, তুমি খুশী
হবে?
ফুলমতি- (কাঁদতে
কাঁদতে) তা হলে আমি আমার জিন্দগী আমার মতো করে
তৈরি করে নিতে পারব। আমাদের দেশে মেহনতি মানুষেরা থাকে,
নোকরানির
কামও মিলবে না। (কুসমি’র দিকে দেখিয়ে) আমি ওর মতো স্বাধীন জিন্দগি
বিতাতে চাই।
অ্যাকাউন্টেট- ফুলমতি তোমার বাপের বাড়ি কোথায়?
ফুলমতি- আরা জিলায়। শহর
থেকে বিশ কিলোমিটার দূর হবে।
অ্যাকাউন্টেট- সেখানে যদি তুমি টাকাটা পাও?
ফুলমতি- সেখানে তো
ব্যাঙ্ক নেই স্যার, ব্যাঙ্ক আছে সেই আরা’য়।
অ্যাকাউন্টেট- স্যার, ক্যান উই ফরোয়ার্ড দি মানি টু আউয়ার আরা ব্রাঞ্চ?
ম্যানেজার- ইট উইল বি রিস্কি ফর ইউ- মিঃ...
অ্যাকাউন্টেট- লেট মি টেক আ রিস্ক স্যার,--ইট উইল বি আ ফেয়ার
ডীল--। ফুলমতি, আজ তো আমাদের ব্যাঙ্কে এত টাকা নেই। আরায়
টাকা
পেলে তুমি ভাঙাতে পারবে?
ফুলমতি- আরা’য় আমার অনেক জান-পহচান মানুষ আছে, কোনো অসুবিধা
হবে না।
অ্যাকাউন্টেট- আই আম প্রসেসিং স্যার — কুসমি, তুই
আমাকে একটু হেল্প
কর। ফুলমতি, তুমি এখানেই অপেক্ষা কর।
.......................................................................................
কুসমি- ল্যাও কেনে,
ইখান কে সাহিন কর, ই কাগজটাতেও। ল্যাও
কেনে,
ইটা তুমি রাখ, ইটা আকাউন্টেট বাবুকে দাও। (স্বগতোক্তি)গুন্ডা
গুলান
লুট্যেপুট্যে খাওয়ার তাল কইরছে।
অ্যাকাউন্টেট- দাও। আরে থাক থাক, আর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে
হবে না। এ কাগজটা সামলে সুমলে রাখ। অবশ্য এটার ডুপ্লিকেট
পরেও পাওয়া
যাবে; আমরা অ্যাডভান্স ইনফরমেশন পাঠিয়ে দিচ্ছি। চল, বাইরে
যাই।
ভাশুর- রূপৈয়া ক্যা
ভইল রে ফুলমতি?
ফুলমতি- ম্যানেজার সাব
কহলে কি আজ কে দিন ব্যাঙ্ক মা ইত্তা রূপৈয়া ন
হোই - খবর ভেজবা দিয়ে - ঔর কহলে কি আরা ব্যাঙ্ক সে
রুপৈয়া মিলবৈ।
হমে যানে কহলে — হম
ঔর বাপু যায়ে ক্যা?
ভাশুর- অ্যাকাউন্টেট
সাহাব, ই কা লটর-পটর কর দিয়ে?
কুসমি- (ফুলমতিকে)
তোকর কহ দিয়ে ন যানে কে লিয়ে - যা ন তোহর
বাপু কে সাথ।
ভাশুর- বাত তো বিগড়
কে রহ গয়া অ্যাকাউন্টেট সাহাব, হিসাব তো
আপহি কো মিটানে পড়েগা। ছুট্টি কে বাদ বাহার নিক্লিয়ে তো
ভেট হোগা। হম
সব বাহর ইন্তজার করেঙ্গে। অব চলেঁ।
..........................................................................................
অ্যাকাউন্টেট- শুনলি তো কুসমি, তুই সব শুনলি তো, আমাকে শাসিয়ে
গেল; লোকগুলো গুন্ডা প্রকৃতির, জানি না অদৃষ্টে কি আছে।
কুসমি- হঁ, লোক
গুলান ভালো লয় — তবে তু ডরাস নাই — আমি
থাইকব্যো তুর সঙ্গে—
অ্যাকাউন্টেট-(ভয়ের হাসি সহ)তোর থাকা আর না থাকা আমার কাছে
দুইই সমান। ওই বাঁশী ছেড়ে বন্দুকধারী গিরিধারীলাল সঙ্গে
থাকলেও বা কথা
ছিল--
কুসমি- আরে হঁ,...
টুকুন দ্যাঁড়া কেনে — তু ডরাস নাই — আমি দেখছি
— ল্যাও কেনে — চা খা — মোন চাঙ্গা হবেক। আমি এইখনি আসছি—
অ্যাকাউন্টেট- দে... তোর পাথরের প্রাণ, তাপ-উত্তাপ নেই -- তা চললি
কোথায়?
কুসমি- এইক্ষণি
আইসব্যো — হঁ ম্যানেজারবাবু তুকে ডাইক্ছে --
..........................................................................................।
অ্যাকাউন্টেট- আপনি আমায় ডেকেছেন স্যার।?
ম্যানেজার- আমি সব শুনলাম। ডোন্ট উওরি। আমরা সবাই আপনার সঙ্গে
থাকবো — একসঙ্গেই
বেরোব — বলেন তো কোলিয়ারি ম্যানেজারকে খবর
দিয়ে রাখি—
অ্যাকাউন্টেট- তাদের তো কোনো দায় নেই স্যার, তারা তো টাকা দিয়ে
খালাস--
.....................................................................................
রাজাবাবু- নমস্কার,
নমস্কার। সবাইকে আমার নমস্কার।
অ্যাকাউন্টেট- আরে রাজাবাবু! আপনি আপনি!
রাজাবাবু- হাঁ,আমিই। আমাকে
আমনে সামনে তো সবাই রাজাবাবু বলে –
কিন্তু আমার পিঠ-পিছে কি বলে সেটা তো আপনাদের জানা আছে -
তাই
না? হিরো, গুন্ডা, ডাকু। হা হা হা হা(উচ্চ হাসি)। পর আজ
তো
অ্যাকাউন্টেট সাহেব, আপনি আমার থিকেও হিরো হয়ে গেলেন।
অ্যাকাউন্টেট- কি যে বলেন রাজাবাবু!
রাজাবাবু- আমি সারা খবর
নিয়ে এসেছি — পুরা ব্যাঙ্ক আপনার সাথে আছে
— পাবলিক ভী আপনার সাথে আছে — বাপ্ রে বাপ্।
অ্যাকাউন্টেট- কিন্তু রাজাবাবু, আজ আপনি... এখন এখানে...!
রাজাবাবু- যার এত
পাবলিক ডিমান্ড আছে - এত ফ্যান আছে - আমিও
তার ফ্যান হয়ে গেলাম। হা হা হা হা (উচ্চ হাসি)। শুনেন
সাহেব, কুনো ডর
নাই। কারো কুনো জরুরত নাই। সব অপনা অপনা কাম করিয়ে, ঔর চ্ছুট্টি
করিয়ে--
কুসমি– কুছ ভি কহো, হম তো রহবো সাথ মে।
রাজাবাবু- তোকর হম ক্যা কহল রে? শোনেন
অ্যাকাউন্টেট সাহাব —আপনার কুনো ডর নাই। আমার সাথে দশ কদম একসাথ
চলেন তো কোই আপনাকে ছুঁবে না। আপনি বেফিকির থাকুন। সবাই যাকে ভালা-আদমি জানে, উকে সবাই
ভালোও বাসে।(জোরে) এ ভারতোওয়া, (আস্তে)সাহাব কো আপনা ঘর ছোড়ো, ঔর খয়াল ভী রখহ। ফির তু ঠিকানা পর আ
যাও।
অ্যাকাউন্টেট- রাজাবাবু, আপনাকে আমি
যে কি বলবো—
রাজাবাবু- কুছ বোলতে হবে না, আপনি আরাম সে
ইয়হী জগহ নোকরি কোরেন। আমি চলি — কুসমি আছে
আপনার সাথে - ওতো ডাকু’র মা আছে-- হা হা হা হা (উচ্চ হাসি)...।
অ্যাকাউন্টেট- হা হা হা হা (উচ্চ হাসি)...কুসমি রে, সুতপুত্র কর্ণ আজ
দুর্যোধনের দানে ক্ষত্রিয় হল রে! হা হা হা হা (উচ্চ
হাসি)...
কুসমি- তুই
পাআআআআআগল বটে!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন