অপারস্তুতি
সাঁঝবাতি
(১)
আমরা দুজনে ক্লান্ত হয়ে পার্ক স্ট্রীটের ব্রীজের নিচে বসলাম। আমরা দুজন সাদা আর কালো। সাদা, বেশ অস্বচ্ছ, ফিল্ম গ্রেনের মতো ছিটছিটে অভিজ্ঞতায় তার মুখ ছোপানো। কালো, এপার ওপার ট্রান্সপারেন্ট। সামনে দিয়ে গাড়ি চলে যাচ্ছে। ফেলে যাচ্ছে ছায়ার মতো গতি। সময়। একটা থার্ড আই ফটোগ্রাফির মতো। এখানে সমস্ত কিছু চলছে, দ্রুত, চলন্ত। শুধু একধারে একটা লোক মাতাল হয়ে পড়ে আছে। ওর ঘড়ির কাঁটা বারোটা বেজে থেমে গিয়েছে। কালো বললো -- এসব দিয়েই তো ছবি আঁকা যায়, গল্প লেখা যায়...! আমি বললাম -- তার জন্যে তো রঙ দরকার। হঠাৎ একটা লিপস্টিক রঙের বাইক এসে থমকে দাঁড়িয়ে গেল আমাদের কথার মাঝখানে ।
- ওই পার্কিস্টীট পার্কিস্টীট...
- .................................
- চল, যাবি আমাদের সাথে?
- ..................................
- কী মাল রে শালা! কত নিবি?
- ..................................
- কত সাইজ, হুঁ?
- ...................................
ধূসর রঙ ঝরছিল ওদের হাসি থেকে। আমরা চোখ ঘুরিয়ে নিচ্ছিলাম। আমাদের কি হূকারদের মতো দেখতে লাগছে?! লোকদুটো বাইক থেকে নেমে এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে। আমরা মাথা নিচু করে বসে আছি। শরৎকাল ভাবছি। কাশফুল ভাবছি। সাদা ভাবছি। ওরা এসে ধাক্কা দিলো আমাদের। তারপর...
তারপর পালাচ্ছে, উল্টো দিকে না তাকিয়ে পালাচ্ছে। বাইকের ওপর উঠে পালাচ্ছে। এরাও দ্রুতগতির ছায়া ফেলে শব্দে মিশে গেল।
জেব্রাক্রসিং-এর সাদাকালো উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে এগোচ্ছে আমাদের দিকে। আর্টকলেজ থেকে রঙ তুলি উড়ে উড়ে বেরিয়ে আসছে আমাদের দিকেই। ওরা দেখতে পাচ্ছে, দুটো মেয়ে রঙের জন্যে অপেক্ষা করছে। খড়ের তৈরি কাঠামো, মাটি লেপা শরীর খসে খসে পড়ছে, জড়ি বসানো শাড়ি লুটোচ্ছে, খোঁপা ভেঙে নামছে মাটির দিকে, চোখ ফুলে আছে ঘেঁটে যাওয়া কাজলে, লিপস্টিকের বদলে ঠোঁটের কষ থেকে গড়িয়ে আসছে রক্ত। সাদা মেয়েটা বীণা বাজানোর চেষ্টা করতে করতে ছিঁড়ে ফেললো তার, আর কালো মেয়েটার পায়ের তলায় গড়াগড়ি খাচ্ছে একটা লাল মঙ্গলঘট। এবার একটা গল্প তৈরি হবে...
(২)
রামচরণ দিন্দা সারা স্টুডিওময় ছুটে বেড়াচ্ছেন। কে যেন তাঁর রংগুলোকে ঘরময় ছড়িয়ে নষ্ট করেছে! আর নষ্ট রংগুলোর ওপর ভেঙে, দুমড়ে ছড়িয়ে আছে তাঁর হাইবাজেটের পুজোর জন্যে বানানো আর্টের সরস্বতী ও লক্ষ্মী...
সাদা আর কালো...
সাঁঝবাতি
(১)
আমরা দুজনে ক্লান্ত হয়ে পার্ক স্ট্রীটের ব্রীজের নিচে বসলাম। আমরা দুজন সাদা আর কালো। সাদা, বেশ অস্বচ্ছ, ফিল্ম গ্রেনের মতো ছিটছিটে অভিজ্ঞতায় তার মুখ ছোপানো। কালো, এপার ওপার ট্রান্সপারেন্ট। সামনে দিয়ে গাড়ি চলে যাচ্ছে। ফেলে যাচ্ছে ছায়ার মতো গতি। সময়। একটা থার্ড আই ফটোগ্রাফির মতো। এখানে সমস্ত কিছু চলছে, দ্রুত, চলন্ত। শুধু একধারে একটা লোক মাতাল হয়ে পড়ে আছে। ওর ঘড়ির কাঁটা বারোটা বেজে থেমে গিয়েছে। কালো বললো -- এসব দিয়েই তো ছবি আঁকা যায়, গল্প লেখা যায়...! আমি বললাম -- তার জন্যে তো রঙ দরকার। হঠাৎ একটা লিপস্টিক রঙের বাইক এসে থমকে দাঁড়িয়ে গেল আমাদের কথার মাঝখানে ।
- ওই পার্কিস্টীট পার্কিস্টীট...
- .................................
- চল, যাবি আমাদের সাথে?
- ..................................
- কী মাল রে শালা! কত নিবি?
- ..................................
- কত সাইজ, হুঁ?
- ...................................
ধূসর রঙ ঝরছিল ওদের হাসি থেকে। আমরা চোখ ঘুরিয়ে নিচ্ছিলাম। আমাদের কি হূকারদের মতো দেখতে লাগছে?! লোকদুটো বাইক থেকে নেমে এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে। আমরা মাথা নিচু করে বসে আছি। শরৎকাল ভাবছি। কাশফুল ভাবছি। সাদা ভাবছি। ওরা এসে ধাক্কা দিলো আমাদের। তারপর...
তারপর পালাচ্ছে, উল্টো দিকে না তাকিয়ে পালাচ্ছে। বাইকের ওপর উঠে পালাচ্ছে। এরাও দ্রুতগতির ছায়া ফেলে শব্দে মিশে গেল।
জেব্রাক্রসিং-এর সাদাকালো উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে এগোচ্ছে আমাদের দিকে। আর্টকলেজ থেকে রঙ তুলি উড়ে উড়ে বেরিয়ে আসছে আমাদের দিকেই। ওরা দেখতে পাচ্ছে, দুটো মেয়ে রঙের জন্যে অপেক্ষা করছে। খড়ের তৈরি কাঠামো, মাটি লেপা শরীর খসে খসে পড়ছে, জড়ি বসানো শাড়ি লুটোচ্ছে, খোঁপা ভেঙে নামছে মাটির দিকে, চোখ ফুলে আছে ঘেঁটে যাওয়া কাজলে, লিপস্টিকের বদলে ঠোঁটের কষ থেকে গড়িয়ে আসছে রক্ত। সাদা মেয়েটা বীণা বাজানোর চেষ্টা করতে করতে ছিঁড়ে ফেললো তার, আর কালো মেয়েটার পায়ের তলায় গড়াগড়ি খাচ্ছে একটা লাল মঙ্গলঘট। এবার একটা গল্প তৈরি হবে...
(২)
রামচরণ দিন্দা সারা স্টুডিওময় ছুটে বেড়াচ্ছেন। কে যেন তাঁর রংগুলোকে ঘরময় ছড়িয়ে নষ্ট করেছে! আর নষ্ট রংগুলোর ওপর ভেঙে, দুমড়ে ছড়িয়ে আছে তাঁর হাইবাজেটের পুজোর জন্যে বানানো আর্টের সরস্বতী ও লক্ষ্মী...
সাদা আর কালো...
আমি লেখাটির ভক্ত হয়ে উঠলাম । গল্পগুন কে ছাপিয়ে উঠেছে চিত্রগুন । সাদা কালো মিশিয়ে ধূসর ফুটে উঠছে । এই লেখাকে গল্প হিসেবে পড়া মুস্কিল । একটা থিম । কিন্তু পাঠকের প্রতিক্রিয়া অনেকটা চিত্ররূপের মুখোমুখি দর্শকের । আবারও বললাম ,খুব ভালো লেখাটি ।
উত্তরমুছুনBesh !
উত্তরমুছুনআমি শুভ্রনীল সাগরের সাথে সম্পুর্ণ একমত। সাঁঝবাতি।
উত্তরমুছুননীতা বিশ্বাস।
ভালো লাগল!
উত্তরমুছুন